সম্পাদকীয় > ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সাল। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে একটি জাতীয় নির্বাচন (সংসদ নির্বাচন) শেষ হল। নতুন উৎসাহ্ উদ্দীপনা নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে। আমরা জনগণের সাথে ঐকমত্য পোষণ করি। যে ইশতেহার নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে যারা ক্ষমতাসীন হলো তাদের নিকট আমাদের আশা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করবেন। ধনী দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পাবে, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম বেগবান হবে। নতুন সরকার জনগণের জান-মাল ও অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হবেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যারা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এবং যারা পরাজিত হয়েছেন তাদের সকলকেই মোবারকবাদ ও সাধুবাদ জানাই। কেননা গণতান্ত্রিক পন্থায় সকল দলের অংশ গ্রহণ জাতির জন্য মাইল ফলক। দুঃখজনক যে, অনাকাঙ্কিত ঘটনা ও হিংসাত্মক কার্যকলাপে ১৯ নাগরিকের প্রাণহানির জন্য আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মানুষের জান-মাল রক্ষা ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছি।
বিগত সনের সকল গ্লানি, বিষাদ, অসুন্দর সবকিছুকেই ভুলে গিয়ে শান্তি, প্রগতি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা অবগাহন করব যাতে করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি মুক্ত একটি বাংলাদেশ যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সৃষ্টি করে যেতে পারি সে লক্ষ্যেই আমাদের সকলকেই সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। নতুন ২০১৯ সালে এ প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাবে। আল্লাহ্ জাল্লাশানুহুর নিকট সাহায্য কামনা করি। আশা করি নতুন সরকার ক্বোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আইন পাশ করবেন না। বিদায় ২০১৮ সাল, স্বাগতম ২০১৯ সাল।
ফেব্রুয়ারী ভাষার মাস। ২১ ফেব্রুয়ারী আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক ও মর্যাদাপূর্ণ দিবস। মায়ের ভাষা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায় করতে গিয়ে আমাদের অগ্রজেরা আত্মদান করে আমাদের গৌরবান্বিত করেছেন সে শহীদদের মাগফেরাত কামনা করছি।
ইসলাম মাতৃভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল তাশরীফ এনেছেন তাঁরা সকলেই মাতৃভাষাতেই দ্বীন-ধর্ম প্রচার করেছেন। পৃথিবী সৃষ্টির আদি থেকে অদ্যাবধি বহুভাষা বিশ্বে প্রচলিত। অনেক ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভাষার ¯্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। তিনি যখন কোন নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তখন তাঁকে সে গোত্রের বা জাতির ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু তাই নয় আসমানী কিতাব ও সহীফাসমূহ প্রত্যেক নবী-রাসূলের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন: আমি প্রত্যেক রসূলকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।
[সূরা ইব্রাহীম: আয়াত- ১৪]
আমাদের মাতৃভাষা দিবস (২১ ফেব্রুয়ারী) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশ্বের প্রায় দুশতাধিক রাষ্ট্র ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য সরকার আরো সচেষ্ট হবেন আশা করি। আমরা যেন সকল কার্যক্রম বাংলা ভাষায় চালাতে পারি সে জন্য দক্ষ অনুবাদকারী ভাষা পন্ডিত সৃষ্টি করতে হবে নতুবা এ অর্জন অর্থহীন হয়ে পড়বে। একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমরা যাবতীয় কার্যক্রমে যেন বাংলাকেই প্রাধান্য দিই। বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাই নিজ নিজ ভাষার মাধ্যমে উন্নত হয়েছে। মাতৃভাষার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন ‘বিজাতীয় ভাষার মধ্যে বিলীয়মান হয়ে যাওয়া বাংলা ভাষার ব্যবহারে বিব্রত হওয়া অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। মাতৃভাষাকে যে অপমান করে সে মাকেই অপমান করল। মা ও মাতৃভাষা একই সূত্রে গাঁথা।
বাংলার সুলতানগণের একান্ত পৃষ্ঠপোষকতায় ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে এদেশে বাংলা ভাষার সুদূর প্রসারী অগ্রগতির সূচনা হয়। প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. দীনেশ চন্দ্রসেন লিখেন: মুসলমানের আগমনের পূর্বে বঙ্গভাষা কোন কৃষক রমনীর ন্যায় দীন-হীন বেশে পল্লী কুটিরে বাস করিতেছিল। বাংলা ভাষা মুসলমান আগমনের পূর্বে অতীব অনাদর উপক্ষোয় বঙ্গীয় চাষাগণের কথঞ্চিত আত্মপ্রকাশ করিতেছিল এবং তৈলধারপাত্র কিংবা পাত্রধার তৈল লইয়া ঘোর বিচারে প্রবৃত্ত ছিলেন, তাহারা হর্ষচরিত হইতে ‘হারং দোই সে হরিনি’ প্রভৃতি দৃষ্টান্ত আবিষ্কার করায় আত্মতৃপ্ত লাভ করিতেছিল।