মসলকে আ’লা হযরতের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত-৯

0

মসলকে আ’লা হযরতের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত-

হযরত শাহানশাহে সিরিকোট ছিলেন বাংলাদেশ’র ‘মসলকে আ’লা হযরত’র বুনিয়াদ স্থাপনকারী, এমনকি পাকিস্তানের হরিপুর দারুল উলুমকেও তিনি সুন্নিয়তের এই বিশুদ্ধ ধারায় নিয়ে এসেছিলেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪, সিরিকোটি হুজুরের ঐতিহাসিক অবদান হল চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার যাত্রা। এর ভিত্তি প্রস্তর রাখবার সময়ই তিনি বলেন- ‘ইয়ে নয়া মাদ্রাসা কা বুনিয়াদ মসলকে আ’লা হযরত পর ঢালা গেয়া হ্যায়’। ২৫ জানুয়ারি ১৯৫৬, তারিখে এই মাদ্রাসার একাডেমিক যাত্রা শুরুর সময় এর নামের সাথে ‘জামেয়া’ শব্দ সংযুক্তি হয় একে মসলকে আ’লা হযরতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। তাই, এ চিন্তাধারার যোগ্য আলেম আল্লামা ওয়াকার উদ্দিন বেরেলী (রাহ.) কে নিয়োগ দেওয়া হয় এর প্রথম প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে। পরবর্তিতে একই মসলকের বিশেষজ্ঞ আলেম আল্লামা নসরুল্লাহ্ খাঁন (রাহ.)কেও একই দায়িত্বে এনেছিলেন গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ্ (রাহ.)। তাঁরা স্থানীয় ওলামাদের নিয়ে এদেশে আ’লা হযরতের চিন্তাধারার আলেম তৈরীতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান, যা আজ অনস্বীকার্য। শুধু তাই নয়, স্বদেশের হরিপুর সহ তাঁর সমস্ত আবাদি এলাকাতেই আজ মসলকে আ’লা হযরত যথেষ্ট প্রভাবশালী একটি সুন্নি সহীহ্ ধারা হিসেবে পরিচিত। ‘শরহুল হুকুক’ সহ আ’লা হযরত রচিত বহু কিতাবের অনুবাদ করে স্থানীয়দের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা হয়ে আসছে তাঁর হাতে পরিচালিত দারুল উলুম রহমানিয়া সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে, যা মূলত তাঁরই প্রেরণার ফসল বিধায়, উক্ত কিতাবের উর্দু তরজমাকারী আল্লামা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরী (রাহ.)’র মত বিখ্যাত আলেম, উক্ত কিতাবের তরজমার মুখবন্ধে সিরিকোটি হুজুরের বিশাল দ্বীনি খেদমতের কথা অকপটে লিখে গেছেন। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আ’লা হযরত গবেষক প্রফেসর ড: মাসউদ আহমদ, মিশরের আল আজহারের প্রথম আ’লা হযরত বিষয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভকারী মাওলানা মমতাজ আহমদ ছদীদি, পাকিস্তানের বিখ্যাত মুফতি আবদুল কাইউম হাজারভী (রাহ.), মাওলানা সৈয়্যদ আমির শাহ্ গীলানী পর্যন্ত বহু খ্যাতনামা গবেষক-আলেমের কলমে হযরত সিরিকোটি (রাহ.)’র অবদানের বিষয়টি উঠে এসেছে, আলহামদুলিল্লাহ্। আজ, এ দেশে, এমনকি মিশরের আল আজহার, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়, সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই চিন্তাধারার উচ্চতর গবেষণায় সিরিকোটি হুজুরের জামেয়ার অবদান অনস্বীকার্য। আ’লা হযরত কৃত কোরানের বিশুদ্ধতম তরজমা কানজুল ঈমান সহ আজ বহু জরুরি কিতাবের অনুবাদ ও মৌলিক গ্রন্থ রচনায় যিনি বাঙালি সুন্নি মুসলমানদের কাছে পরম শ্রদ্ধার পাত্র, সেই জান্নাতি মানুষ মৌলানা আবদুল মান্নান সহ আজ এ মসলকের অধিকাংশ দায়িত্ব পালনকারীই জামেয়ার, বা ঢাকা কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়ার ছাত্র, যা দিনের সূর্যের মতই স্পষ্ট। উল্লেখ্য, আল্লামা সিরিকোটি (জন্ম ১৮৫৬-৫৭ খ্রি. ওফাত ১৯৬১ খ্রি.) এবং আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলবী (জন্ম ১৮৫৬, ওফাত ১৯২১ খ্রি.) সমসাময়িক বটে, কিন্তু সিরিকোটি হুজুর বেঁচে থাকেন আরো চল্লিশ বছর বেশি। তাঁর এমন লম্বা হায়াতের ১৯৫৮ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন দেশে নিরলস দ্বীনি সেবার সুযোগ নেন, যেখানে মসলকে আ’লা হযরত পরিচিতিও ছিল, এবং পরের সময়টাতে কাটান স্বদেশের দ্বীনি সেবায়। তাঁর শতাধিক বছরের হায়াতটাই ছিল হায়াতে তাইয়্যেবা। যেখানে ছিলনা কোন বিশ্রাম,ছিলনা কোন অবসর।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •