রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শিক্ষাদান পদ্ধতি

0
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শিক্ষাদান পদ্ধতি-
ড. মুহাম্মদ লিয়াকত আলী >
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল অতুলনীয়। যা আমাদের অনুসরণ ও অনুকরণ জরুরী। তিনি আল্লাহ্র প্রেরিত রাসূল ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আল্লাহ্ তাকে সববিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাকে আমার প্রভূ শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং তিনি আমাকে সর্বোত্তম শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত মুআবিয়া ইব্নুল হাকাম আস্সুলামী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,
مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللهِ مَا كَهَرَنِي وَلَا ضَرَبَنِي وَلَا شَتَمَنِي.
“আমি তার পূর্বে ও পরে তার চেয়ে উত্তম কোন শিক্ষক দেখিনি। আল্লাহ্র শপথ! তিনি (আমার ক্রটির কারণে) আমার প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন, প্রহার ও গালমন্দ করেননি।” তার শিক্ষাদানের ক’টি পদ্ধতি তুলে ধরা হল।
মধ্যম পন্থায় ধীরে ধীরে পাঠদান
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যম গতিতে থেমে থেমে পাঠ দান করতেন। তিনি দ্রুত বলতেন না, ধীরেও বলতেন না। হযরত আবূ বাকরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কি জান, আজ কোন্ দিন? এটি কোন্ মাস? এটি কি যিলহজ মাস নয়? এটি কোন্ শহর?’ প্রতিটি প্রশ্নের পর রাসূলুল্লাহ্ চুপ থাকেন এবং সাহাবায়ে কিরাম উত্তর দেন, ‘আল্লাহ্ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। হযরত আয়িশাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বলেন,
أَلَا يُعْجِبُكَ أَبُو هُرَيْرَةَ جَاءَ فَجَلَسَ إِلَى جَانِبِ حُجْرَتِي يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُسْمِعُنِي ذَلِكَ وَكُنْتُ أُسَبِّحُ، فَقَامَ، قَبْلَ أَنْ أَقْضِيَ سُبْحَتِي وَلَوْ أَدْرَكْتُهُ لَرَدَدْتُ عَلَيْهِ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَسْرُدُ الْحَدِيثَ مِثْلَ سَرْدِكُمْ.
“হযরত আবূ হুরাইরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর আচরণে তুমি কি আশ্চর্য হবে না? তিনি আমার হুজরার নিকটবর্তী হয়ে রাসূলুল্লাহ্র হাদীস আমাকে শুনাতে চেয়েছিলেন আর এ সময় আমি নামাযরত ছিলাম। নামায শেষ হওয়ার পূর্বে তিনি উঠে গেলেন। যদি আমি তাকে পেতাম, বলতাম, রাসূলুল্লালাহ্ সাল্লাল্লাম আপনার ন্যায় দ্রুত কথা বলতেন না।” (তিনি ধীরে ধীরে বলতেন, যাতে সকলে বুঝতে পারে)
কথায় শারীরিক প্রভাব প্রতিফলন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেহ-মনের সমন্বিত ভাষায় শিক্ষা দিতেন। তিনি কোন বিষয়ে আলোচনা করলে, তার শরীরেও এর প্রভাব প্রতিফলিত হত। তিনি যখন জান্নাতের কথা বলতেন, তখন তার দেহে আনন্দের চিহ্ন দেখা যেত। যখন জাহান্নামের কথা বলতেন, চেহারার রং বদলে যেত। হাদীস শরীফে রয়েছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ، وَعَلَا صَوْتُهُ، وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ، حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ
“হযরত জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ্ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন “রাসূলুল্লাহ্ যখন বক্তব্য দিতেন, তার চোখ লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উঁচু হয়ে যেত ও ক্রোধ বৃদ্ধি পেত, যেন তিনি (শত্রু) সেনা সম্পর্কে সতর্ককারী।’ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক সময় কোন বিষয় স্পষ্ট করার জন্য হাত ও মাথা মুবারক দ্বারা ইঙ্গিত করতেন। হযরত সাহ্ল ইব্ন সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
أَنَا وَكَافِلُ اليَتِيمِ فِي الجَنَّةِ هَكَذَا وَقَالَ بِإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى
“আমি ও ইয়াতীম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব, তিনি (হযরত সাহ্ল রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু) বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তর্জনী ও মধ্যমা উভয় আঙ্গুলের দূরত্বের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।” অর্থাৎ রাসূলে করীম ও ইয়াতীমের দায়িত্বগ্রহণকারী ব্যক্তি জান্নাতে খুব কাছাকাছি থাকবেন, তা আঙ্গুলের ইশারায় বুঝিয়েছেন।
রেখাচিত্রের মাধ্যমে বক্তব্য স্পষ্ট করা
ভালভাবে বুঝানোর জন্যে কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখাচিত্রের মাধ্যমে আলোচনা স্পষ্ট করতেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,
خَطَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا مُرَبَّعًا وَخَطَّ خَطًّا فِي الوَسَطِ خَارِجًا مِنْهُ، وَخَطَّ خُطَطًا صِغَارًا إِلَى هَذَا الَّذِي فِي الوَسَطِ مِنْ جَانِبِهِ الَّذِي فِي الوَسَطِ، وَقَالَ هَذَا الإِنْسَانُ، وَهَذَا أَجَلُهُ مُحِيطٌ بِهِ أَوْ قَدْ أَحَاطَ بِهِ وَهَذَا الَّذِي هُوَ خَارِجٌ أَمَلُهُ
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারকোণা দাগ টানেন। এরপর তার মধ্যখানে আরেকটি দাগ দেন, যা তা (চতুর্ভূজ) থেকে বের হয়ে যায়। বের হয়ে যাওয়া দাগটির পাশে ও চতুর্কোণের ভেতরে ছোট ছোট কিছু দাগ দেন। তিনি বলেন, এটি মানুষ। চতুর্কোণের ভেতরের অংশ তার জীবন এবং বের হওয়া অংশটি তার আশা।”
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيلُ اللهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ وَقَالَ هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ ثمَّ قَرَأَ (إِن هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبعُوهُ).
“হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের বুঝানোর জন্য) একটি সরল রেখা টেনে বললেন, এটা আল্লাহ্র পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টেনে বললেন, এগুলোও পথ। এসব পথের প্রত্যেকটিতে শয়তান দাঁড়িয়ে তাদের পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করে। অতঃপর তিনি কুরআন মাজীদের এ আয়াত পাঠ করলেন, “নিশ্চয় এটাই আমার সহজ-সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথ অনুসরণ কর।”
গুরুত্বপূর্ণ কথার পুনরাবৃত্তি
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সর্বোচ্চ তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন। হযরত আনাস ইব্ন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعِيدُ الكَلِمَةَ ثَلاَثًا لِتُعْقَلَ عَنْهُ
“রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথাকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন, যেন তা ভালভাবে বুঝা যায়।”
عَنْ أَبِي سَلَّامٍ، عَنْ رَجُلٍ خَدَمَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا حَدَّثَ حَدِيثًا أَعَادَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
“হযরত আবূ সাল্লাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক খাদিম হতে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন তা তিনবার উল্লেখ করতেন।”
প্রায়োগিক শিক্ষাদান
শিক্ষার কার্যকর মাধ্যম হল প্রাক্টিক্যাল বা প্রায়োগিক শিক্ষা। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ বিষয় সাহাবায়ে কিরামকে নিজে আমল করে শেখাতেন। হযরত মালিক ইব্ন হুওয়াইরিস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,
قَالَ لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন,“তোমরা নামায আদায় কর, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখ।”
প্রশ্নোত্তরে শিক্ষাদান
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক সময় সাহাবায়ে কিরামকে প্রশ্ন করতেন, যাতে তারা জ্ঞান অনুসন্ধানে উৎসাহী হন। হযরত মু‘আয ইব্ন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا مُعَاذُ أَتَدْرِي مَا حَقُّ اللهِ عَلَى العِبَادِ؟ قَالَ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا.
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, হে মু‘আয, তুমি কি জান বান্দার প্রতি আল্লাহ্র হক্ব কী? তিনি বলেন, আল্লাহ্ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বলেন, তার ইবাদত করা এবং তার সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা।”
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষাদানের সময় সাহাবায়ে কিরামের প্রশ্ন গ্রহণ করতেন। হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ أَعْرَابِيًّا عَرَضَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي سَفَرٍ، فَأَخَذَ بِخِطَامِ نَاقَتِهِ، أَوْ بِزِمَامِهَا ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَوْ يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي بِمَا يُقَرِّبُنِي مِنَ الْجَنَّةِ، وَمَا يُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ، قَالَ فَكَفَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ نَظَرَ فِي أَصْحَابِهِ ثُمَّ قَالَ لَقَدْ وُفِّقَ أَوْ لَقَدْ هُدِيَ قَالَ كَيْفَ قُلْتَ؟ قَالَ فَأَعَادَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ، دَعِ النَّاقَةَ.
“এক বেদুইন সফররত অবস্থায় তার উটের লামাগ ধরে রাসূলে করীমকে প্রশ্ন করেন, আমাকে জানিয়ে দিন, কোন্ আমল আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেবে আর কোন্ আমল জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে নেবে? বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্ন শুনে একটু থামেন এবং সাহাবাদের দিকে তাকান। অতঃপর তিনি বলেন, তাকে তাওফীক্ব দেওয়া হয়েছে অথবা তাকে হেদায়েত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কী বললে? বর্ণনাকারী বলেন, সে তার পুনরাবৃত্তি করে। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি আল্লাহ্র ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, নামায আদায় করবে, যাকাত দেবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। উটনি (এর লাগাম) ছেড়ে দাও।”
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি একটু চুপ থেকে সাহাবীদের দিকে তাকিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং প্রশ্নকারীর প্রশংসা করে জ্ঞানার্জনে জানার জন্য প্রশ্নের সম্মতি দেন।
শিক্ষাদানে জ্ঞানপিপাষুু নির্বাচন
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষাদানের জন্য আগ্রহীদের নির্বাচন করতেন। হাদীস শরীফে রয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ يَأْخُذُ مِنِّي خَمْسَ خِصَالٍ فَيَعْمَلُ بِهِنَّ، أَوْ يُعَلِّمُهُنَّ مَنْ يَعْمَلُ بِهِنَّ؟ قَالَ: قُلْتُ أَنَا يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ: فَأَخَذَ بِيَدِي فَعَدَّهُنَّ فِيهَا
“হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কে আমার থেকে পাঁচটি গুণ ধারণ করবে ও তার উপর আমল করবে অথবা আমলইচ্ছুদের তা শিক্ষা দেবে? হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আমি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরেন ও হাতে পাঁচটি বিষয় গণনা করে শিখালেন।”
[ইমাম আহমাদ, প্রাগুক্ত, খ.১৩, পৃ.৪৫৮, হাদীস-৮০৯৫।]
পাঠ পুনরাবৃত্তিতে উদ্বুদ্ধকরণ
কোন কিছু শিখার পর সময়ে সময়ে পুনরাবৃত্তি করা না হলে তা ভুলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এ জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে মেধা ও স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর না করে বার বার পাঠে উদ্বুদ্ধ করতেন। এতে কঠিন বিষয় আয়ত্ব করা যায়। হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
تَعَاهَدُوا القُرْآنَ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنَ الإِبِلِ فِي عُقُلِهَا
“তোমরা কুরআন তিলাওয়াতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখ। সে সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, তা স্মৃতি থেকে উটের চেয়ে দ্রুত পলায়ন করে।”
[ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, খ.৬, পৃ.২৩৮, হাদীস-৫০৩৩।] عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِئْسَ مَا لِأَحَدِهِمْ أَنْ يَقُولَ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ، بَلْ نُسِّيَ وَاسْتَذْكِرُوا القُرْآنَ، فَإِنَّهُ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ.
“হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটা খুব খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক। কেননা তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুত গতিতে চলে যায়।” [প্রাগুক্ত, খ.৬, পৃ.১৯৩, হা.নং-৫০৩২] হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষাদান পদ্ধতিতে ইহকালীন সাফল্য ও পরকালীন মুক্তি রয়েছে। সুতরাং মুসলিম উম্মাহ্কে উভয় জগতের সফলতা অর্জনে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
লেখক: উপাধ্যক্ষ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্ারাসা, চট্টগ্রাম। [email protected]
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •