শানে রিসালত -মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান
হুযূর-ই আকরাম সৃষ্ট না হলে আসমানসমূহ সৃষ্ট হতো না
আলোচ্য দাবীটির উৎস-প্রমাণ হচ্ছে ‘মাশহুর হাদীস’ لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমান- এয়া রসূলাল্লাহ্! আপনি না হলে আমি আসমানসমূহ সৃষ্টি করতাম না। [আল আসারুল মরফূ‘আহ্: পৃ. ৩৫]
খালেদ বযমী প্রমুখ এ হাদীস শরীফের ব্যাকরণগত ও বর্ণনাগত দিক নিয়ে অনেকটা উদ্ভট আলোচনা করতে গিয়ে হাদীস শরীফটির বিশুদ্ধতা নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করলেও আমাদের নির্ভরযোগ্য ইমাম ও বিজ্ঞ ওলামা-ই কেরামের মতে হাদীস শরীফটির অতি মাত্রায় গ্রহণযোগ্য এবং উপরোক্ত দাবী একেবারে সঠিক।
আমি এ নিবন্ধে প্রথমে আরবী ব্যাকরণ অনুসারে হাদীস শরীফটি বিশুদ্ধতার বিষয়টি আলোচনা করবো, তারপর মুহাদ্দিসীন ও বিজ্ঞ ওলামা-ই কেরামের বর্ণনাদি উল্লেখ করার প্রয়াস পাবো- ইনশা-আল্লাহ্!
হাদীস শরীফটির تركيب نحوى (ব্যাকরণগত বিন্যাস) নি¤œরূপঃ এ হাদীস শরীফে لوْلَا -এর পর ضمير مجرور متصل উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটা জায়েয। কেননা, لَوْلاَ -এর পর مذكور ـ مبتدا হয় এবং محذوف ـ خبر হয়। আর اسم ظاهر ـ مبتدا ও হয় এবং اسم ضمير ও। আর এ ضمير সাধারণত مرفوع منفصل হয়; কিন্তু কখনো কখনো ضمير متصل ও আনা হয়। আর তখন لَوْلاَ শব্দটা جاره হয়। আর ابتداء ـ مجرور হওয়ার ভিত্তিতে স্থানগতভাবে مرفوع হয়। সুতরাং ইবনে হিশাম আনসারী বলেন, ‘যখন لوْلاَ -এরপর ضمير আনা হয়, তখন ওই مرفوع ضمير হওয়া চাই। যেমন- لَوْ اَنْتُمْ …الخـ আর কখনো কখনো শোনা গেছে لَوْلاَىَ ـ لَوْلاَكَ এবং لَوْلاَهُ ; তবে মুবাররাদ ও সীভওয়াইহ্ নাহভীদ্বয় এর বিরোধিতা করেছেন; কিন্তু বাকী সব নাহভী (جمهور) বলেন, এ لَوْلاَ – جاره এবং ضمير -এর সাথে খাস। যেমন حتى ও كاف -এর خبر – اسم ظاهر এর সাথে খাস। আর এ لَوْلاَ কারো متعلق হয় না এবং সেটার مجرور – ابتداء হওয়ার ভিত্তিতে স্থানগতভাবে مرفوع হয়।
দ্বিতীয়ত, আল্লামা বূ-সীরী আরবী ভাষার প্রসিদ্ধ ‘ক্বসীদা বোর্দাহ’য় لَوْلاَ -এর পরে ضمير مجرور متصل ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন-
لَوْلاَهُ لَمْ تَخْرُجِ الدُّنْيَا مِنَ الْعَدَم
অর্থ: তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) না হলে এ দুনিয়া সেটার অস্তিত্বহীনতা থেকে বের হয়ে আসতো না।
তৃতীয়ত, আরবী ভাষার প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য কবি আবুত্ব ত্বাইয়্যেব মুতানাব্বীর এ পংক্তিতেও তিনি لَوْلاَ -এর পর ضمير مجرور متصل ব্যবহার করেছেন, যা এর পক্ষে এক মজবুত সাক্ষী-
اِلى ذِىْ شِيْمَةَ لشفقت فؤادى
فلولاه لقلت به النبي
[ديوان متنب ـ صفحه ـ ৭২]
এখন বর্ণনা করা যাক হাদীস শরীফের বর্ণনাগত দিকও
প্রথমত, হাদীস বিশারদগণ সুস্পষ্ট অভিমত দিয়েছেন যে, لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ অর্থগত দিক দিয়ে সহীহ্। অবশ্য اَفْلاَكَ শব্দ নিয়ে বর্ণনায় ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ইমাম দায়লামী হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে মারফূ’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন-
اَتَانِىْ جِبْرَائيْلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلاَكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ ـ لَوْلاَكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ وَفِىْ رِوَايَةِ اِبْنِ عَسَاكِر لَوْلاَكَ مَا خَلَقْتُ الدُّنْيَا
[موضوعات كبير ـ صفحه ৫৯]
অর্থ: আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল আসলেন আর বললেন, ‘‘হে মুহাম্মদ! (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম) যদি আপনি না হতেন, তাহলে আমি জান্নাত সৃষ্টি করতাম না, আপনি না হলে আমি দোযখ সৃষ্টি করতাম না।’’ ইবনে আসাকিরের বর্ণনায় আছে, ‘‘যদি আপনি না হতেন, তবে আমি দুনিয়া পয়দা করতাম না।’’
[মাওদ্বূ‘আত-ই কবীর, পৃ. ৫৯]
দ্বিতীয়ত, দায়লামী ‘ফিরদাউস’-এ, আহমদ ক্বাস্তলানী ‘মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’য়, শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী ‘মাদারিজুন্নুবূয়ত’-এ, এবং অনেক মুহাদ্দিস ও ইসলামের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-ই কেরাম নিজ নিজ লিখিত কিতাবে এ হাদীস শরীফকে ভিন্ন ভিন্ন শব্দে উল্লেখ করেছেন এবং সেটাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আর তা থেকে মাসাইল বের করেছেন। এ থেকে মধ্যাহ্ণ সূর্যের ন্যায় একথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, মুহাদ্দিসগণ ও ইসলামের বিজ্ঞ আলিমদের মতে হাদীস لَوْلاَكَ সহীহ এবং প্রমাণিত। এটা বিভিন্ন শব্দ বা বচনে বর্ণিত। অবশ্য কোন বর্ণনায় সরাসরি اَفْلاَك (আসমানসমূহ) শব্দটি পাওয়া না গেলেও উসূলে হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনানুসারে روايه بالمعنى (অর্থ ভিত্তিক বর্ণনা) জায়েয। [দেখুন ‘শরহে নুখবাতুল ফিকর, পৃ. ৬০]
আর যখন افلاك -এর অর্থে سماء শব্দটি হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, তখন سماء অর্থে افلاك -এর রেওয়ায়ত অকাট্যভাবে জায়েয বলে সাব্যস্ত হয়েছে। এ কারণে হাদীস বিশারদগণ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এ বর্ণনা অর্থগত দিক দিয়ে প্রমাণিত আর ইসলামের বড় বড় আলিমগণ সেটাকে افلاك শব্দে বর্ণনা করেছেন।
তৃতীয়ত, এখন দেখুন ওইসব হাদীস শরীফ, যেগুলোতে لولاك -এর সাথে سماء (আসমান) শব্দটি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আল্লামা বোরহান উদ্দীন হালবী বলেছেন-
وذكر صاحب كتاب شفاء الصدور فى مختصره عن على بن ابى طالب رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم عن الله عزوجل قال يا محمد وعزتى وجلالى لولاك لما خلقت ارضى ولاسمائى ولارفعت هذه الخضراء ولابسطت هذه الغبراء ـ
[انسان العيون ـ جلد اول : صفحه ـ [৩৫৭
অর্থ:‘শেফাউস্ সুদূর’ নামক কিতাবের প্রণেতা মহোদয় হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে, তিনি সরকারে দু’আলম আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম থেকে, আর সরকার-ই দু’ আলম আল্লাহ্ জাল্লা শানুহূ থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমাচ্ছেন- ‘হে মুহাম্মদ! আমার নিজের ইয্যাত ও মহত্বের শপথ! যদি আপনি না হতেন, তবে আমি না যমীন সৃষ্টি করতাম, না আসমান এবং না এ নীলাভ ছাদকে বুলন্দ করতাম, না এ মাটির ফরশ বিছাতাম।
আল্লামা ফারসী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন-
وَفِىْ حَدِيْثِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ عِنْدَ الْبَيْهَقِىْ فِىْ دَلاَئِلِه وَالْحَاكِمُ وَصَحَّحَه وَقَوْلُ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالى لِادَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ لَوْلاَ مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ وَرُوِىَ فِىْ حَدِيْثٍ اخَرَ لَوْلاَهُ مَا خَلَقْتُكَ وَلاَ خَلَقْتُ سَمَآءً وَلاَ اَرْضًا ـ
অর্থ:বায়হাক্বী ও হাকিম হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর হাদীসে উল্লেখ করেছেন এবং সেটা সহীহ্ সাব্যস্ত করেছেন, আর আল্লাহ্ আয্যা ওয়া জাল্লা হযরত আদম আলায়হিস্ সালামকে এরশাদ করেন, ‘‘(হযরত) মুহাম্মদ না হতেন, তবে আমি তোমাকে পয়দা করতাম না’’। অন্য এক হাদীস শরীফে আছে- ‘‘যা (হযরত) মুহাম্মদ না হতেন, তবে না আমি তোমাকে পয়দা করতাম, না আসমানকে, না যমীনকে পয়দা করতাম।
[মাত্বালি‘উল মুসাররাত, শরহে দালাইলুল খায়রাত, পৃ. ২৬৪]
আ’লা হযরত ফাযেলে বেরেলভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, ‘‘ইমাম ক্বাস্তলানী ‘মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’য় এবং মিনাহে মুহাম্মাদিয়াহ’য় ‘রেসালাহ্-ই মীলাদ’-এ, ইমাম আল্লামা থেকে উদ্ধৃতকারী, বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম আরয করলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তুমি আমার কুনিয়াৎ ‘আবূ মুহাম্মদ’ (হযরত মুহাম্মদ মোস্তফার পিতা) কেন রেখেছো?’ হুকুম হলো, ‘হে আদম! নিজের শির উঠাও!’’ হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম শির উঠালেন। তিনি সরাসরি আরশের পর্দায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর নূর দেখলেন। আর আরয করলেন, ‘‘হে আল্লাহ! এটা কেমন নূর?’’ এরশাদ করলেন,
هذَا نُوْرُ نَبِىٍّ مِّنْ ذُرِّيَّتِكَ اِسْمُه فِى السَّمَآءِ اَحْمَدُ وَفِى الْاَرْضِ مُحَمَّدٌ لَوْلاَهُ مَا خَلَقْتُ سَمَاءً وَلاَ اَرْضًا ـ
অর্থ: এটা এক নবীরই নূর, যিনি তোমার বংশধর থেকে। তাঁর নাম আসমানগুলোতে ‘আহমদ’ এবং যমীনে ‘মুহাম্মদ’। যদি তিনি না হতেন, তবে আমি না তোমাকে সৃষ্টি করতাম এবং না যমীন ও আসমানকে তৈরী করতাম। [তাজাল্লিউল ইয়াক্বীন: পৃ. ৪০]
আল্লামা আবদুর রহমান সফূরী শাফে‘ঈ লিখেছেন-
عَنْ عَلِىٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لِمَ خُلِقْتَ قَالَ لَمَّا اَوْحى اِلَىَّ رَبِّىى بِمَا اَوحى قُلْتُ يَا رَبِّ لِمَ خَلَقْتَنِىْ قَالَ تَعَالى وَعِزَّتِىْ وَجَلاَلِىْ لَوْلاَكَ مَا خَلَقْتُ اَرْضِىْ وَسَمَائِىْ
অর্থ: হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, আমি আরয করলাম, ‘‘হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে কি জন্য পয়দা করা হয়েছে?’’ হুযূর-ই আক্রাম এরশাদ করেন, ‘‘যখন আল্লাহ্ তা‘আলা আমার প্রতি ওহী করলেন, যা ওহী করার ছিলো, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘আপনি আমাকে কেন পয়দা করেছেন?’’ তিনি এরশাদ করলেন, ‘‘আমায় আমার ইয্যাত ও মহত্বের শপথ! ‘‘আপনাকে পয়দা না করলে, আমি না আসমান পয়দা করতাম, না যমীন। [নুযহাতুল মাজালিস; ২য় খন্ড, পৃ. ১১৯]
যেহেতু افلاك শব্দটি অর্থগত দিয়ে প্রমাণিত, সেহেতু এ হাদীসের سماء এর অর্থে افلاك সহকারে رواية بالمعنى (অর্থ ভিত্তিক বর্ণনা) অকাট্যভাবে জায়েয সাব্যস্ত হলো।
ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী আলায়হির রাহমাহ্ বলেন-
سر حديث قدسى “لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ كه درشان ختم الرسول واقع است عليهم الصلواة وَالتَّسْلِيْمات اينجا بايد جست
