মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন ও মুহাম্মদ আসগর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রশ্ন: ইদানিং ফেসবুক সহ অনলাইনে মিডিয়ায় লক্ষ্য করলাম কিছু হিংসুক মহল হুযূর ক্বিবলা আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সিরিকোটি, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ ও পীর আল্লামা সাবের শাহ্ মু.জি.আ. ১৯৯৬ ইংরেজী সনে প্রকাশিত’র নসব নামা ও বংশীয় শাজরাহ নিয়ে বিভ্রান্তিকর বাজে মন্তব্য করছে। এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সঠিক তথ্য উপস্থাপনের অনুরোধ রইল।
উত্তর: কুতুবুল আউলিয়া, বানিয়ে জামেয়া, আলে রাসূল, হযরত আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহামতুল্লাহি আলায়হি, গাউসে জামান, মুর্শিদে করীম, আলম বরদারে আহলে সুন্নাত, আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, শায়খে ফাআ‘য়াল, লাখো ভক্ত-মুরিদের পেশওয়া, সাজ্জাদানশীন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মু.জি. আ.) এবং মখদুমে মিল্লাত, মুজাহিদে আহলে সুন্নাত, শাহ্সুফি আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মু.জি.আ.)-এর নসবনামা ও বংশীয় শাজরা নিয়ে ভিত্তিহীন বানোয়াট ও মিথ্যা অপবাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব নিম্নে দেওয়া হল-
যারা মারকাযে আহলে সুন্নাত চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া এবং সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার উপরোক্ত মাশায়েখ হযরাতের সুনাম ও খ্যাতি এবং গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন থেকে এ যাবৎ মানব সেবায় অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার, খেদমতে খলক ও গ্রহণযোগ্যতা সহ্য করতে পারে না, সময় সময় তারা উপরোক্ত মাশায়েখ হযরাতের নসবনামা ও বংশীয় শাজরা নিয়ে বিভ্রান্তিকর, মনগড়া বক্তব্য ফেসবুক ও অনলাইনে প্রচার করে সরলপ্রাণ সুন্নী জনসাধারণের অন্তরে আঘাত করার পাঁয়তারা করে আসছে।
বর্তমানে কোন কোন হিংসুক কুচক্র মহল গবেষণার দোয়াই দিয়ে সরলপ্রাণ মুসলিম জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার এবং তাদের দোসর মুনাফিক গং থেকে বাহবা পাওয়ার পরম আশা বুকে নিয়ে ‘পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কি না খাই’ এই প্রবাদ বাক্যের ন্যায় বাজে কথা ছড়াচ্ছে তাদের খপ্পর থেকে মুসলিম মিল্লাতকে সজাগ এবং সতর্ক করার নিমিত্তে নভেম্বর ১৯৯৮ ইংরেজী মোতাবেক, রজব ১৪১৯ হিজরী সংখ্যায় মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নাতের ২৫-২৬ পৃষ্ঠায় আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া শরীয়া বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
অবশ্য তাদের এ সমস্ত ভন্ডামী ও গবেষণার নামে প্রতারণা যুগে যুগে মুসলিম সমাজ প্রত্যাখান করে আসছে ভবিষ্যতেও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। الاسلام يَعْلُوْ لا يُعِلٰى الحق يَعْلُو لا يُعْلٰى-
অর্থাৎ হক্ব/সত্য এবং ইসলাম বুলন্দ হতে থাকবে, দমানো যাবে না।
হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বংশগত ও তরীক্বতের শাজরা সম্পর্কে জ্ঞাতব্য
গাউসে জামান, মুর্শিদে করীম, আলম বরদারে আহলে সুন্নাত, আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ হুজুর ক্বিবলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র বংশগত ও তরীক্বতের শাজরা সম্পর্কে সরল প্রাণ মুসলমানগণের বিশেষ করে সিলসিলায়ে কাদেরিয়ার মুরিদানদের জ্ঞাতার্থে আমাদের কিছু বক্তব্য নিম্নে পেশ করা হলো-
ক. আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কর্তৃক প্রকাশিত শাজরা শরীফে হুজুর ক্বিবলা গাউসে জামান হযরত আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বংশগত তালিকা নিঃসন্দেহে সহি ও বিশুদ্ধ যা অসংখ্য নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহ থেকে সংকলন করা হয়েছে। তন্মধ্যে-
১. তাজকেরায়ে আউলিয়ায়ে পাকিস্তান (পুশতু ভাষায় লিখিত) কৃত: আবদুল হালিম আফগানী,
২. ছিরতুস্ সায়েরীন ওয়া মাসলাকুল মুজাদ্দেদীন-কৃত: মাওলানা শাহ্ গাউস মুহাম্মদ,
৩. তারিখ-এ বেলুচিস্তান- কৃত: রায় বাহাদুর লালা,
৪. তারিখ-এ ফেরেশতা- কৃত: মুহাম্মদ কাসেম,
৫. তারিখ-এ হাজারা- কৃত: ডা: শের বাহাদুর খাঁন,
৬. মাহজান-এ আফগানী,
৭. তারিখুল আফগান,
৮. তারিখ-এ খোরশিদে জাহান,
৯. তারিখ-এ আফাগেনা,
১০. তারিখ-এ সাদাত- কৃত: আবদুল্লাহ্ বেলুচিস্তান,
১১. শাজরা আকমলিয়া,
১২. রেয়াদে সাদাত,
১৩. আলমুয়ালী শরহে আমালী,
১৪. হায়াতুল আসরার- কৃত: আদম খাঁন,
১৫. ছওলতে আফগানী (উর্দু),
১৬. তারিখ-এ পেশাওয়ার ইত্যাদি।
উক্ত কিতাব সমূহের আলোকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হযরত মীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ গীছু দরাজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ওফাত-৪২১ হি./৪৩০ হিজরী) যার পবিত্র নাম শাজরা শরীফে প্রকাশিত হুজুর ক্বিবলা (রহ.) বংশগত তালিকা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সহ হিসাব করলে ১৩ (তের) নম্বরে স্থান পেয়েছে। তিনি সৈয়্যদ গীছু দরাজ আউয়াল (১ম গীছু দরাজ) হিসেবে প্রসিদ্ধ যার পবিত্র মাজার শরীফ বেলুচিস্তানের কুহে সোলাইমানী নামক স্থানে অবস্থিত। উক্ত নামে অপর একজন প্রসিদ্ধ আরেফ ও অলি আল্লাহ্ আছেন যিনি সৈয়্যদ গীছু দরাজ ছানী (রহ.) (২য় গীছু দরাজ) হিসেবে খ্যাত।
যাঁর পবিত্র মাজার ভারতের দক্ষিণ গুলবরগায় অবস্থিত। তাঁর জন্ম ৭২০ হিজরী/৭২১ হিজরী এবং ওফাত ৮২৫ হিজরী। উভয় গীছু দরাজের মধ্যে দীর্ঘ ৩০০ (তিন শত) বৎসরের ব্যবধান রয়েছে। হুযূর ক্বিবলা হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বংশগত তালিকা সৈয়্যদ মুহাম্মদ গীছু দরাজ আউয়াল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (১ম গীছু দরাজ) এর সাথে সম্পৃক্ত, সৈয়্যদ মুহাম্মদ গীছু দরাজ ছানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (২য় গীছু দরাজ) এর সাথে নয়। এই তথ্য না জেনে উভয় গীছু দরাজকে একজন মনে করে হুজুর ক্বিবলা (রহ.)গণের বংশগত শাজরায় আপত্তি ও বিতর্কিত প্রশ্ন করা অবান্তর ও অজ্ঞতার পরিচায়ক।
খ. আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কর্তৃক হুজুর ক্বিবলা হযরত তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর প্রথম প্রকাশিত শাজরা শরীফে ১৯৯৪ ইংরেজী সনে হুজুর ক্বিবলা (রহ.) এর উর্দ্ধতন পূর্ব পুরুষগণের নামসমূহ উপরে আলোচিত ধারাবাহিকতার পরিপ্রেক্ষিতে- বর্তমানে প্রকাশিত সংস্করণের তুলনায় ক্রমানুসারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কারো মনে সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে। প্রথম প্রকাশিত বংশগত শাজরা হালাতে মশওয়ানী কৃত: সৈয়্যদ ইউসুফ শাহ্ প্রকাশ শাহ্জী কর্তৃক ১৯৩১ সনে ষ্টীম প্রেস লাহোর হতে প্রকাশনা থেকে সংকলন করা হয়েছিল। বস্তুত: সৈয়্যদ ইউসুফ শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর লিখিত উপরোক্ত হালাতে মশওয়ানী কিতাবে অসতর্কতাবশত: সৈয়্যদ গীছু দরাজ আউয়াল (১ম গীছু দরাজ) যার ওফাত ৪৩০ হিজরী ও সৈয়্যদ গীছু দরাজ ছানী (২য় গীছু দরাজ) যাঁর ওফাত ৮২৫ হিজরীতে একজন মনে করার দরুন হুজুর ক্বিবলার বংশগত তালিকা ক্রমানুসারে ভুলবশত বৃদ্ধি হয়ে যায়।
শরীয়া বোর্ডের চোখে এই ভুল ধরা পড়ার সাথে সাথে পরবর্তীতে নেহায়ত সতর্কতার সহিত উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহ হতে সিরিকোটি দরবার শরীফ কর্তৃক হুজুর ক্বিবলা (রহ.) বংশত শাজরা বিশুদ্ধভাবে সংকলন করা হয় যা ১৯৯৬ সনে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত শাজরা শরীফে স্থান পায়। যা উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহের আলোকে বিশুদ্ধ।
গ. প্রকাশ থাকে যে, হুজুর ক্বিবলা হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র তরীক্বতের সিলসিলায় শাহ্ মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি নাম স্থান পেয়েছে। তিনি গাউসে দাওরান হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর দাদা- পীর, তিনি ভারতের দেওবন্দ-খারেজী মাদ্রাসার প্রাক্তন মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ্ কাশমিরী নন। এ জাতীয় ধারণা বিভ্রান্তিকর ও অমূলক। বস্তুত: হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভীর দাদা পীর শাহ্ মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রাক্তন মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ্ কাশমিরীর মধ্যে অন্তত ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসরেরও বেশী ব্যবধান রয়েছে।
দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রাক্তন মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ্ কাশমিরী ও কুতুবুল আউলিয়া হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি উভয়েই সমকালের। বরং আনোয়ার শাহ্ কাশমিরী, হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটির চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। যেহেতু হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র জন্ম ১৮৬১ ইংরেজী মোতাবেক ১২৮০ হিজরী (মোতাবেক ১৮৫৭ ইংরেজী) আর দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রাক্তন মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ্ কাশমিরীর জন্ম ১৮৭৩ ইংরেজী মোতাবেক ১২৯২ হিজরী।
[মুশকিলাতুল ক্বোরআনের মোকাদ্দমা ইয়াতামুল বয়ান- কৃত: ইউসুফ বিন নূরী]
হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি’র দাদা পীর হযরত মুহাম্মদ আনোয়ার রাহমাতুল্লাহি আলায়হি দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রাক্তন মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ্ কাশমিরীর অনেক পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন। উভয়ে একজন মনে করে ভুল তথ্য পরিবেশনার মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ অবিবেচক, স্বার্থান্বেষীদের ও তরীক্বতের খেলাপীদের মিথ্যার আশ্রয়ের নামান্তর।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যারা গবেষণার দোহাই দিয়ে সরলপ্রাণ মুসলমানদের অন্তরে হুজুর ক্বিবলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বংশগত শাজরায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাদেরকে সঠিক গবেষণা ও সত্য প্রকাশের স্বার্থে ১৯৯৮ ইংরেজী মোতাবেক, ১৪১৯ হিজরী রজব সংখ্যা- আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া শরীয়া বোর্ডের উপরোক্ত বক্তব্য ভালভাবে দেখার অনুরোধ রইল। যাতে সকল সন্দেহ নিরসন হয়ে যায়। কারণ সঠিক গবেষণার জন্য ও সত্য উদঘাটনের জন্য পূর্বকার সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করা জরুরি মনে করি, পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা‘আলা বিভ্রান্তি ও হিংসুকদের হিংসা থেকে সবাইকে হেফাজত করুন। আ-মী-ন, ছুম্মা আ-মী-ন। পরবর্তিতে আরো বিস্তারিত তথ্য পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ্।