প্রশ্ন করেছেন মুহাম্মদ মিযানুর রহমান-
শিক্ষার্থী: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করা, খাওয়া-দাওয়া করা যাবে কিনা? ইসলামী শরীয়তের আলোকে জানানোর বিনীত আবেদন রইল।
উত্তর: মুসলিম জীবনের যাবতীয় আচার-আচরণ, চলা-ফেরা হওয়া উচিত একমাত্র মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টির জন্যে। প্রকৃত মুমিনের সামাজিক জীবন যাপনও হতে হবে ইসলামী শরীয়ত সম্মত ও ইসলামী শিষ্টাচারপূর্ণ। পার্থিব এই জীবনে চলা-ফেরা করতে গিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ হয় বিধর্মী তথা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সহ কাফির-মুশরিকের সাথে। তবে এই সুযোগে বা অজুহাতে কাফির-মুশরিকদের সাথে পার্থিব প্রয়োজনীয় লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ছাড়া তাদের সাথে সদা-সর্বদা উঠা-বসা, চলা-ফেরা, খাওয়া-দাওয়া ও বন্ধুত্ব করা ইত্যাদি একজন মুসলমানের জন্য জঘন্যতম অপরাধ। মহান আল্লাহ্ তা’আলা এ প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআনে ইরশাদ করেছেন-واما ينسينك الشيطان فلا تقعُد بعد الذكرى مع القوم الظالمين-
অর্থাৎ- শয়তান যদি তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, সুতরাং স্মরণ হওয়া মাত্র-ই জালিমদের (কাফিরদের) সাথে বসো না। [সূরা আনআম: ৬৮]
পবিত্র ক্বোরআন শরীফের এ আয়াতে করীমায় মহান আল্লাহ্ কাফিরদেরকে জালিম সম্প্রদায় বলে উল্লেখ করেছেন। অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন-فمن اظلمُ مِمّن كذب على الله كذب بالصدق اذاجائه اَلَيْسَ فى جهنم مثوى للكفرين-অর্থাৎ- ‘তার চেয়ে বড় জালিম কে আছে? যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে এবং তার কাছে সত্য আসার পর সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দোযখ কি কাফিরদের ঠিকানা নয়? অবশ্যই। [সূরা জুমা: ৩২]
উপরোক্ত আয়াতে পাকের আলোকে বুঝা যায় যে, কাফির ও অমুসলিমগণ হল বড় জালিম। আর ক্বোরআন-সুন্নাহ্র অনেক স্থানে জালিমদের সাথে অপ্রয়োজনীয় ওঠাবসা করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করাতো আরো মারাত্মক অপরাধ। বেদ্বীনদের সাথে বেশী মাখা-মাখি ও বন্ধুত্ব বেঈমানীর দিকে নিয়ে যায়।
তাছাড়া প্রিয়নবী হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-من جامع المشرك وسكن معه فانه مثله- অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মুশরিকদের সাথে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মিলিত হয়েছে এবং তার সাথে সহাবস্থান করেছে সে ওই মুশরিকদের অনুরূপ। [আবু দাঊদ]
হাদীসে পাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন-لاتصاحب الامؤمنأ ولايأكل معك الاتقى- অর্থাৎ- ঈমানদার ছাড়া অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করো না, আর তোমার খাদ্য নেক্কার মুমিন ছাড়া অন্য কেউ যেন না খায়। [আহমদ ও তিরমিযী শরীফ]
অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, কাফির মুসলিম বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এক সাথে পানাহার করা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাস ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি করা দ্বীন ও ঈমানের বেলায় অনেক ক্ষতিকর। আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব হত্যাকারী বিষতুল্য। মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন-ومَنْ يتولّهم منكم فانّه منهم-
অর্থাৎ- তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। [আল ক্বোরআন]
প্রিয়নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন-المرء مع من اَحبّ-অর্থাৎ- মানুষ যার সাথে বন্ধুত্ব রাখে তার সাথে হাশর-নশর হবে। [সহীহ বুখারী শরীফ]
সুতরাং হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ সকল বেদ্বীন, কাফির-মুশরিকের সাথে বন্ধুত্ব করা নাজায়েয ও গুনাহ। হ্য্যাঁ পার্থিব লেন-দেন, ব্যবস্যা-বাণিজ্যের স্বার্থে তাদের সাথে প্রকাশ্যে সদ্ভাব বজায় রাখা জায়েয। হিন্দু-বৌদ্ধসহ সকল কাফির-মুশরিকদের জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়া নাজায়েয, হারাম। এ ছাড়া অন্যান্য হালাল ও পবিত্র বস্তু চা-নাস্তা-ফল-ফ্রুট ইত্যাদি তাদের ঘরে দোকানে বা অফিসে খাওয়া বা গ্রহণ করা প্রয়োজন বশত: জায়েয ও বৈধ। তবে সাধ্য অনুযায়ী বি-ধর্মীদের ঘরে খাওয়া-দাওয়া ও ওঠা-বসা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাই উত্তম পন্থা ও নিরাপদ।
কাফির ও বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না করা প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআন মজীদে মহান আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন-لايتخذ للمؤمنون الكافرين اوليأء من دون المؤمنين فمن يَفْعَلْ ذالك فليس من الله فى شيئ الاّ ان تتقوا مِنْهُمْ تقاة- الاية-অর্থাৎ মুমিন কাফিরদেরকে (বাহ্যিক লেন-দেন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে) বন্ধু বানাতে পারে না মুমিনকে বাদ দিয়ে, অতঃপর যে (কোন মুমিন) এ রকম করবে অর্থাৎ- মুমিনকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু বানাবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না। [সূরা আলে ইমরান: আয়াত-২৮]
সুতরাং হিন্দু, বৌদ্ধ তথা যে কোন কাফির-মুশরিক ও বিধর্মীদের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে না এবং তাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া ও আহার গ্রহণ করা সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি। এটাই ক্বোরআন-সুন্নাহ্ তথা ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা।
[সহীহ বুখারী শরীফ, জামে তিরমিযী, সুনানে আবু দাঊদ, সুনানে আহমদ ও যুগজিজ্ঞাসা ইত্যাদি]