সম্পাদকীয়

0

আল্লাহর প্রিয় নবী সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অক্লান্ত ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর হায়াতে জিন্দেগীর পর তাঁর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত আহলে বায়ত ও সাহাবায়ে কেরামের অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে আজো ইসলাম সমোন্নত। পরবর্তীতে তাবেঈন, তবে-তাবেঈন মুজতাহিদ ইমামগণ শতাব্দীর মুজাদ্দিদগণের বহুমুখী সাধনা ও ত্যাগের বিনিময়ে ইসলাম আজো স্বমহিমায় সমোজ্জ্বল রয়েছে। ইসলামের প্রারম্ভ থেকে আজ অবধি ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলে আসছে। পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামকে নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দল-উপদল সক্রিয় রয়েছে। এসব বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট দল উপদলের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যভাবে ইসলামের চরম ক্ষতি সাধন করেছে খারেজী ও শিয়া মতবাদ। এসব দলের শাখা-প্রশাখা হয়ে মুসলমানদের ছদ্মাবরণে বর্তমান লা-মাযহাবী, আহলে ক্বোরআন, আহলে হাদীস নামে নিত্য নতুন বাতিল ফির্কার উদ্ভব হচ্ছে। তারা একটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলো মুসলামনদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যে ফাটল ধরানো। বর্তমানে আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে কতিপয় মুসলমান নামধারী লোক প্রিয়নবীর আহলে বায়ত,সাহাবায়ে কেরাম বিশেষত হযরত আমির মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র শানে জঘন্য কটূক্তি, গালি-গালাজ করছে। সাহাবা-ই কেরাম সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বিদা হলো- সাহাবা-ই কেরাম হলেন সত্যের মাপকাঠি। এবং তাঁদের কারো শানে কোন প্রকারের কটূক্তি, গালমন্দ, সমালোচনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পবিত্র হাদীসে রাসূল পাকের সুস্পষ্ট ঘোষণানুযায়ী হযরত আমির মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সাহাবীদের মধ্যে একজন সম্মানিত মুজতাহিদ সাহাবী ছিলেন। এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে দো‘আ করেছেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তুমি তাকে (হযরত আমির মুআবিয়া রাদ্বি.) হেদায়তকারী ও হেদায়তের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ।’’ [তিরমীজি শরীফ] বর্তমানে যারা প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আমির মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর শানে গোস্তাখী করে, সমালোচনা করে, বেয়াদবী করে তারা সম্পূর্ণ গোমরাহ, পথভ্রষ্ট। চলতি সংখ্যায় এ বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। ক্বোরআন-হাদীস ও পূর্ববর্তী বরণ্যে ইমাম ও মাশায়েখের উদ্ধৃতি সহ প্রকাশিত এ নিবন্ধ পাঠের মাধ্যমে ভ্রান্ত শিয়া মতবাদের বিভ্রান্তি হতে মুসলিম সমাজ সচেতন ও পরিশুদ্ধ আক্বিদা-বিশ্বাস মজবুত করতে সক্ষম হবে।

বর্তমান বিভিন্ন বাতিল মতবাদের গোমরাহী যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে – মুসলিম উম্মাহকে সদা-সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। ইসলামের সকল পালনীয়-বর্জনীয়-অনুসরণীয় বিষয়ে ইসলামী শরীয়ত তথা ক্বোরআন-হাদীস, ইজমা, কিয়াস অনুসারে পুরোপুরি আমল করতে হবে। সুফীবাদী তরীক্বতপন্থী সকল হক্ব দরবারের উত্তরসূরীদেরকে ইসলামের প্রকৃত মাতাদর্শ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা অনুসরণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা সময়ের দাবি।

এ সফর মাসে দুই’জন মুজাদ্দিদের ওফাত বার্ষিকী। প্রথমজন হলেন ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী হযরত শায়খ আহমদ ফারুকী সরহিন্দি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনি মুজাদ্দিদে আলফে সানী হিসেবে বেশী প্রসিদ্ধ। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রভাবশালী মোঘল শাসনামলে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান সংস্কারক। সে সময় উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলমান এক চরম সংকটময় মুহূর্ত পার করছিল। সম্রাট আকবর প্রবর্তিত ‘দ্বীন-ই ইলাহি’ নামক জঘন্য ভ্রান্ত মতবাদ সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তৎকালীন সময়ে কতিপয় সুবিধাভোগী আলিম নামধারী অর্থের লোভে ওই সম্রাটকে সমর্থন দিয়েছিল। হযরত মুজাদ্দিদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সম্রাটের রক্তচক্ষু উপক্ষো করে সাধারণ মানুষের সামনে প্রকৃত ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরার পাশাপাশি প্রভাবশালী আমির ওমরার নিকট চিঠি লিখতে শুরু করেন। মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কোনটা ভ্রান্ত আর কোনটা শুদ্ধ। এ কারণে হযরত মুজাদ্দিদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সম্রাটের বহু অত্যাচার-নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছিলেন। সম্রাটের ক্রোধ, আক্রোশ কোন কিছুই তাঁকে সত্য প্রচারে দমিয়ে রাখতে পারেনি। নির্ভয়ে সম্রাট ও আমির ওমরাদের সামনে দ্বীন-ই ইলাহির অসারতা প্রমাণ করে করে ইসলামের মূল আদর্শ, ইসলামী মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

অপর দিকে ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলনের চরম বিপর্যয়ের যুগে উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় সামাজিক, রাজতৈনিক ও অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও হতাশার সৃষ্টি হয়। এহেন দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে একান্ত প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল এক আলোর দিশারীর। আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে ওই সময় ১৮৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনি উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্ম, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি ইত্যাদি অঙ্গণে সঠিক পথ নির্দেশ করেন। যুগ সমস্যা মোকাবেলায় গভীর অনুসন্ধানী দৃষ্টি তাঁকে একজন সফল মুজাদ্দিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। দুনিয়া জুড়ে তাঁর খ্যাতি আ’লা হযরত মুজাদ্দিদ-ই মিল্লাত নামে। তিনি তাঁর সুচিন্তিত চিন্তাধারা ও যুগোপযোগী কর্মপন্থা এবং ক্ষুরধার লিখনীর মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের অঙ্গণে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। যার জীবন্ত প্রমাণ বহন করছে তাঁর রচিত প্রামান্য কিতাবাদি। তিনি সমকালীন বিশ্বের ঘটনা প্রবাহ্ ও চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে আমেরিকার জ্যোতিষীর বিশ্বব্যাপী আতংক ছড়ানো সেই কিয়ামতের পূর্বাভাস এর যৌক্তিক খণ্ডন ও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল প্রমাণিত করতে। আ’লা হযরত সমসাময়িক উদ্ভুত বাতিল ফির্কার খণ্ডনে কলমী যুদ্ধ করে ক্ষান্ত হননি বরং তরীক্বত চর্চার নামে শরীয়ত বিরোধী ও শরীয়ত বর্জনকারীদের বিরুদ্ধেও তিনি কলম ধরেছেন। শরীয়ত-তরীক্বতের বিশুদ্ধ অনুসরণ-অনুশীলনকে তিনি মুক্তির উপায় বলে মত প্রকাশ করেছেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী মুসলিম উম্মাহকে এ দুই মহান মুজাদ্দিদের প্রদর্শিত পথে-মতে চলার তাওফীক দান করুন-আ-মী-ন।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •