অন্যান্য দেশে তাঁর প্রভাব-৮

0

অন্যান্য দেশে তাঁর প্রভাব-

মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার >

সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি যখন রেঙ্গুনে আসা যাওয়ার পথে কলিকাতা যাত্রা বিরতি করতেন কয়েকদিন। এই সময়ে তিনি ধরমতলা ওয়াসেল মোল্লার সাত তলা ভবনে থাকতেন। এখানে তাঁর বিশিষ্ট মুরিদ এবং পরবর্তিতে খেলাফত প্রাপ্ত, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার মুজাফ্ফরুল ইসলামের বাসভবনে তিনি উঠতেন। নোয়াখালি নিবাসি এই ডাক্তার হুজুরের খুব আপনজন ছিলেন। ডাক্তার ছিলেন ১৯২০ সালের এম বি পাশ ডাক্তার। তিনিও রেঙ্গুনে সিরিকোটি হুজুরের হাতে বায়াত হয়েছিলেন। ১৯৩৫ সনের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২১ জিলক্বদ, হুজুর কেবলা সিরিকোটি যখন রেঙ্গুন হতে দীর্ঘ ১৬ বছর পর স্বদেশে যাচ্ছিলেন সেবার পথিমধ্যে দু’দিন কলিকাতা থাকবার কথা তাঁর একটি চিঠি থেকে জানা যায়। [ইফতিতাহিয়্যা, ড. প্রফেসর মাসউদ আহমদ]

উল্লেখ্য, রেঙ্গুন-কলিকাতা-করাচি রুটেই ছিল হুজুরের স্বদেশে আসা যাওয়া। ১৯৩৬ সন থেকে, এই পথে আসা যাওয়ার কোন এক সময়ে তিনি চট্টগ্রামেও যাত্রা বিরতি করতেন। চট্টগ্রামের এই মাত্র কয়েকদিনের অবস্থান পরবর্তিতে এখানকার মানুষের ভাগ্যকে প্রসন্ন করে দিয়েছিল, এবং ১৯৪২ হতে রেংগুনের ২১/২২ বছরের মিশন চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হয়েছিল। যেহেতু, তিনি কলিকাতায়ও কিছুদিন থাকতেন তাই আশা করা যায় যে, সেখানেও তাঁর কিছু না কিছু অবদান থাকতে পারে, যা হয়ত ঠিকমত অনুসন্ধান করা হলে বের হয়ে আসবে। তবে, হুজুরের কলিকাতা সফরের বেশকিছু কারামতের কথা জানা যায়। এর একটি হল: একবার ডাক্তার মুজাফ্ফরুল ইসলামের বিবি আবেদা খাতুন কি এক কারণে হুজুরের কাছে আসবার সুযোগ পান, এবং এই সময় হঠাৎ আবেদার চোখ বেয়ে পানি এসে তা গড়িয়ে পড়তে থাকে। বিষয়টি হুজুরের দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। হুজুর জিজ্ঞেস করলেন যে কেন আবেদা কাঁদছেন, ডাক্তার (স্বামী) কিছু বলেছে? তিনি বলতে চাচ্ছিলেননা, কিন্তু হুজুর বারবার জানতে চাপ দিচ্ছিলেন, তাই বাধ্য হয়ে, বললেন হুজুর! ডাক্তার আরো একটা বিয়ে করবে বলেছে,কারণ, আমি কোন সন্তান দিতে পারিনাই।আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে ১৬-১৭ বছর হল, কিন্তু কোন সন্তান সন্ততি নাই, তাই ডাক্তার দ্বিতীয় বিয়ে করবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। আবেদার কান্না দেখে হুজুর খুব ব্যথিত হলেন, বললেন, ‘ডাক্তারের এত সাহস, আমার মেয়েকে ঘরে রেখে আবার বিয়ে করবে? ঠিক আছে, আজ আমি ডাক্তারের সাথে এর একটা দফা রফা করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। হুজুর কেবলা আবেদাকে মেয়ে হিসেবে শুধু ডাকেননি, বরং ডাক্তার মুজাফ্ফর বাসায় আসার পর তাঁকে এক চোট নিয়ে ছাড়লেন, এবং পরিষ্কার করে বলে দিলেন- ‘যতদিন আমার মেয়ে আবেদা বেঁচে আছে ততদিন তোমার অন্য মেয়ে বিয়ে করা যাবেনা।’ এরপর, আল্লাহর দরবারে হাত উঠালেন সন্তানের জন্য। আলহামদুলিল্লাহ্, ঘটনাটা সম্ভবত ১৯৪২ এর দিকে হবে, আর ডাক্তারের ঘরে আবেদার সৌভাগ্যের নিদর্শন হয়ে পর পর দুই ছেলের জন্ম হল। প্রথম ছেলে শামসুল ইসলামের জন্ম হল ১৯৪৩ সনে, আর দ্বিতীয় ছেলে কামরুল ইসলামের জন্ম হল ১৯৪৫ সনে, সুবহানআল্লাহ। শামসুল ইসলাম এখন আর দুনিয়াতে নাই। মাত্র কয়েকবছর আগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জামেয়া-আনজুমানের সেবা করে গেছেন। আর, এখনো বেঁচে আছেন কামরুল ইসলাম, তিনি থাকেন চট্টগ্রামে। দুই ভাইয়ের কাছেই তাঁদের জন্মের প্রেক্ষাপট ও সিরিকোটি হুজুরের কারামতের প্রসঙ্গটি শুনেছি এবং লিখে রেখেছিলাম। যদিও এখানে কারামত বলাটা আমার উদ্দেশ্য নয়, ধারনা করা যায় যে, হুজুরের পদচারণা যেখানেই হয়েছে সেখানে দ্বীনের কোন না কোন সেবাও হয়েছে, যদিও এই মুহূর্তে সে তথ্যাদি আমার হাতে নাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিরিকোটি হুজুর শুধু কলিকাতা নয়, ভারতের বোম্বে সহ অন্যান্য কিছু জায়গায় ইসলামের খেদমত করেছেন বলে দৈনিক আজাদী’র কলামিস্ট শাখাওয়াত হোসেন মজনু’র একটি বক্তব্যে পাওয়া যায়। আর, হুজুরের আজমির শরিফ সফরের বিষয়টিত আছেই। একবার তাঁর আজমির সফরে শিশু শাহজাদা হাফেজ আল্লামা সৈয়্যদ মুহম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র) সাথে ছিলেন, এবং সে সফরে একজন আগন্তুক বেশে স্বয়ং খাজা গরীবনওয়াজ (রাহ.) শিশু তৈয়্যব শাহ্ কে সাক্ষাত দেন, আলিঙ্গন করেন এবং হ্রদ্যতাপূর্ণ আলাপের সাথে কিছু দোয়া-কালাম শিক্ষা দেন বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত জানাতে চাই যে, এ আজমির শরিফের বহু খাদেম পরিবার হুজুর তৈয়্যব শাহ্ (রাহ.)’র মুরীদ ছিলেন। ১৩-১৬ আগস্ট ২০১৭, আজমির সফরে, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মুহাম্মদ সহ অধম সেই পুরোনো নিদর্শনসমূহের একটি ‘কামাল মঞ্জিল’ এ গিয়েছিলাম। এ মঞ্জিলের বর্তমান গদীনশীন সৈয়দ সামির উদ্দিন চিশতি সে প্রসঙ্গ স্বীকার করে বলেন যে, তাঁর বাবা আলাউদ্দিন চিশতি সহ তাঁদের আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ্’র মুরীদ, এবং হুজুর কেবলা তাঁদেরকে সে সময় আজমির শরিফে মাদ্রাসা তৈরীর বিষয়ে নির্দেশ দেন এবং এ বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন। সুতরাং বলা যায় যে, দ্বীনের খেদমতের এই ধারাবাহিকতা সিরিকোটি হুজুরের সময় হতেই চলে এসেছিল আজমিরে। সেদিনের সাক্ষাতে এক পর্যায়ে সামির চিশতি সাহেব আমাদেরকে বলেছিলেন যে, যদি এখন গাউসিয়া কমিটি -আনজুমান আজমিরে কোন মাদ্রাসা বানাতে চায়, তাহলে তাঁরা জায়গা দিতে প্রস্তুত আছেন।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •