শানে রিসালত : হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে চিকিৎসা শাস্ত্রের জ্ঞানও দেওয়া হয়েছে।
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান
হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে চিকিৎসা শাস্ত্রের জ্ঞানও দেওয়া হয়েছে।
যাদু নবীগণের হৃদয় ও বিবেকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না
আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমান-
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِঙ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ঙ وَمِنْ شَرِّغَاسِقٍ اِذَا وَقَبَঙ وَمِنْ شَرِّ النَّفّثتِ فِى الْعُقَدِঙ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَঙ
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِঙ مَلِكِ النَّاسِঙ اِلٰهِ النَّاسِঙ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِঙ الَّذِىْ يُوَسْوِسُ فِىْ صُدُوْرِ النَّاسِঙ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِঙ
তরজমা:
১. আপনি বলুন, ‘আমি তাঁরই আশ্রয় নিচ্ছি, যিনি প্রভাতের সৃষ্টিকর্তা, ২. তাঁর সৃষ্টিকুলের অনিষ্ট থেকে, ৩. এবং অন্ধকারাচ্ছন্নকারীর অনিষ্ট থেকে, যখন সেটা অস্তমিত হয়, ৪. এবং ওইসব নারীর অনিষ্ট থেকে, যারা গ্রন্থিসমূহে ফুৎকার দেয়, ৫. হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন (আমার প্রতি) হিংসাপরায়ণ হয়। [সূরা ফালাক্ব: আয়াত ১-৫, কান্যুল ঈমান]
সূরা নাসের তরজমা:
১.আপনি বলুন, ‘আমি তাঁরই আশ্রয়ে এসেছি, যিনি সকল মানুষের প্রতিপালক, ২. সকল মানুষের বাদশাহ্, ৩. সকল লোকের খোদা, ৪, তাঁরই অনিষ্ট থেকে, যে অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং আত্মগোপন করে, ৫. যে মানুষের অন্তর সমূহে কুপ্ররোচনা ঢালে, ৬. জিন্ ও মানুষ।[সূরা নাস: আয়াত ১-৬, কান্যুল ঈমান]
সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাসেও হুযুর-ই আন্ওয়ার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসা (না’ত) রয়েছে। তা এভাবে যে, এ দু’টি সূরার শানে নুযূল হচ্ছে- এক ব্যক্তি লবীদ ইবনে আ’সাম ইয়াহুদী এবং তার মেয়েরা হুযূর সাইয়্যেদে আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর খুব জঘন্যভাবে যাদু করেছিলেন, কিন্তু সেটার প্রভাব হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শরীর মুবারকের উপর এবং বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শরীফের উপর পড়েছিলো বটে, কিন্তু তাঁর হৃদয়, বিবেক ও আক্বীদা মুবারকের উপর আল্লাহ্র অনুগ্রহক্রমে মোটেই পড়েনি। কয়েকদিন পর হযরত জিব্রাঈল আমীন আসলেন, আর আরয করলেন, ‘‘এক ইয়াহুদী আপনার উপর যাদু করেছে। আর যাদুর সামগ্রীগুলো অমুক কূপের মধ্যে পাথরের নিচে চাপা দেওয়া হয়েছে।
হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে ওই কূপের নিকট পাঠালেন। তিনি সেটার পানি সেচন করে পাথরটি তুললেন। তখন ওই পাথরের নিচে থেকে খেজুরের বাকলের তৈরী থলে বের হলো। ওই থলের মধ্যে ছিলো হুযূর আলায়হিস্ সালাম-এর চুল শরীফ, যা চিরুণী থেকে বের হয়েছিলো। আর হুযূর আলায়হিস্ সালাম-এর চিরুণীর কয়েকটি দাঁত, একটি রশি অথবা ধনুকের রশি ছিলো, যাতে এগারটি গ্রন্থি লাগানো ছিলো, আরেকটা মোমের পুতুল ছিলো, তাতে এগারটি সূচ চুবানো হয়েছে। এসব বস্তু সহ থলেটা হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর খিদমতে পেশ করা হয়েছিলো।
তখন রব্বুল আলামীন এ দু’টি সূরা নাযিল করেছেন। এ দু’টি সূরায় এগারটি আয়াত রয়েছে: সূরা ফালাক্বের পাঁচটি আয়াত আর সূরা নাসের ছয়টি। প্রতিটি আয়াত পাঠ করার সাথে সাথে একেকটি গিরা খুলে যাচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত উক্ত সব আয়াত পড়ার পরক্ষণে সমস্ত গ্রন্থি খুলে গিয়েছিলো। হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। [সূত্র: তাফসীর-ই খাযাইনুল ইরফান]
এ থেকে নিম্নলিখিত মাসআলাগুলো অনুমিত হয়
১. হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মহামর্যাদা আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে এত বেশী উঁচূ ছিলো যে, কোন চিকিৎসা কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনের সময় তাঁর কোন চিকিৎসক কিংবা হেকিমের নিকট তাশরীফ নিয়ে যেতে হতো না; বরং খোদ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ করে দিতেন। তিনি সমগ্র বিশ্বের শর্তহীন চিকিৎসক, তাঁর চিকিৎসক হবে কে? সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। মহান রব ব্যতীত তাঁর ও অন্য কারো প্রয়োজন নেই। সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম
২. হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালামকে রব্বুল আলামীন ‘যাবতীয় ধর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ছাড়াও শরীরগুলোর চিকিৎসা বিদ্যাও দান করেছেন। অন্য সব কিছুর জ্ঞান তো আছেই।
এ কারণেই কোথাও একথার প্রমাণ মিলবে না যে, হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম নিজের কোন অসুখ-বিসুখের সময় কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন; অথবা তিনি কারো নিকট থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করেছেন! কিন্তু হাদীস শরীফের কিতাবগুলোতে যেখানে দো‘আগুলোর অধ্যায় নির্ণয় করা হয়েছে, সেখানে ঔষধগুলোর অধ্যায়ও বানানো হয়েছে। ওইগুলোতে ওই সব ঔষধের নাম লেখা হয়েছে, যেগুলো হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস সালাম থেকে উদ্ধৃত রয়েছে। যেমন- জ্বর হলে, শীতকালে, অমুক অমুক অসুখে অমুক অমুক ঔষধ ব্যবহার করা চাই। এটা অন্য কথা যে, আমাদের দেশের লোকদের মন-মেযাজ ও স্বভাব-প্রকৃতির পার্থক্যের কারণে ওইগুলো থেকে কোন কোন ঔষধ অনুকূল নাও হতে পারে। অথচ হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম না কারো নিকট থেকে চিকিৎসাবিদ্যা শিখেছেন, না কারো নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এতদ্সত্ত্বেও সমস্ত ঔষধের নাম, ওইগুলো ব্যবহারের নিয়ম-পদ্ধতি, সেগুলোর উপকারিতা ইত্যাদি এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ আলী সীনা ও প্লেটোর চিকিৎসা বিদ্যা ও এর উপর ক্বোরবান!
৩. তদুপরি এটাও জানা গেলো যে, যাদুর প্রভাব সম্মানিত নবীগণ আলায়হিমুস্ সালাম-এর হৃদয় ও বিবেকের উপর পড়তে পারে না। অবশ্য শরীর মুবারকের উপর পড়তে পারে। এটা নুবূয়তের শানের পরিপন্থিও নয়। সুতরাং তরবারি, বিষ ও বিষাক্ত পশুর প্রভাবও তাঁদের বরকতময় শরীরগুলোর উপর পড়ে। এভাবে খাদ্য, ঔষধ ও পানি ইত্যাদির উপকারও তাঁরা পেয়ে থাকেন। অনুরূপ, অনায়াসলবদ্ধ প্রভাবও যা প্রকাশ পেয়ে থাকে, তাও নুবূয়তের শানের বিপরীত নয়। কেউ কেউ বলে, ‘‘হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর লাঠির মোকাবেলায় যাদুকরদের যাদু পরাজিত হয়েছিল। হুযূর-ই আকরামের উপর এ যাদুর প্রভাব পড়লো কেন? তিনি তো হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম অপেক্ষা উত্তম।’’ এর জবাব এ যে, ওখানে যাদুর সাথে মোকাবেলা ছিলো, আর হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর লাঠির মু’জিযা বিজয়ী হয়েছিলো। এখানে কোন মু’জিযার মোকাবেলা ছিলো না, তাছাড়া, ওই যাদুও হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর খেয়াল বা ধারণার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। যেমন এরশাদ হয়েছে-
فَاِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ اِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ اَنَّهَا تَسْعى
তরজমা: যখনই তাদের দড়িগুলো ও লাঠিগুলো তাদের যাদুর জোরে তাঁর ধারণায় ছুটাছুটি করছে বলে মনে হলো।
[সূরা ত্বোয়াহা: আয়াত-৬৬]
৪. এ থেকে বুঝা গেলো যে, রোগব্যাধি, যাদু ও বদ-নজর ইত্যাদি দূরীভুত করার জন্য দো‘আসমূহ ও ক্বোরআনের আয়াতসমূহ পড়ে দম-ফুঁক করা দুরস্ত আছে। এভাবে, তাবিজ ইত্যাদিও জায়েয। [ফাতাওয়া-ই শামী: ৫ম খন্ড]
অবশ্য যেসব মন্ত্রে শির্কের বচন থাকে, অথবা অন্য কোন ভাষার শব্দাবলি থাকে, যেগুলোর অর্থ আমাদের জানা নেই যে, সেগুলোতে শির্কের কথা বা বচন আছে কিনা! ওইগুলো দ্বারা চিকিৎসা করা হারাম। অনুরূপ, ক্বোরআনী আয়াতসমূহ রক্ত দ্বারা তাবিযে লিখা অথবা ক্বোরআনী তারতীব (বিন্যাস)-এর বিপরীত লেখা, অথবা তাবিযে লিখে পা কিংবা জুতাতে বাঁধা, কিংবা তাতে জুতা মারা হারাম। কারণ তাতে ক্বোরআনের হরফগুলোর প্রতি অবমাননা করা হয়।
মাসআলা: তাবিয লিখে এবং সেটার উপর দম করে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয, যদিও তাতে ক্বোরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করা হয়, অথবা ক্বোরআনের সূরা পড়ে দম করা হয়। কারণ, এটাও তো এক প্রকার চিকিৎসা করা। [সূত্র: মেশকাত, ফাতাওয়া-ই শামী:১ম খন্ড, ইত্যাদি]
মোটকথা, এ দু’টি সূরা (সূলা ফালাক্ব ও সূরা নাস) হুযূর মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর না’ত বা প্রশংসাই। [শানে হাবীবুর রহমান উর্দু ভার্ষণ থেকে গৃহীত]
হুযূর-ই আকরামের হামদ
আল্লাহর দরবারে মাক্ববূল হামদ
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন- اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ
তরজমা: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলারই যিনি মালিক সমস্ত জাহানের। [সূরা ফাতিহা: আয়াত ১]
এ পবিত্র সূরায় আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা ও বান্দাদের দো‘আর শিক্ষা দেয়া হয়েছে, কিন্তু এ’তে হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অতি উচ্চ পর্যায়ের প্রশংসাও রয়েছে। কারণ, ‘আলহামদু’-এর মধ্যে ‘আলিফ লাম’ (الف لام) কে ‘ইসতিগ্রা-ক্বী’ (استغراقى) সাব্যস্ত করা হয়, তবে অর্থ হবে ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই’। অর্থাৎ দুনিয়ায় যে কেউই কারো প্রশংসা কখনো করে, যে কোন নি’মাতের শুকরিয়া করে, তা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলারই প্রশংসা হবে। যার মধ্যে যে কোন গুণই থাকুক না কেন, তাতো আল্লাহ্রই প্রদত্ত। কোন জিনিসের প্রশংসা বাস্তবিক পক্ষে প্রস্তুতকারীরই প্রশংসা।
অন্য অর্থ এটাও হতে পারে যে, ওই খাস প্রশংসা আল্লাহ্ তা‘আলারই, তখন ‘আলিফ লা-ম’ (الف لام) হবে ‘আহাদী’ (عهدى); অর্থাৎ কোন প্রশংসা আল্লাহ্ তা‘আলারই? তা হচ্ছে ওই প্রশংসা, যা হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর মুখ মুবারক থেকে বের হয়, অথবা তাঁর নিকট শিখে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করবে। তখন অর্থ দাঁড়াবে আল্লাহর প্রশংসা যে-ই করুক না কেন, কিন্তু মাক্ববূল (গ্রহণযোগ্য) প্রশংসা হবে সেটাই, যা মাহবূব আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম করবেন। অথবা মাহবূব আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম বলার ভিত্তিতে করবে। [রূহুল বয়ান]
একারণেই, আজ যদি গোটা জীবন কাফিরগণ আল্লাহর প্রশংসা করে, তা একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা, তারা গ্রহণযোগ্য প্রশংসা করেনি, যা হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বাতলানো ছিলো না।
আর এজন্য ক্বিয়ামতের দিনে لواء حمد (প্রশংসা ঝাণ্ডা) হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালামকেই দেওয়া হবে।
শাফা‘আতের হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘মহান রব আমাকে তাঁর খাস খাস হাম্দ সম্পর্কে অবহিত করবেন, যেগুলো দ্বারা আমি আল্লাহর হাম্দ (প্রশংসা) করবো।’’ মোটকথা দুনিয়ায় তাঁর প্রশংসাই মাক্ববূল (গ্রহণযোগ্য) আর আখিরাতেও। এ কারণে হুযূরই আকরামের নাম শরীফ ‘আহমদ’ অর্থ আপন রবের খুব প্রশংসাকারী; আর মহান রবের নাম ‘মাহমূদ’। অর্থাৎ মাহবূবের শ্রশংসিত।
অথবা এ আয়াতের অর্থ- পরিপূর্ণ প্রশংসা তো আল্লাহর-ই প্রশংসা। অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টি আমার হাবীবের প্রশংসা করে, কিন্তু তিনি যেমন প্রশংসা করা চাই তেমন প্রশংসাকৃত (মুহাম্মদ) কার প্রশংসার কারণে?
আল্লাহ্ তা‘আলারই। আর আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্র নাম হচ্ছে ‘হামেদ’ (প্রশংসাকারী)। তিনি কার প্রশংসাকারী? তিনি হলেন আপন মুহাম্মদ (প্রশংসাকৃত) এরই। সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।
সুতরাং এ আয়াত শরীফ থেকে যে পরিমাণ না’ত শরীফ মাহবূব-ই দু’আলমের প্রমাণিত হয়েছে, তাতে প্রকাশিত ও সুস্পষ্ট। এভাবে এ সূরার প্রতিটি আয়াত থেকে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর না’ত শরীফ প্রকাশ পাচ্ছে।
তাক্বলীদ করা ওয়াজিব
আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমায়েছেন-
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَঙ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
তরজমা: আমাদেরকে সোজা পথে চালান, তাদেরই পথে, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন।
[সূরা ফাতিহা: আয়াত- ৬]
এ আয়াত শরীফ থেকে একথা প্রমাণিত হলো যে, ইমামগণের তাক্বলীদ (অনুসরণ) করা আমাদের উপর ফরয। কেননা, এসব হযরত ‘ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ’ (নি’মাত প্রাপ্তগণ)-এর অন্তর্ভুক্ত। এভাবেই সমস্ত উম্মত, আলিমগণ, ওলীগণ, মুহাদ্দিসগণ, মুফাস্সিরগণ এবং ফক্বীহগণ তাক্বলীদ করেছেন। এখানে তাক্বলীদ (মাযহাবের অনুসরণ)কে অস্বীকার করা, তাঁদের রাস্তা ব্যতীত অন্য কারো রাস্তা অবলম্বন করার নামান্তর মাত্র। এ মাসআলার বিস্তারিত বিবরণ ‘জা’আল হক্বক্বু ওয়া যাহাক্বাল বাত্বিলু’ (সত্য সমাগত বাতিল অপসৃত)-এর মধ্যে করা হয়েছে। আল্লাহ্ খাতিমাহ্ বিল খায়র নসীব করুন। আ-মী-ন!
এ আয়াত শরীফও হুযূর-ই আনওয়ার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট না’ত শরীফ। এ’তে মুসলমানদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা এ দো’আ চাও- ‘‘হে খোদা! আমাদেরকে সোজাপথে চালান! তাদেরই পথে, যাদের উপর আপনি ইহসান করেছেন।
উল্লেখ্য, ‘সোজা রাস্তা’ হচ্ছে দ্বীন-ই ইসলাম। আর দ্বীন ইসলাম হচ্ছে হুযূর মোস্তফার অনুসরণের নাম। পরবর্তী আয়াতে এটাকে আরো স্পষ্ট করা হয়েছে। তাও এভাবে যে, ওই রাস্তা হচ্ছে সেটাই যার উপর অনুগ্রহপ্রাপ্তগণ চলেছেন। আর যার উপর সর্বাপেক্ষা বড় অনুগ্রহ করেছেন, তিনি হলেন হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। সুতরাং মহান রব মুসলমানদেরকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, ‘তোমরা আমার নিকট এ দো’আ চাও- হে খোদা! আমাদেরকে আপনার মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পদাঙ্ক অনুসরণের সামর্থ দিন, এটার উপর কায়েম রাখুন। এটার উপরই খাতিমাহ্ নসীব করুন। আ-মী-ন।