মাতা পিতার সাথে সদাচরণের গুরুত্ব

0
মাতা পিতার সাথে সদাচরণের গুরুত্ব
অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَآءَ رَجٌلٌ اِلى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ اَحَقَّ بِحُسْنِ صَحَابَتِىْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ اَبُوْكَ ـ
عَنْ اَبِىْ اُمَّامَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ قَالَ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ [رَوَاهُ اِبْنُ مَاجَهْ]
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম! আমার সর্বোত্তম ব্যবহার পাওয়ার হকদার কে? নবীজি বললেন, তোমার মা, লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল অতঃপর কে? রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা, লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, অতঃপর কে? নবীজি বললেন তোমার মা, লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, অতঃপর কে? রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার পিতা। [সহীহ্ বুখারী, হাদীস-৫৯৭১, মুসলিম শরীফ, খন্ড-২, পৃ. ৩১২] হযরত আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সন্তানের উপর মাতা পিতার কি হক রয়েছে? নবীজি বললেন, তারা তোমার বেহেশত ও তারা তোমার জাহান্নাম। [ইবনে মাজাহ্, হাদীস নং-৩৬৬২]

প্রাসঙ্গিক আলোচনা
আলোচ্য হাদীস শরীফ দু’টিতে মাতা পিতার অধিকার ও মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্ ও তদীয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের ভালবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মাতা পিতার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও তাঁদের অধিকার আদায়ের প্রতি ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পিতা মাতার সন্তুষ্টিকে আল্লাহ ও তদীয় রসূলের প্রতি ভালবাসার নিদর্শনরূপে চিত্রিত করা হয়েছে।

মাতা পিতার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আল কুরআনের নির্দেশনা
জান্নাতের পথ সুগম করার জন্য মাতা পিতার মর্যাদা ও অধিকার সম্মান ও মর্যাদার প্রতি সদাসর্বদা সচেষ্ট ও সচেতন থাকার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে নির্দেশ করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে-
وَ قَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًاؕ- اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا(۲۳)وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًاؕ (۲۴)
অর্থঃ তোমার পালন কর্তা আদেশ করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করোনা এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, যদি তোমার সামনে তাদের মধ্যে একজন কিংবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে উহ্ শব্দটিও বলোনা এবং তাদেরকে ধমক দিওনা। আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলবে এবং তাদের জন্য বিনয়ের বাহু বিছিয়ে দাও এবং বলো হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করো যেভাবে তারা উভয়ে আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন।
[সূরা-১৭, বনী ইসরাঈল: আয়াত-২৩-২৪] পবিত্র কুরআনে আরো এরশাদ হয়েছে-
وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْــٴًـا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا
অর্থঃ আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কোন বস্তুকে শরীক করোনা এবং পিতা মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করো। [সূরা- নিসা, আয়াত-৩৬] মহান আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে প্রায় পনের স্থানে আল্লাহর হক বর্ণনা করার সাথে পিতা মাতার প্রতি সদাচরণ করা, শিষ্ঠাচারপূর্ণ উত্তম আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাতা পিতার সেবা ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের পথ সুগম করে দিয়েছেন।
মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত
একদা এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাই। আপনার পরামর্শের জন্য উপস্থিত হয়েছি, নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাতা কি জীবিত আছে? লোকটি উত্তর দিলেন হ্যাঁ, নবীজি এরশাদ করেন-
قَالَ فَالْزِمْهَا فَاِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلُهَا
তোমার মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, যেহেতু জান্নাত তার কদমের নীচে। [মিশকাত শরীফ, পৃ.-২৪১]
 পিতা মাতার অবাধ্য সন্তানের প্রতি নবীজির অসন্তুষ্টি
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
مَلْعُوْنٌ مَنْ عَقَّ وَالِدَيْهِ مَلْعُوْنٌ مَنْ عَقَّ
وَالِدَيْهِ مَلْعُوْنٌ مَنْ عَقَّ وَالِدَيْهِ
অর্থ: যে ব্যক্তি মাতা পিতাকে কষ্ট দেয়, সে অভিশপ্ত। যে ব্যক্তি মাতা পিতাকে কষ্ট দেয়, সে অভিশপ্ত, যে ব্যক্তি মাতা পিতাকে কষ্ট দেয়, সে অভিশপ্ত।
[ফাতওয়ায়ে রজভীয়া, খন্ড-১০ম, পৃ. ৩৯৪, কৃত. ইমাম আহমদ রেযা] পিতা মাতাকে কষ্টদানকারী কোন ব্যক্তির ফরজ, নফল ও অন্য কোন প্রকার আমল আল্লাহ্ তা‘আলা কবুল করেন না। [ফাতাওয়ায়ে রজভীয়্যাহ্, খন্ড-১০ম, পৃ. ৫৮] প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেছেন,
رِضَى الرَّب فِىْ اللوالد وَسَخْطُ الرَّبِّ فِىْ سَخط اللوالد
অর্থঃ পিতা মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। পিতা মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। [মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪১৯]
ক্স হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির বর্ণনা
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরত আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন যে, সাহাবী হযরত আমর ইবনে আস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু নবীজির দরবারে স্বীয় পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেন যে, আমার সন্তান অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকেন, সারা রাত বিনিদ্র রজনী যাপন করে ইবাদত করে ও দিনের বেলায় রোজা পালন করে ইবাদত রিয়াজতের কারণে আমার খিদমত সেবা করার সুযোগ কম পায়, তখন নবীজি এরশাদ করেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতা মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
[আশিয়াতুল লুমআত, খন্ড-৪, পৃ. ১০৫, আনোয়ারুল বয়ান, খন্ড-২, পৃ. ৬১]
পিতা মাতার খিদমত করলে রিযিক বৃদ্ধি পায়
রসূলে করীম রউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
مَنْ سَرَّه اَنْ يَمُرَّ لَهُ فِىْ عُمْرِهِ وَيُزَادُ فِىْ رِزْقِهِ فَلْيَبِرَّ
وَالدِيْهِ وَلِيَصِلْ رِحْمَهُ
অর্থ: যে পছন্দ করে যে, সে দীর্ঘজীবী হউক, তার রিযিক বৃদ্ধি হউক, সে যেন পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করে, ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।
[কাশফুল গুম্মাহ্, পৃ. ২৬, মিশকাত শরীফ, পৃ. ২২১, হুকুকে ওয়ালেদাঈন, পৃ. ১৭, কৃত. ইমাম আহমদ রেযা]
তিন শ্রেণির বান্দার দুআ ফেরত হয় না
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তিন শ্রেণির মানুষের দুআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এক. মজলুমের দুআ. ২. মুসাফিরের দুআ, ৩. পিতা মাতার দুআ সন্তানের জন্য।[তিরমিযী শরীফ, খন্ড-২, পৃ. ১৩]
পিতা মাতাকে কষ্টদানকারী দুনিয়াতেই তার শান্তি
عَنْ اَبِىْ بَكرة رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ الذوب يَغْفِرُ اللهُ مِنْهَا مَاشَاءَ اِلاَّ عُقُوْقُ اللْوَالَدِيْنِ فَاِنَّه يُعَجِّلُ لِصَاحِبِهِ فِى الْحَيَوَةِ قَبْلَ الْمَمَاتِ [رواه البيهقى] অর্থ: হযরত আবু বাকরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মাতা পিতার অবাধ্যতা ছাড়া অন্য যে সকল গুনাহ রয়েছে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে তা থেকে ক্ষমা করে দেন কিন্তু মাতা পিতার অবাধ্যকে আল্লাহ্ মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। [বায়হাক্বী শুআবুল ঈমান, মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪২১]
অন্যের পিতা মাতাকে গালমন্দ করা নিজের পিতা মাতাকে গালি দেওয়ার নামান্তর
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি পিতা মাতাকে গালমন্দ করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, কোনো ব্যক্তি কি তার পিতা মাতাকে গালমন্দ করে? নবীজি বললেন,
نَعَمْ يَسُبُّ اَبَا الرَّجُلِ يَسُبُّ اَبَاهُ وَيثتم اُمُّهُ فيشتم امه
অর্থ: একজন অপরজনের পিতামাতাকে গালি দেয়, তখন সেও ওই লোকের পিতামাতাকে গালমন্দ করে।
[বুখারী শরীফ, খন্ড-২, পৃ. ৮৮৩]
মাতার উপর স্ত্রীকে প্রাধান্য দেওয়া মারাত্মক গুনাহ্
লোকেরা নিজের স্ত্রীর প্ররোচনায় নিজ পিতা মাতাকে গালমন্দ করে এমনকি শারীরিক নির্যাতন করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় অথবা তাঁদেরকে একাকী পরিত্যাগ করে স্ত্রী পুত্র নিয়ে আনন্দে বসবাস করে এমন সন্তানের জন্য বড়ই পরিতাপ। নবীজি এরশাদ করেছেন,
مَنْ فَضِّلَ زَوْجَتُهُ عَلَى اُمِّهِ فَعَلَيْهِ لَعَنَهُ اللهُ
وَمَلَئِكَتِه وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
অর্থ: যে ব্যক্তি নিজ মাতার উপর স্ত্রীকে অগ্রাধিকার দেয় তার উপর আল্লাহর লানত, ফেরেশতাদের ও সকল মুমীনের লানত। [আনোয়ারুল বয়ান: খন্ড-২, পৃ. ৬৯]
মাতা পিতার বন্ধু-বান্ধবীর সাথে সদাচরণ করা
এক আনসারী সাহাবী নবীজির খিদমতে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! পিতা মাতার ইন্তেকালের পর তাদের প্রতি সদাচরণ করার কোন উপায় আছে কি? নবীজি এরশাদ করেন, হ্যাঁ চারটি উপায় আছে।
এক. তাদের জানাযা পড়া, দুই. তাদের মাগফিরাত কামনা করা, তিন. তাদের ওসীয়ত পূর্ণ করা, চার. তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা ও তাঁদের প্রতি সদাচরণ করা। [আবু দাউদ শরীফ, হুকুকে ওয়ালেদাঈন, কৃত. ইমাম আহমদ রেযা]
মাতা পিতার চেহারা মহব্বতের দৃষ্টিতে দেখার সওয়াব
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, পিতা মাতার প্রতি মহব্বতের দৃষ্টিতে দেখলে মকবুল হজ্বের সওয়াব লিপিবদ্ধ হয়। [মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪২১]
মায়ের কদম চুম্বন করার ফযীলত
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী হাদীস বর্ণনা করেছেন, একদা এক ব্যক্তি নবীজির দরবারে আরজ করলেন যে, আমি এ মর্মে মান্নত করেছি যে, যদি আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের হাতে মক্কা মোকাররমার বিজয় দান করেন, আমি কাবা শরীফের চৌকাট চুম্বন করবো। নবীজি বললেন,
فَقَالَ قَبِّلْ قَدْمَىْ اُمُّكَ وَقَدْ وَفَيْتَ نَذْرُكُ
অর্থ: তুমি তোমার মায়ের দু কদমে চুম্বন করো, এতে তোমার মান্নত পূর্ণ হয়ে যাবে। [উমদাতুল কারী, খন্ড-২, পৃ. ৮২]
পিতা মাতার পক্ষ থেকে নফল নামায পড়া
যখন নিজের জন্য নফল নামায পড়েন কিছু নফল নামায তাদের পক্ষ থেকেও পড়–ন তাঁদের রুহে সওয়াব পৌঁছিয়ে দিন। তাঁরাও সওয়াব পাবেন আপনার সওয়াবেও সামান্যতম হ্রাস পাবে না। [হুকুকে ওয়ালেদাঈন, কৃত. ইমাম আহমদ রেযা]
পিতা মাতার কবর জিয়ারত
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পিতা মাতা দু’জনের বা একজনের কবরে জুমাবার দিবসে যিয়ারত করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার গুনাহ্ ক্ষমা করবেন। তার নাম নেক্কার হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। [তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃ. ১৫৪] নবীজি আরো এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি জুমাবারে পিতা মাতা দু’জনের বা একজনের কবর যিয়ারত করবে সূরা ইয়াসিন শরীফ তিলাওয়াত করবে, এতে যতটি অক্ষর রয়েছে তার গণনার সম পরিমাণ গুনাহ্ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেবেন। [ফাতাওয়ায়ে রজভীয়্যাহ্, খন্ড-১০ম, পৃ. ১৯৪]
পিতা মাতা অমুসলিম হলেও সদাচরণ করো
عَنْ اَسْمَاءَ بِنْتِ اَبِىْ بَكَرِ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَدَمَتْ عَلَىَّ اُمِّىْ وَهِىَ مُشْرِكَةٌ فِىْ عَهْدِ قُرَيْشٍ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّ اُمِّىْ قَدَمَتْ عَلَّى وَهِىَ رَاغِبَةٌ اَفَاصِلَهَا قَالَ نَعَمْ صَلَيْهَا [رَواه الْبخارى] অর্থ: হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মা আমার কাছে আসলেন, তিনি ছিলেন (মুশরিকা) (অমুসলিম) এ ঘটনা তখনকার যখন কুরাইশদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি স্থাপিত হয়েছিল, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মা আমার কাছে এসেছেন অথচ তিনি ইসলামের প্রতি অসন্তুষ্ট। সুতরাং আমি কি তার সাথে সদ্ব্যবহার করবো? রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তার সাথে উত্তম আচরণ করো। [বুখারী শরীফ, খন্ড-২, পৃ. ৮৮২] ইসলামী আদর্শ কতই উৎকৃষ্ট, উত্তম ও মানবিক। মাতা পিতা অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও উত্তম মানবিক আচরণের এমন নির্দেশনা অন্য কোন জীবনাদর্শে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সৃষ্টির প্রতি সেবা ও মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে ইসলামের আদর্শ অনন্য ও সমুজ্জ্বল। মহান আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে কথায় কর্মে আচরণে ব্যবহারে প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের আদর্শ নসীব করুন। পিতা মাতার প্রতি সম্মান সদাচরণ ও তাদের সকল প্রকার অধিকারের প্রতি সচেতন থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল, মধ্য হালিশহর, বন্দর, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •