মাহে রজবের ফযীলত ও আমল-
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী >
মাহে রজব হিজরী বর্ষের ৭ম মাস। পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে এ মাসের বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বারো মাসের মধ্যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ ۚ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ ۚ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ“আসমান-জমিনের সৃষ্টি ও সূচনা লগ্ন হতেই আল্লাহর বিধান মতে মাসের নিশ্চিত সংখ্যা বারটি। তার মাঝে চারটি সম্মানিত। এ অমোঘ ও শাশ্বত বিধান; সুতরাং এর মাঝে তোমরা (অত্যাচার-পাপাচারে লিপ্ত হয়ে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না। তোমরা সম্মিলিতভাবে মুশরিকদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হও, যেভাবে তারা সম্মিলিতভাবে তোমাদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।’’ (তওবা-৩৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ ۗ“আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। (সূরা কাসাস : ৬৮) অর্থাৎ স্বীয় সৃষ্ট বস্তু হতে কিছু মনোনীত করেন, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার ঘোষণা দেন। যেমন তিনি মনোনীত করেছেন কয়েকটি দিন, কয়েকটি মাস; সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা প্রদান করেছেন অন্য সব দিন ও মাসের উপর। এই চারটি সম্মানিত মাসের একটি হল রজব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ , عَنْ أَبِيهِ , رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” أَلَا إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ , السَّنَةَ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا , مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ , ثَلاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ؛ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ ، وَرَجَبٌ شَهْرُ مُضَرَ بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ( ) ”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বারো মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক: যিলক্বদ, যিলহজ্ব, মহররম আর চতুর্থটি হল রজব মুদার, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস।’( )
উলামায়ে কেরাম বলেছেন, আশহুরে হুরুমের এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যতœবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তাওফীক হয়। আর আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য মাসেও গুনাহ পরিহার করা সহজ হয়।( ) কিংবা তাকে হুরুম বলা হয় এ কারণে যে, অন্যান্য মাসের নিষিদ্ধ কর্মের তুলনায় এ মাসের নিষিদ্ধ কর্ম অধিক দূষণীয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ “হে মুমিনগণ,আল্লাহর নিদর্শনসমূহ (নিষিদ্ধ বস্তু) হালাল মনে করো না এবং সম্মানিত মাসসমূহকে।” (মায়েদা-২) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার সংরক্ষিত, নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ-যেগুলোকে তিনি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অনাধিকার চর্চা হতে বারণ করেছেন, সেগুলোকে তোমরা হালাল মনে কর না। যার ভেতর ভ্রান্ত বিশ্বাস, নিষিদ্ধ-কাজ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ ۚ “এতে তোমরা নিজেদের উপর অত্যাচার (ক্ষতিসাধন) করো না।” (সূরা তাওবা : ৩৬) অর্থাৎ সম্মানিত মাস গুলোতে।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা এ মাস গুলোকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন, তাই এর সম্মান যথাযথ রক্ষা করা এবং এর মর্যাদা ও পবিত্রতার লক্ষ্য করত: এতে কোন গুনাহে লিপ্ত না হওয়া। তদুপরি জমানার পবিত্রতার কারণে, অপরাধ হয় জঘন্য ও মারাত্মক। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত আয়াতের মাধ্যমে নিজেদের উপর জুলুম না করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় স্বীয় নফ্সের উপর জুলুম করা বা অন্য কোন গুনাহে জড়িত হওয়া, সব মাসেই হারাম ও নিষিদ্ধ।
নামকরণ
‘কামূস’ নামক প্রসিদ্ধ অভিধানে রাজাব’র অর্থ লিখেছেন- ‘ভীতিপ্রদর্শন করা’, ‘সম্মান করা’। এ থেকে ‘রজব শব্দের উৎপত্তি। আরববাসীগণ এ মাসের প্রতি সম্মান করে আসতো। আল্লামা জাযারী তাঁর ‘নিহায়াহ’য় লিখেছেন- ‘তারজীব’ মানে ‘তা’যীম করা’। এ কারণে আরববাসীগণ রজব মাসকে সম্মান করতো। এ মাসকে ‘রজব-ই মুদ্বার (মুদ্বার গোত্রের রজব মাস)ও বলা হতো।
মাহে রজবের ফযীলত
জামে’উল কবীর’- এ মাহে রজবের বহু ফযিলত ও রজব মাসের আমল সমূহের ফযিলত উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
এক. আবুল ফাতহ ইবনে ফাওয়ারিস তাঁর ‘আমলী’ নামক কিতাবে হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বরাতে ‘মুরসাল’ সূত্রে লিখেছেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
رَجُب شَهْرُ اللَّهِ وَشَعْبَانَ شهري وَرَمَضَانَ شَهْرُ أمّتي إِنَّ رَجَبًا شَهْرٌ عَظِيمٌ تُضَاعَفُ فِيهِ الْحَسَنَاتُ , فَمَنْ صَامَ يَوْمًا مِنْ رَجَبٍ كَانَ كَصِيَامِ سَنَةٍ , وَمَنْ صَامَ سَبْعَةَ أَيَّامٍ ( )
“রজব আল্লাহর মাস। শা’বান আমার মাস। আর রমযান হচ্ছে আমার উম্মতের মাস। রজব ওই মহান মাস, যাতে নেক কাজগুলোর সাওয়াব বহুগুণ বেশি দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে একদিন রোযা রাখবে, তাকে গোটা বছরের রোযার মতো সাওয়াব দেওয়া হবে।”
দুই. ইমাম রাফে’ঈ সা’ঈদের বর্ণনা লিখেছেন,
والأَصَمُّ: رَجَبٌ لعدم سماع السلاح فيه، وكان أهلُ الجاهلية يُسَمُّونَ رَجَباً شَهْرَ الله الأَصَمَّ؛ قال الخليل: إنما سمي بذلك لأنه كان لا يُسْمَع فيه صوتُ مستغيثٍ ولا حركةُ قتالٍ ولا قَعْقَعةُ سلاح، لأنه من الأشهر الحُرُم
“রজব নিঃসন্দেহে আল্লাহর মাস। সেটাকে বধির (আসাম্ম) এজন্য বলা হয় যে, জাহেলী যুগেও লোকেরা এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ রাখতো এবং নিজেদের হাতিয়ার তুলে রাখতো। লোকেরা এ মাসে নিরাপদে, শান্তিতে থাকতো। সমস্ত রাস্তা নিরাপদ হতো। কেউ কারো ভয়ে ভীত থাকতো না। এ গোটা মাসেই নিরাপত্তা ও শান্তি পরিলক্ষিত হতো। ‘নিহায়াহ’য় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আর যেহেতু এটা সম্মানিত মাস, সেহেতু মানুষের গুণাকে সামনে রেখে এ মাসও ‘বধির’ বলে আখ্যায়িত হতে থাকে।( )
তিন. ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ‘শু’আবুল ঈমান’ এ হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন, “রজব ওই মহান মাস; যাতে আল্লাহ তায়ালা নেক কাজগুলোর সাওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করে দান করেন। বর্ণনায় রয়েছে যে, فَضْلُ شَهْرِ رَجَبٍ عَلَى الشُّهُورِ ، كَفَضْلِ الْقُرْآنِ عَلَى سَائِرِ الْكَلامِ ،কুরআনের মর্যাদা সকল যিকির-আযকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”( )
মাহে রজবের দোয়া
রজব মাস আসলেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি নেকের আশায় রমযানের মত একটি মহিমান্বিত মাস পাওয়ার জন্য নিম্নের দোয়া পাঠ করতেন,
من طريق زَائِدَة بْن أَبِي الرُّقَادِ قَالَ: نا زِيَادٌ النُّمَيْرِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ( )
“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।” অর্থঃ- “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।”( )
রজব মাস রমযানের প্রস্তুতির মাস
রজব মাস থেকেই রমযানের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেয়া হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও রজব মাস থেকেই রমযানের জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। অনেকে এ মাসকে অন্য মাসগুলোর মতো তাৎপর্যহীন ও সাধারণ মনে করেন। আল্লাহ যেসব মাসকে সম্মান দিয়েছেন, মুসলিম হিসেবে আমরা যদি অন্য সাধারণ মাসের সাথে সেগুলোর কোনো কার্যত তফাৎ এমনকি ধারণাও না রাখি, তবে সেটা আল্লাহর নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করার শামিল। রজব ও শাবান উপলক্ষ্যে আমাদের সামনে অনেক কাজ রয়েছে। সামনে রমযান আসছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মহিমান্বিত রজব ও শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করে দেন। রাসূলের উম্মত হিসেবে আমাদেরও এমনটি করা উচিত।
আল্লাহ তাআলার কাছে পবিত্র জীবন কামনার সাথে সাথে আসন্ন রমযানে সুস্থ দেহ, মন ও সুন্দর জীবনের জন্য দোয়া করা দরকার। এ সময় ইবাদত ও তিলাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। চাকরি-বাকরিতে সততা, ব্যবসা-বাণিজ্যে হালাল পথ অনুসরণ করতে হবে। সহায়তা করতে হবে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার কাজে। মসজিদ-মক্তবগুলো আবাদ করতে হবে রোযাদার মুসল্লিদের সুবিধার্থে। তাহলেই কেবল পুণ্যময় মাসগুলোর (রজব, শাবান ও রমযানের) আগমন আমাদের জীবনে সফলতা বয়ে আনবে।
এ মাসদ্বয়ে আমাদের করণীয়
এ মাসদ্বয়ে আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে। {১} অন্য সাধারণ সময়ে কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত রুটিন আমলসূহের ব্যাপারে এ মাসে অতিরিক্ত যতœবান হওয়া। {২} হারাম ক্রিয়াকর্ম পরিত্যাগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, আল্লাহ বলেছেন, فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ ۚ “সম্মানিত মাসসমূহে (পাপাচার করে) নিজের উপর অবিচার করবে না। (তাওবা-৩৬) {৩} যুদ্ধ বিগ্রহ না করা। (সুত্র : সূরা বাকারা ২১৭) যুদ্ধের অবকাশ আমাদের না থাকলেও অন্তত মিনি যুদ্ধ বা ঝগড়াঝাটি থেকে এ মাসে বিরত থাকার বিশেষ প্রচেষ্টা রাখতে পারি।
ইমাম জাফর সাদিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “رَجَبٌ شَهْرُ الِاسْتِغْفَارِ لِأُمَّتِي أَكْثِرُوا فِيهِ الِاسْتِغْفَارَ فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ” “রজব মাস হচ্ছে আমার উম্মতের ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনার মাস। অতএব, এ মাসে অত্যধিক ক্ষমা প্রার্থনা কর, কেননা মহান আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।( )
নফল রোযা: হযরত হাফসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :صِيَامَ عَاشُورَاءَ ، وَالْعَشْرَ ، وَثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ، وَالرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ( )
“চারটি জিনিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই ছাড়তেন না। তা হলো আশুরার রোযা, জিলহজ্বের প্রথম দশকের রোযা, প্রতি আরবি মাসে ৩টি রোযা ও ফজরের আগে দু’রাকাত সুন্নত নামায” (নাসাঈ)। হুযুর আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, রজব মাসের রোযার বহু বড় ফযিলত রয়েছে। আর ২৭ তারিখের রোযার সাওয়াব খুব বেশী। এ রোযার ফলে কবরের আযাব ও দোযখের আগুন থেকে নিরাপদ থাকা যাবে।
হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “রজব মাসের মধ্যে এমন একটি দিন আছে এবং এমন একটি রাত্র আছে, যে ব্যক্তি সেই দিন রোযা রাখবে এবং রাতে ইবাদত করবে তার আমলনামায় একশ’ বছরের রোযা এবং একশ’ বছরের ইবাদতের সওয়াব দেয়া হবে এবং সেই রাত্রেই হচ্ছে ২৭ তারিখ অর্থাৎ ২৬ শে রজব দিবাগত রাত শবে মি’রাজ এবং দিন হচ্ছে ২৭ তারিখ।” হাদীসে বর্ণিত আছে,
سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّ فِي الْجَنَّةِ نَهْرًا يُقَالُ لَهُ : رَجَبٌ ، أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ ، وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ ، مَنْ صَامَ يَوْمًا مِنْ رَجَبٍ سَقَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ ذَلِكَ النَّهْرِ( ) ”
“বেহেশ্তের মধ্যে একটি নহর আছে যার নাম রজব। তার পানি খুব সাদা এবং খুব ঠান্ডা ও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজবে রোযা রাখবে আল্লাহ পাক তাকে সেই নহর হতে পানি পান করাবেন।” আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশী বেশী রোযা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।”
তাই পাঠকবৃন্দ, আসুন এই মর্যাদাপূর্ণ মাসটিকে আমরা হেয়ালি না করে বরং ইবাদতে মশগুল থেকে আল্লাহ তা’য়ালাকে সন্তুষ্ট করার পাশাপাশি নিজেদেরকেও সওয়াবের অধিকারী করে তুলি। নিজের গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাই, যাতে আমরা আল্লাহর খাছ বান্দা হয়ে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে ইন্তেকাল করতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন, আমিন।
ঐতিহাসিক ঘটনার মাস
জাতি রজবের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বে-খেয়াল হয়ে পড়েছে। ইতিহাস বিচ্যুতির কারনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত মুসলমান ইসলামের ইতিহাস থেকে। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ‘মি’রাজ’ সংঘটিত হয়েছিল। মি‘রাজ ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরা নবুওয়াতের ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কোন নবী এই সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। আর এ কারণেই হুযুর-ই আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রেষ্ঠ নবী। এ মি‘রাজ রজনীতেই মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হয়।
এ মাসের ৬ (ছয়) রজব, ৬৩৩ হিজরী উপমহাদেশের মহান আধ্যাত্মিক সম্রাট হুয়ূর গরীব নাওয়ায হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী হাসান সানজারী আজমিরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওফাত লাভ করেন। যাঁর বদৌলতে এ অঞ্চলের তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় কোটির কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসে জাহান্নামের চিরস্থায়ী শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করেন। এ উপমহাদেশের বাসিন্দাদের কাছে গরীব নওয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ‘মুহসিনে আযম’ হিসাবে সমাদৃত ও সর্বজন শ্রদ্ধেয়।
তথ্যসূত্র.
– أخرجه البخاري في بدء الخلق (৩১৯৭)، ومسلم في القسامة (১৬৭৯) من حديث أبي بكرة رضي الله عنه.
– সহীহ বুখারী ২/৬৭২, হা-৩১৯৭, মুসলিম-১৬৭৯।
(আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১১১; – ।
– السيوطي في الجامع الصغير২/২৭০ , حـ৪৪১১ كشف الخفاء” (১/ ৫১০) رقم (১৩৫৮)،{شَعْبَانُ شَهْرِي وَرَمَضَانُ شَهْرُ اللَّهِ، وَشَعْبَانُ الْمُطَّهرُ، وَرَمَضَانُ الْمُكَفرُ}قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّ رَجَبًا شَهْرٌ عَظِيمٌ تُضَاعَفُ فِيهِ الْحَسَنَاتُ , فَمَنْ صَامَ يَوْمًا مِنْ رَجَبٍ كَانَ كَصِيَامِ سَنَةٍ , وَمَنْ صَامَ سَبْعَةَ أَيَّامٍ , أُغْلِقَ عَنْهُ سَبْعَةُ أَبْوَابِ جَهَنَّمَ , وَمَنْ صَامَ ثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ رواه الدَّيلمي عن عائشةَ رضي الله عنها، جامع المسانيد والمراسيل
– [মা-সাবাতা বিস্সুন্নাহ ফী আইয়্যামিস সানাহ]
– [كتاب كشف الخفاء ২ / ১১০ للعجلوني طبعة مؤسسة الرسالة لعام ১৪০৫هـ].و [كتاب المصنوع لعلي بن سلطان القاري ১ / ১২৮ طبعة مكتبة الرشد لعام ১৪০৪هـ.
– ) روى عبد الله بن الإمام أحمد في “زوائد المسند” (২৩৪৬) والطبراني في “الأوسط” (৩৯৩৯) والبيهقي في “الشعب” (৩৫৩৪) وأبو نعيم في “الحلية” (৬/২৬৯)
– (মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯)
– আন নাওয়াদের-১৭ النوادر: ১৭،
– ( . رواه أحمد والنسائي ) . [ ص: ২৮৩ ] نيل الأوطار গ্ধ كتاب الصيام গ্ধ أبواب صوم التطوع গ্ধ باب صوم عشر ذي الحجة وتأكيد يوم عرفة لغير الحاج, رقم الحديث- ১৭০৭ )
-(رواه أبو محمد الخلال في ” فضل شهر رجب ” ( ১১ / ১ ) و الديلمي ( ১/ ২ / ২৮১ و الأصبهاني في ” الترغيب ” ( ২২৪ / ১ – ২ ))