অর্থঃ হাদীসে ক্বুদসী ‘লাউলা-কা লামা খালাক্বতুল আফলাক’ (আপনি না হলে আমি আসমানসমূহ সৃষ্টি করতাম না) যা হুযূর খাতমুর রসূল (সর্বশেষ রসূল) সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে এসেছে, সেটার গোপন রহস্যও এখানে জেনে রাখা দরকার।
[মাক্বতূবাত, দপ্তরে সুয়াম: হিস্সা নাহুম: মাক্বতূব-২২, পৃ. ১৫৫]
এ হাদীস শরীফকে হযরত শায়খ আহমদ সেরহিন্দী আলায়হির রাহমাহ্ তাঁর মাকতূবাত: দপ্তরে সুয়াম: হিসসা-ই নাহুম: মাকতূম ১২৪, পৃ. ১৭৬-এও উল্লেখ করেছেন। শায়খ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির যেই জ্ঞানগত ও গবেষণাগত উচ্চ মর্যাদা রয়েছে, তা আপন-পর সবার নিকট স্বীকৃত। আর ‘মাকতূবাত’-এ শায়খের এ হাদীস শরীফকে কয়েকবার উল্লেখ করা এবং তা থেকে দলীল গ্রহণ করা এ বিষয়ে মধ্যাহ্ণসূর্যের চেয়েও সুস্পষ্ট দলীল যে, তাঁর মতে হাদীস- لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ অর্থগত দিক দিয়ে সহীহ্ (বিশুদ্ধ) ও প্রমাণিত।
আল্লামা মাহমূদ আলূসী বাগদাদী আলায়হির রাহমাহ্ বলেন-
وَالتَّعْيِيْنُ الْاَوَّلُ الْمُشَارُ اِلَيْهِ بِقَوْلِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَالِه وَسَلَّمَ اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرَ نَبِيِّكَ يَا جَابِرُ وَبِوَاسِطَةٍ حَصَلَتِ الْاِفَاقَةُ كَمَا يُشِيْرُ اِلَيْهِ لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ ـ
অর্থ:প্রথম নির্দিষ্টকরণের দিকে হুযূর-ই আক্রামের মহান বাণী ‘হে জাবির! আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূরকে পয়দা করেছেন’ এবং সেটারই মাধ্যমে সৃষ্টি হুঁশ তথা ফয়যপ্রাপ্ত হয়েছে, এর দিকে ইঙ্গিত রয়েছে এবং এদিকে لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ -এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে।
উল্লেখ্য, আল্লামা আলূসীর মতো মহান মুহাক্বক্বিক্ব ও হাদীস বিশ্লেষণকারী কর্তৃক হাদীস لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ কে গ্রহণ করা ও তা থেকে তাঁর দলীল গ্রহণ করা এ হাদীস শরীফ সহীহ্ হবার পক্ষে মজবুত দলীলই।
পরিশেষে, মসলকে দেওবন্দের মুখপাত্র বলে খ্যাত মাওলানা যুলফিকার আলী লিখেছেন-
وَقَوْلُه لَوْلاَهُ اِقْتِبَاسٌ مِنْ حَدِيْثِ لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ
অর্থাৎ আল্লামা বূ-সীরীর বাণী- لَوْلاَهُ হাদীস- لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ থেকেই গৃহীত।
[‘ইত্বরুল ওয়ারদাহ্ শরহে ক্বসীদাহ্ বোর্দাহ: পৃ. ১৭, ২৫]
উল্লেখ্য, মাওলানা যুলফিকার আলীর উক্ত মন্তব্য দেওবন্দীগণও لَوْلاَكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلاَكَ কে বিশুদ্ধ হাদীস বলে মেনে নিয়েছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়।
উপরোক্ত বিস্তারিত বর্ণনা থেকে একথা মধ্যাহ্ণ সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট হলো যে, হাদীস- لَوْلاَكَ কে اَفلاك শব্দ সহকারে رواية بالمعنى (অর্থ ভিত্তিক বর্ণনা করা), একেবারে জায়েয। আর سماء (আসমান), জান্নাত (বেহেশত), নার (দোযখ) এবং ‘দুনিয়া’-এ শব্দগুলো সহকারে সেটার বর্ণনা সহীহ্। সর্বোপরি, হাদীস- لَوْلاَكَ রেওয়ায়ত, দিয়ায়ত, তারকীব-ই, নাহভী ও ই’রাব প্রত্যেক দিক দিয়ে একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আর একথা সুপ্রতিষ্ঠিত হলো যে, নবী-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম না হলে আল্লাহ্ তা‘আলা আসমান, যমীন, বেহেশত, দোযখ ইত্যাদি কিছুই সৃষ্টি করতেন না।