মি’রাজুন্নবী সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিযা- মাওলানা মুহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম

0

আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রত্যেক নবী ও রাসূল আলায়হিমুস্ সালামকে অনেক প্রকারের মু’জিযার অধিকারী করেছেন। সাথে সাথে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা দ্বারা তাঁদেরকে একজনকে আরেকজনের উপর মর্যাদাবান করেছেন। আল্লাহর বাণী-
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ- (البقرة ২৫৩)
অর্থাৎ- এ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। [সূরা বাক্বারাহ: ২৫৩] মহান আল্লাহ্ প্রিয়নবী হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে অগণিত মু’জিযা দান করেছেন। তন্মধ্যে তাঁর নূরানী জীবনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও শীর্ষ মর্যাদাসম্পন্ন মু’জিযা হল দীদারে ইলাহি তথা মি’রাজ। নবূয়ত ও রিসালত প্রকাশ ও বিকাশের জন্য এ মি’রাজরূপী মু’জিযা ছিল অতীব গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কাফির, মুশরিকদের সামনে এ আশ্চর্যজনক ও ব্যতিক্রমধর্মী মি‘রাজ শরীফের ঘটনা দ্বীন ইসলামের সত্যায়নের জন্য এক বিস্ময়কর দলিল হিসেবে প্রমাণবহ। বিশ্ববাসীকে হতবাককারী, বিজ্ঞানময় ও মহামর্যাদাপূর্ণ আসমানীগ্রন্থ ক্বোরআনুল করীম ও শাশ্বত হাদীসে পাকে এর পে অকাট্য প্রমাণাদি রয়েছে। মহানবী হুযূর পুরনূর হযরত আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মি’রাজ শরীফে মহাশক্তির অধিকারী, একক, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়, লা-শারীকা রব পূত:পবিত্র, মহিমান্বিত, সত্তা মহান আল্লাহর সাথে সাাৎ করে নব্বই হাজার একান্ত বাক্যালাপ করে, পাঞ্জেগানা নামায সহ ইসলামের অনেক বিধি-বিধান নিয়ে পৃথিবীতে পুনরায় তাশরীফ নিয়ে আসেন।
মি’রাজ
‘মি’রাজ’ শব্দটি আরবী ‘উরুজ’ থেকে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ ঊর্ধ্বগমন, সিঁড়ি, আরোহনের স্থান বা আরোহনের পদমর্যাদা ইত্যাদি।
আর শরিয়তের পরিভাষায় মি’রাজ হল ‘মহাশক্তির অধিকারী পূত:পবিত্র একক, অদ্বিতীয় লা শরিক সত্তা মহান আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছায় তাঁর নৈকট্য ও সান্নিধ্যে মহানবী হুযূর পুরণূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ঊর্ধ্ব জগতে ভ্রমণের পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়া।’
বিশ্ববিখ্যাত ইমাম, ইমাম তাহাভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, পবিত্র ‘মি’রাজ শরীফ’ বিশ্ব নবীর পূতপবিত্র, বিস্ময়কর, অলৌকিকতাপূর্ণ সবিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং উজ্জ্বল মু‘যিজা, তাঁর নুবূওয়ত ও রিসালতের অকাট্য ও অখণ্ডনীয় দলিল। শুধু এককভাবে বিশ্বকুল সরদার নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকেই দান হয়েছে। মহান আল্লাহ্ পাকের প হতে জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে এ মি’রাজ করানো হয়েছে।
মি’রাজ কখন সংঘটিত হয়েছিল
মি’রাজ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে ওলামা-ই কেরামের কাছে একাধিক অভিমত রয়েছে। তবে অধিকাংশ আলিম নুবূয়ত প্রকাশের এগার বছর পাঁচমাস পর সাতাশে রজবের রাতের শেষ ভাগে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র মি’রাজ সংঘটিত হয়েছে।
মাহে রজবের ২৭ তম রাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর আহ্বানে মক্কা মুর্কারামার পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুক্বাদ্দাসে পৌঁছান বিদ্যুতের গতির চেয়েও দ্রুততম জান্নাতী বাহন বোরাকযোগে। উক্ত মসজিদুল আক্বসায় পৌঁছে ইমামুল আম্বিয়ার ইমামতিতে নামায আদায় করেন সমস্ত নবী ও রাসূলগণ আলায়হিমুস্ সালাম। সেখান থেকে সপ্ত আসমান পরিভ্রমণ করে কুল-কায়েনাতের গূঢ়রহস্যাবলী পর্যবেণপূর্বক সিদ্রাতুল মুন্তাহায় পৌঁছান। তাঁরপর রাসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর যাত্রা শুরু হয় রফরফ নামক কুদরতি বাহনযোগে। এক পর্যায়ে রফরফও থেমে যায়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহাশক্তির অধিকারী লা-শরিক আল্লাহ্ তা‘আলার প্রদত্ত মতাবলে একাকী গমন করেন- লা-মকানের মহান আরশে।
ক্বোরআনের আলোকে মি’রাজ
পবিত্র ক্বোরআনের সূরায়ে ইসরার প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ্ পাক এরশাদ ফরমান-
سُبْحَنَ الَّذِىْ اَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِىْ بَرَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ اَيَتِنَا اِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ-
অর্থাৎ এরশাদ হচ্ছে পরম পবিত্র ও মহামহিম সত্তা স্বীয় প্রিয়তম নূরানী বান্দাকে রাতের অতি অল্প সময়ে মক্কা মুর্কারামার ওই বরকতময় মসজিদ-ই হারাম শরীফ হতে মসজিদে আক্বসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার আশে পাশে আমি অগণিত বরকত ও সমৃদ্ধি রেখেছি, যেন আমি (আল্লাহ্) তাঁকে (মহানবী) আমার কুদরতের বিস্ময়কর ও বিরল নিদর্শনাবলী অবলোকন করাই; নিশ্চয় তিনি পরম মহাশ্রবণকারী, মহাদর্শী। [সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত ১] উপরিউক্ত আয়াতের মর্মার্থ দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর হাবীবকে প্রথমে মসজিদ-ই হারাম থেকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত তারপর সমস্ত আসমানে তারপর আলম-ই লা-মাকানে সশরীরে মি’রাজ করিয়েছেন। এরশাদ ফরমান-
وَالنَّجْمِ اِذَا هَوَا১ مَاضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى২ وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى৩ اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْىٌ يُوْحَى৪ عَلَّمَهُ شَدِيْدُ الْقُوَى৫ ذُومِرَّةٍ فَاسْتَوَى ৬ وَهُوَ بِالْاُفُقِ الْاَعْلَى ৭ ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى৮ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ اَوْاَدْنَى ৯ فَاَوْحَى اِلَى عَبْدِهِ مَااَوْحَى ১০ مَا كَذَبَ الْفُوَادُ مَا رَاى ১১ اَفَتُمَرُوْنَهُ عَلَى مَا يَرى ১২ وَلَقَدْ رَءَاهُ نَزْلَةً اُخْرَى ১৩ عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى ১৪ عِنْدَاهَا جَنَّةُ الْمَاوَى ১৫ اِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى ১৬ مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَاطَغَى ১৭ لَقَدْ رَاَى مِنْ اَيَابِ رَبِّهِ الْكُبْرَى১৮
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ এরশাদ ফরমান- ১. ঐ প্রিয় উজ্জ্বল নত্র (নবীকুল সরদার হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর পূতপবিত্র সত্তা মুবারক’র শপথ! যখন তিনি (হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর মি’রাজ থেকে অবতরণ করেন। তোমরা মুমিনদের মহান সাথী (মুনিব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা অলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর মি’রাজ থেকে অবতরণ করেন। ২. তোমরা মুমিনদের সাথী (মুনিব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) কখনো হেদায়তের সত্য পথ থেকে বিমুখ হননি, না আঁকাবাঁকা পথে চলেছেন, বরং তিনি সর্বদা সরল-সঠিক সিরাতুল মুস্তাকীমের উপর স্থির থাকেন। ৩. এবং তিনি মহান রবের রাসূল, বিধায় কোন কথা প্রবৃত্তি বা নাফস থেকে বলেন না। ৪. তা তো নয়, কিন্তু তিনি যা কিছু বলেন, তা আল্লাহর ওহীই হয়ে থাকে, যা তাঁর বরাবরে নাযিল করা হয়। ৫. তাঁকে শিা দিয়েছেন প্রবল শক্তির অধিকারী তথা মহাশক্তির অধিকারী মহান আল্লাহ্ পাক সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। ৬. শক্তিমান, অতঃপর ঐ জ্যোতি ইচ্ছা করলেন। ৭. আর তিনি উচ্চাকাশের সর্বোচ্চ দিগন্তে ছিলেন। ৮. অতঃপর ঐ জ্যোতি নিকটবর্তী হল তথা মহান আল্লাহ্ আপন হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আপন নৈকট্যের নি’মত প্রদান করে ধন্য করেন। হাবীবের প্রতি নৈকট্য আরো বৃদ্ধি করলেন। ৯. অতঃপর ঐ জ্যোতি ও এ মাহবূবের মধ্যে দু’ধনুক পরিমাণ ব্যবধান রইল বরং তদপোও কম তথা তাঁর প্রিয়তম বান্দা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপন খালিক্ব-মালিক মহান আল্লাহর একক সত্তাকে সচে অবলোকন করে দিদার লাভে ধন্য হয়েছেন। ১০. তখন খালিক্ব-মালিক আপন প্রিয়তম বান্দার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করলেন, যা ওহী করার ছিল। ১১. তাঁর অন্তর হুবহু বলেছে, যা তিনি দেখেছেন। ১২. তবে কি তোমরা (মুশরিকরা) তাঁর প্রিয়তম নূরানী বান্দার সাথে তিনি যা দেখেছেন তাতে বিতর্ক করছ? ১৩. এবং তিনি তো ঐ মহামহিম প্রতিপালককে দু’বার দেখেছেন, মহান আল্লাহ্র দয়া, অনুগ্রহ ও কৃপা মোতাবেক। ১৪. সিদরাতুল মুন্তাহা প্রান্তবর্তী কুলবৃ, যা আল্লাহর নূর দ্বারা আচ্ছাদিত এর নিকটে। ১৫. যার নিকট অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া তথা অবস্থানের জান্নাত। ১৬. যখন বদরী বৃটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত তথা নূর দ্বারা হওয়ার তা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। ১৭. তাঁর দৃষ্টিভ্রম ও ল্যচ্যুত হয়নি। ১৮. নিশ্চয় তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মি’রাজ রজনীতে বিশ্বরাজ্য ও আধ্যাত্মিক জগতের আশ্চর্যজনক নিদর্শনাবলী দেখেছেন।
হাদীসের আলোকে মি’রাজ
ইসলামী শরিয়তের ২য় ভিত্তি হাদীসে রাসূল, তথা হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ। উল্লেখ্য ২৬ জন রাভী বিভিন্ন রেওয়ায়াতে মি’রাজ শরীফ সংক্রান্ত বর্ণনা দিয়েছেন। এ বর্ণনা গুলো ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তন্মধ্যে কয়েকটা বিশুদ্ধ হাদীস শরীফ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে-
عن جابر بن عبد الله ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لما كذبتنى قريش قمت فى الحجر فجلى الله لى بيت المقدس فطفقت اخبرهم عن اياته وانا انظر اليه- (صحيح مسلم فى كتاب الايمان)
অর্থাৎ- হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যখন কোরাইশরা মি’রাজের ব্যাপারে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করল, তখন আমি হজরে আসওয়াদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক আপন মেহেরবানী ও অনুগ্রহে আমার সামনে বায়তুল মুক্বাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন। আর আমি চাুষ উক্ত বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নিদর্শনসমূহ উল্লেখ করে যেতে লাগলাম অস্বীকারকারী কোরাইশদের সামনে। [মুসলিম: কিতাবুল ঈমান] عن عبد الله ابن مسعود قال لما اسرى برسول الله صلى الله عليه وسلم انتهى به الى سدرة المنتهى وهى فى السماء السادسة اليها ينتهى ما يعرج به من الارض فيقبض منها واليها ينتهى ما يهبط به من فوقها فيقبض منها قال اذا يغشى السدرة ما يغشى قال فراش من ذهب قال فاعطى رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثا اعطى الصلوات الخمس واعطى خواتم سورة البقرة ونفر لمن لم يشرك بالله من امته المقحمات- (صحيح مسلم فى كتاب الايمان)
অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে হাদিসটি বণির্ত, তিনি বলেন, যখন হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মি’রাজের রাতে সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হল, ঐটা ষষ্ঠ আসমানে অবস্থিত। যমীন হতে যা কিছু উত্থিত হয়, তা ওই পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। আর তথা হতে তা নিয়ে যাওয়া হয়। অনুরূপ ঊর্ধ্বালোক হতে যা কিছু অবতীর্ণ হয়, তাও এ পর্যন্ত এসে পৌঁছে এবং তথা হতে এটা নিয়ে যাওয়া হয়। অতঃপর হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বোরআনুল করীমের এ আয়াতটি পাঠ করলেন ‘‘ইযা ইয়াগশাস্ সিদরাতু মা ইয়াগশা।’’ যখন প্রান্তস্থিত বৃটি যা দ্বারা আবৃত হওয়ার ছিল, তা দ্বারা আবৃত হল। রাভী-ই হাদীস বলেন, এখানে যা দ্বারা আবৃত হওয়ার কথাটির অর্থ স্বর্ণের পতঙ্গ। হযরত আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অতঃপর হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বড় বড় তিনটি উপহার দান করা হয়: ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামায, ২. সূরা বাক্বারার শেষ দু’আয়ত, ৩. র্শিকমুক্ত উম্মতের গুরুতর বড় বড় গুনাহসমূহ মার সুসংবাদ।
[মুসলিম শরীফ: কিতাবুল ঈমান] মি’রাজ সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিযা
সূরা বাক্বারার ২৫৩ নম্বর আয়াতের আলোকে যে ভূমিকা উপস্থাপন করা হয়েছে উক্ত আয়াতাংশে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللهُ অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে কারো সাথে
আল্লাহ্ কথা বলেছেন। একথা ভূ-পৃষ্ঠের উপর সরাসরি ‘কথা বলা’ হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম-এরই বৈশিষ্ট্য। এ কথা বলার মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁকে মর্যাদাবান করেছেন। কিন্তু কথাগুলো স্রষ্টাকে না দেখেই বলা হয়েছিল। তাই মূসা আলায়হিস্ সালাম আল্লাহকে দেখার জন্যে নিবেদন করেছিলেন। এরশাদ হচ্ছে-
قَالَ رَبِّ اَرِنِىْ اَنْظُرْ اِلَيْكَ قَالَ لَنْ تَرَنِىْ وَلَكِنِ اِنْظُرْ اِلَى الْجَبَلِ فَاِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِىْ- فَلَمَّا تَجَلُّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَّخَرَّ مُوْسَى صَعِقًا فَلَمَّا اَفَاقَا قَالَ سُبْحَنَكَ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ-
অনুবাদ: (হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম আরয করলেন) হে আমার রব! আমাকে আপন দর্শন দাও। আমি তোমাকে দেখবো। (তিনি) বললেন, ‘তুমি আমাকে কখনো দেখতে পারবে না; বরং এ পাহাড়ের প্রতি দেখো। এটা যদি স্বস্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি অবিলম্বে আমাকে দেখে নেবে।’ অতঃপর যখন তাঁর রব পাহাড়ের উপর আপন নূর বিচ্ছুরিত করলেন, তখন তা সেটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো। আর মূসা আলায়হিস্ সালাম সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো। অতঃপর যখন জ্ঞান ফিরে এলো (তখন) বললো; পবিত্রতা তোমার, আমি তোমারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি সবার মধ্যে প্রথম মুসলমান। [সূরা আ’রাফ: ১৪৩] উল্লিখিত আয়াতের আলোকে বুঝা গেলো হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম আসমানি কিতাবপ্রাপ্ত একজন সম্মানিত রাসূল হয়েও আল্লাহকে দুনিয়ায় নিজ চোখে দেখার মতা হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর ছিল না। তাই দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, আল্লাহকে স্বচে দেখা হলো অন্যতম অতুলনীয়, সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোৎকৃষ্ট, মহিমান্বিত মু’জিযা, যা আমাদের আক্বা মাওলা হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকেই আল্লাহ্ পাক দর্শন দানে সম্মানিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস শরীফ উপস্থাপন করছি, হুযূর এরশাদ করেন, رايت ربى فى احسن صورة অর্থাৎ আমি আমার রবকে সর্বোত্তম আকৃতিতে দেখেছি।
আল্লাহকে স্বচে দেখাই সর্বোত্তম মু’জিযা। তাই মি’রাজ শরীফ রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শান-মান বুঝে পবিত্র মি’রাজের উপর অটল ঈমান রাখার তাওফিক দান করুন।

লেখক: মুদাররিস, কাপ্তাই আল্ আমিন নূরিয়া মাদ্রাসা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •