মুহাম্মদ নাজমুল হোসাইন-পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: রাসূলে পাক’র শানে মিলাদুন্নবী শব্দের স্থলে বর্তমানে কিছু সংখ্যক লোক কোন কোন স্থানে মাওলুদুন্নবী, মাজিউন্নবী ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করছে। উক্ত শব্দগুলোর অর্থ কি? এবং ওই শব্দগুলো ব্যবহার করলে নবী পাকের শান-মান ক্ষুন্ন বা বেআদবী হবে কি না?
উত্তর: সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কেউ কেউ প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শুভাগমনের আরবি শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পায়তারা করছে। তারা মিলাদুন্নবী বা মাওলুদুন্নবী যুগ যুগ ধরে নির্ভরযোগ্য কিতাব ও মুসলিম সমাজে প্রচলিত শব্দের স্থলে ‘মাজিউন্নবী’ শব্দটি ব্যবহার করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। جاء এর ক্রিয়ামূল مجى বা (মাজিউন) শব্দের অর্থ আসা বা এক স্থান হতে অন্য স্থানে আগমন করা। আর মাজিউন্নবীর অর্থ পৃথিবীতে প্রিয়নবীর আসা। শাব্দিক বা অভিধানিক অর্থের দিক দিয়ে তেমন গরমিল না হলেও প্রিয়নবীর (দ.)’র শুভজন্মের সাথে সম্পর্কিত (মাওলাদুন্নবী) যথার্থ শব্দ যা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত মিলাদুন্নবী ও মাওলুদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর স্থলে মাজিউন্নবীর প্রয়োগ ও ব্যবহার পরিভাষার পরিপন্থি। مولد النبى (মাওলুদুন্নবী) বা ميلاد النبى (মিলাদুন্নবী) শব্দের অর্থ প্রিয়নবীর পৃথিবীর বুকে মা আমেনার কোলে শুভ জন্ম বা শুভাগমন করার অর্থ প্রকাশ পায় যা কিন্তু مجئ النبى (নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এসেছেন) শব্দটি অর্থের দিক দিয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়ালে শুভাগমনের বা শুভজন্মের সাথে পরিপূর্ণভাবে সম্পর্কিত নয় বরং মাজিউন্নবীকে পক্ষান্তরে ঈদে মিলাদুন্নবীর কাউন্টার (বিরোধিতা) হিসেবে প্রচার করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বিধায় ‘মাজিউন্নবী’ (দ.) প্রয়োগ বা ব্যবহার না করে মিলাদুন্নবী বা মাওলুদুন্নবী ব্যবহার করাই উত্তম ও প্রচলিতপন্থা।
সুতরাং প্রিয়নবীর শুভাগমনের বা শুভজন্মের মাস রবিউল আউয়ালের সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী শব্দটির প্রয়োগ ও ব্যবহার অধিক যুক্তিযুক্ত যথাযথ। এটাও উল্লেখ্য যে, যুগ যুগ ধরে মুহাক্কিক্ব ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও বুজর্গানে দ্বীন কর্তৃক ক্বোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে সমর্থিত ও সর্বত্র প্রচলিত ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পরিবর্তে ‘মাজিউন্নবী’ নামে মাহফিল আয়োজন করা বা কোন কর্মসূচি গ্রহণ করার পেছনে কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে কি না? তাও খতিয়ে দেখার বিষয়। তবে এসব কর্মকান্ডে সরল সোজা ও সাধারণ মুসলমান ফিতনা-ফ্যাসাদের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশী। তাই যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ও ক্বোরআন-সুন্নাহ্ সমর্থিত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আয়োজন যথার্থ ও উত্তম তরিকা- যাকে পবিত্র হাদীসের ভাষায় সুন্নাতে হাসানা বলা হয়েছে। মাওলুদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। আরব দেশ সহ বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মিলাদুন্নবী ও মাওলুদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উভয় শব্দের প্রচলন স্বীকৃত। জামে তিরমিযীর ২য় খন্ডে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নামে শিরোনাম অধ্যায়ও রচনা করা হয়েছে। কিন্তু ‘মাজিউন্নবী’ নামে হাদিসের কোন নির্ভরযোগ্য কিতাবে কোন বাব বা অধ্যায় রচনা করা হয় নাই। সুতরাং মিলাদুন্নবী বা মাওলুদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যবহার ও প্রয়োগই যথার্থ ও প্রচলিত।