আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে কাজে অসন্তুষ্ট –
মাওলানা মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান হাবিবী >
অপচয় ও অপব্যয় থেকে দূরে থাকা
আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হয় এমন কাজগুলোর মধ্যে অপচয়, অপব্যয় ও ভোগবিলাস অন্যতম। কেননা, এসব অভ্যাস মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অবক্ষয় ডেকে আনে। তাইতো ইসলামে অপচয় ও ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকতে কঠোরতা প্রদর্শন করেছে। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কোন কাজ বৈধ হলেও সে ক্ষেত্রেও যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করা হয় তবে তাকে ইসরাফ বা অপচয় হিসেবে দেখা হয়। ইসলাম বৈধ কাজেও মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় সমর্থন করে না। অবৈধ কাজতো চূড়ান্তভাবে নিষেধ। আর অবৈধ কাজে ব্যয় করাকে তাবজির বা অপব্যয় বলা হয়। অপচয় ও অপব্যয় একটি খারাপ অভ্যাস। অপচয়ের সাথে অহংকারের নিগুঢ় সম্পর্ক রয়েছে। নিজের বাহাদুরি প্রকাশের মনোভাব অন্যদিকে অপব্যয়ের সাথে রয়েছে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘনের সম্পর্ক। ইসলাম যা থেকে তার অনুসারীদের দূরে থাকার নির্দেশ প্রদান করেছে।
অপচয় ও অপব্যয়ের বিরুদ্ধে পবিত্র ক্বোরআন ও হাদীস শরীফে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। মানুষ যাতে এই মন্দ ও খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকে সে জন্যেই এই দু’টি বিষয় সম্পর্কে এত বেশি সতর্ক করা হয়েছে। অপব্যয়কারীদের ক্বোরআন মজিদে শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা ক্বোরআন মজিদে এরশাদ করেন- ‘আত্মীয়-স্বজনকে তার হক প্রদান কর, অভাব গ্রস্থ ও মুসাফিরদেরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কর না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ [সূরা বনী ইসরাঈল: ২৬ ও ২৭]
অপব্যয়ের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আল্লাহ্ তা’আলা আরো ঘোষণা করেন- ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ [সূরা আ’রাফ: আয়াত-৩১]
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- বিলাসিতা পরিহার কর, আল্লাহর নেক বান্দারা বিলাসী জীবন যাপন করে না। [মুসনাদে ইমাম আহমদ]
ছোট খাটো অপচয়ের বিরুদ্ধেও হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়েছেন। হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি অযু করছিলেন। নবীজি বললেন, হে সা’দ! এই অপচয় কেন? হযরত সা’দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! অযূর মধ্যেও কি অপচয় আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ! তুমি প্রবাহমান নদীর তীরে থাকলেও অপচয় আছে। [মুসনাদে ইমাম আহমদ]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপরোক্ত হাদীসটির উদ্দেশ্যে ছিল; অপব্যয়ী মানসিকতার বিরুদ্ধে সাবধানতা সৃষ্টি করা। কারণ, কোনো কোনো অবস্থায় যদিও অপচয়ের ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না, তবুও এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের পরিধেয় বস্ত্র (জামা, লুঙ্গি, পাজামা) অহংকারের সঙ্গে মাটিতে হেচঁড়ে নিয়ে চলে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তার প্রতি দয়ার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। [মিশকাত শরীফ]
আল্লাহ্ তা’আলা গর্ব-অহংকার মোটেই পছন্দ করে না। এ জন্য যে সব বিষয় গর্ব-অহংকার প্রকাশের মাধ্যম হতে পারে; ইসলামী শরীয়তে সেসব কাজ-কর্ম এবং চালচলনের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি সোনা অথবা রূপার পাত্রে বা সোনা-রূপা মিশ্রিত পাত্রে পান করে, সে নিজের পেটে জাহান্নামের আগুন ঢালে। [দারু কুতনী, মিশকাত শরীফ]
অযথা অপচয়, লৌকিকতা ও ভোগবাদী মানসিকতার প্রদর্শনী থেকে মুসলমানদের পবিত্র রাখাই এ হাদীসের উদ্দেশ্য। ইসলামে অপচয়, অপব্যয় ও ভোগবিলাসের পাশাপাশি কৃপণতারও বিরোধিতা করা হয়েছে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে মধ্যপন্থা অবলম্বনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন, ‘‘এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না, কার্পন্যও করে না। বরং তারা এ দু’টির মাঝে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে।’ [সূরা ফুরকান: ৬৭]
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সকলকে অপচয়, অপব্যয় ও ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আ-মী-ন।
খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা মারাত্মক অপরাধ
আমানতের খেয়ানত করা ও বিশ্বাসঘাতকতা করা মারাত্মক একটি অপরাধ। এ বিষয়ে ইসলামে রয়েছে কঠোর বিধান। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু কালামে মজীদে ঘোষণা করেন- ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের এবং জেনে শুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত কর না।’ [সূরা আনফাল: ২৭]
এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে মোফাস্সিরীনে কেরাম বলেন, নবীজির বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু লুবাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ব্যাপারে এ আয়াতে করীমা নাযিল হয়। মুসলমানরা যখন বনু কুরায়জাকে অবরোধ করে রেখেছিলেন, আর বনু কুরায়জার মহল্লায় লুবাবার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা অবস্থান করছিল। হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তখন কোনো এক বিশেষ প্রয়োজনে আবু লুবাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে বনু কুরায়জার কাছে পাঠালেন। কুরায়জা গোত্রের লোকেরা জানতে চাইল, হে আবু লুবাবা! সা’দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা যদি বের হয়ে আসি, তাতে আমাদের কি পরিণতি হবে বলে তুমি মনে কর? আবু লুবাবা নিজের গলার দিকে ইশারা করে বুঝাতে চাইলেন, তোমাদের সবার গলা কেটে ফেলা হবে, কাজেই তোমরা তা করতে যেয়ো না। তার এ আচরণ ছিল আল্লাহ্ ও রাসূলের খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। আবু লুবাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু নিজেই স্বীকার করেন, ‘আমি পা স্থানচ্যুত করার পূর্বেই বুঝতে সক্ষম হলাম, আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের খেয়ানত করে ফেলেছি।’ এরপর হযরত আবু লুবাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু দীর্ঘ ছয় দিন মসজিদে নববীর একটি গাছের খুঁটির সাথে নিজেকে বেঁধে রাখেন। তাওবা কবুল হওয়ার ঘোষণা আসার পরই তিনি বাঁধন মুক্ত হন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন, ‘আল্লাহ্ পাক বান্দাদের জন্য যা কিছু ফরয করেছেন, তাই আল্লাহ্র আমানত।’ অর্থাৎ- ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তোমরা আল্লাহর দেয়া ফরয আদেশ নিষেধ ভঙ্গ বা অমান্য কর না।
হযরত কালভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যচারিতাই হচ্ছে খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর ফরযকৃত বিধানের ব্যাপারে প্রত্যেকেই আমানতদার। ইচ্ছা করলে সে তা পালন করতে পারে আবার সে খেয়ানতও করতে পারে, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানবে না।
উল্লেখিত আয়াতে ‘তোমরা জেনে শুনে’ করার অর্থ নিঃসন্দেহে তোমরা জান যে, এটা আমাদের আমানত। আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা খেয়ানতকারীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না।
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রহমতে দো’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মোনাফিকের আলমত তিনটি; যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং যখন তার কাছে কিছু আমানত (গচ্ছিত) রাখা হয়, তখন তা খেয়ানত করে।[বুখারী ও মুসলিম শরীফ] রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং যে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না তার ভিতর ধর্ম নেই। [মুসনাদে ইমাম আহমদ ও তাবরানী শরীফ]
সকল বিষয়েই খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা দোষণীয়। তবে একটা অন্যটা অপেক্ষা বেশি দোষণীয় হতে পারে। যে লোক ছোট কোন বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করল, আর সে কারো অর্থ-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা বা আরো বড় কোন অপরাধ করল, তারা উভয়ে সমান নয়। নবী এ দু’জাঁহা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘তোমাকে যে বিশ্বাস করে, তুমি তার বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করো। (অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতা করো না) আর তোমার সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার সাথেও তুমি বিশ্বাস ভঙ্গ করো না।’’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম অন্য একটি হাদীসে এরশাদ করেন, একজন মু’মিন-মুসলমান আর যা-ই করুক না কেন, খেয়ানত, বিশ্বাসঘাতকতা ও মিথ্যাচারিতা করতে পারে না।[মুসনাদ ইমাম আহমদ]
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একথা স্পষ্ট হলো যে, আমানত খেয়ানত করা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করা ইসলামে মারাত্মক একটি অপরাধ; যা একজন মু’মিন-মুসলমানের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং এর থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মু’মিনের উপর একান্ত অপরিহার্য। কেননা, এর দ্বারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
অতএব, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা আমাদেরকে এ রকম জঘন্যতম গুনাহ্ থেকে হেফাজত করুন। আ-মী-ন।
মিথ্যা অপবাদ বা কু-ধারণা পোষণ
ইসলাম এমন একটি মহান ও শ্বাশ্বত ধর্ম; যেখানে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ে সুনিপুন সমাধান দেয়া হয়েছে। এ রকম একটি সূক্ষ্ম বিষয় হচ্ছে ‘ধারণা’ করা। আর এই ধারণা দু’ধরণের তথা সুধারণা ও কু-ধারণা। ধারণা যদি ঠিক হয় সেখানে পুণ্য রয়েছে আর কু-ধারণা হলে তা হবে অপবাদ; যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ইসলাম অপর মানুষ সম্পর্কে সু-ধারণা পোষণের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে আর কু-ধারণা পোষণ তথা অপবাদ দেয়াকে নিরুৎসাহিত করেছে। মিথ্যা অপবাদ বা কু-ধারণা পোষণের কারণে এক জনের সাথে অপরজনের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এ ধরণের প্রবণতার কারণে সামাজিক ও জাতীয় ঐক্যও চিড় ধরে এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই ইসলাম কু-ধারণা পোষণে ও মিথ্যা অপবাদ দেয়ার প্রবণতাকে নিষেধ করেছে। ক্বোরআন-সুন্নাহ্ মোতাবেক এক মুসলমান অপর মুসলমানকে অপবাদ দেযা কবীরা গুনাহ। আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে মজীদে এরশাদ করেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মু’মিন নর-নারীকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ [সূরা আহযাব: আয়াত- ৫৮]
অপর আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন, ‘তোমরা একজন অপরজনের দোষ তালাশ করে বেড়িও না এবং কারো অগোচরে গবীত করো না।’
উম্মাহাতুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম ছাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম এরশাদ করেন, ক্বিয়ামত দিবসে ওই ব্যক্তি-ই হবে আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিন্দনীয়, যার অশ্লীল কথা শোনার ভয়ে মানুষ তার কাছ থেকে দূরে থাকে বা তার সংশ্রব ত্যাগ করে। [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ‘ওহে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর থেকে অনুদারতা উঠিয়ে দিয়েছেন। তবে যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের ইজ্জত-সম্মান নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে, তার ব্যাপার আলাদা। সে অনুদারতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে বা ধ্বংস হয়ে যাবে।’
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জানে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘এক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের রক্ত ঝরানো, সম্পদ ও সম্ভ্রমহানি করা অবৈধ ও হারাম।’ [মুসলিম ও তিরমিযী শরীফ] রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। কেউ কারো প্রতি অত্যাচার চালায় না, একজন অপরজনকে অসম্মান, অশ্রদ্ধা করে না। কোনো মুসলমানের জন্য এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর নেই, সে তার মুসলিম ভাইকে ঘৃণা বা অশ্রদ্ধা করবে।’ [মুসলিম শরীফ] হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম এর নিকট একদা অভিযোগ আসলো, অমুক মহিলা সারারাত নামায পড়ে এবং প্রতিদিন রোযা রাখে, কিন্তু সে তার প্রতিবেশীর (তিক্ত কথায়) দুঃখ দেয়, এটা শুনে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম ফরমালেন, তাতে কল্যাণ নেই, সে দোযখে যাবে। [মুসনাদে ইমাম আহমদ ও হাকিম ইবনে হিব্বান]
অপর হাদীসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম এরশাদ করেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী কাজ, আর তার সাথে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া কুফরী কাজ। [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
উপরোল্লিখিত ক্বোরআন-হাদীসের আলোচনায় একথা দিবালোকের ন্যায় প্রকাশমান হলো যে, কু-ধরণা, মিথ্যা অপবাদ, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদির স্থান ইসলামে কোন অবস্থাতেই গ্রহণ যোগ্য নয় অর্থাৎ ইসলাম এগুলো সমর্থন করে না। আজ যদি আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ইসলামী তাহজীব-তামাদ্দুনের মাধ্যমে পরিচালিত হত, তাহলে কোন ধরনের অরাজকতা, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার অবকাশ থাকতো না।
পরিশেষে মহান রবের দরবারে ফরিয়াদ জানাই, আমরা যেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী রীতি-নীতি অনুসরণ করে সমূহ কল্যাণ-সাধন করতে পারি। আ-মী-ন।
বেহুরমতিন নবীয়্যিল আমিনিল মাতিন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম।