আ’লা হযরতের পঙক্তিমালা- কাব্যানুবাদ: হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান

0

আ’লা হযরতের পঙক্তিমালা

কাব্যানুবাদ: হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান

১.
هم خاك هيں اور خاك هى ماوا هے همارا- خاكى تو وه ادم جدا على هے همارا-

উচ্চারণ:
হাম খাক হ্যাঁয় আওর খাক হী মা’ওয়া হ্যায় হামারা
খা-কী তু উয়হ আদম জদ্দে আ‘লা হ্যায় হামারা॥
শব্দার্থ: خاك (খাক) মাটি। ماوى (মা’ওয়া)- চূড়ান্ত বা মূল ঠিকানা (ভিন্ন লিপিতে مادا মৌল উপাদান)। خاكى (খা-কী) মৃত্তিকাজাত। جد اعلى (জদ্দে আ‘লা) আদি পিতা, সকলের পিতামহ।

বাংলা গদ্য রূপ:
আমরা মাটি (‘র জাত) এবং মাটিই আমাদের শেষে গন্তব্য, পরিণতি স্থল। (ক্বোরআনের বর্ণনা মতে, মানুষের উৎপত্তি ও বিনাশ উভয়টাই মাটি) যেমন আমাদের উৎস আদম আলায়হিস্ সালাম এবং মৃত্যুর পর আমরা মাটিতে গিয়ে মিশবো। [সূরা তোয়াহার ৫৫ আয়াত দ্রষ্টব্য] আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম’র সৃষ্টি উপাদানও মাটি।

কাব্যরূপ:
মোরা মাটির সৃষ্টি, মাটিই হবে মোদের ঠিকানা,
মোদের জনক আদম মাটির কায়া সবার তা জানা।

২.
الله هميں خاك كرے اپنى طلب ميں- يه خاك تو سركارسے تمعاهے همارا-

উচ্চারণ:
আল্লাহ্ হে হামে খা-ক কারে আপনি ত্বলব সে
ইয়ে খা-কতু সরকার সে তুমগা হ্যায় হামারা।
শব্দার্থ: طالب (ত্বলব) তালাশ, সন্ধান। سركار (সরকার) রাষ্ট্রপ্রধান; এখানে হুকুমদাতা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যার হুকুম সর্বত্র। تمغا (ত্বমগা) মেডেল, সম্মাননা পদক।
বাংলা গদ্য রূপ:
আল্লাহ্ আমাদেরকে তাঁর সন্ধানে বা তাঁকে খুজতে গিয়ে মাটির মত বিনয়ী সহিষ্ণু বানিয়ে দিন। (যেমন- তাঁর ইবাদতে নামাযী বান্দা সিজদারত হয়ে মাটিতে লুটায়।)
মাটি হতে পারা তো সরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের জন্য সম্মাননা পদক স্বরূপ। * (মে’রাজের অতিথি আল্লাহর সান্নিধ্যে যান আবদ বা বান্দা পরিচয়ে। বন্দেগী তাঁর সাহাবী ও উম্মতের পরিচয় জ্ঞাপক।)
কাব্যরূপ:
আল্লাহ্ যেন করেন মোদের মাটির স্বভাবের
এই মাটিই মোদের নবীর দেওয়া মেডেল নিশানা।
৩.
جس خاك په ركهتے تهے قدم سيد عالم – اس خاك په قرباں دل شيداهے همارا-
উচ্চারণ:
জিস্ খা-ক পেহ্ রাখতে থে কদম সাইয়্যিদে আলম
উস খা-ক পেহ কুরবাঁ দিলে শায়দা হ্যায় হামারা।
শব্দার্থ: قدم(কদম) পা মুবারক। سيد عالم (সায়্যিদে আলম) বিশ্বকুল সর্দার হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। قرباں (কুরবান) উৎসর্গ, নিবেদিত। شيدا (শায়দা)- প্রেমিক, আসক্ত।
বাংলা গদ্যরূপ:
যেই মাটির ওপর পবিত্র পা মাড়িয়ে আমাদের মুনিব, দো‘জাহানের সর্দার রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হেঁটে যেতেন, সেই পবিত্র মাটির জন্য উৎসর্গ হতে আমাদের প্রেমিক চিত্ত ব্যাকুল হয়ে আছে।

কাব্যরূপ:
যেই মাটির ’পরে দিতেন কদম, সায়্যিদে আলম,
সেই মাটির ’পরে পড়েই মরে এই প্রাণটি দিওয়ানা।

[* اسرى بعبده এবং سيماهم فى وجوههم من اثر الي -র সমন্বয় অপূর্ব]

৪.
خم هو گئ پشت فلك اس طعن زميں سے- سن هم په مدينه هے وه رتبه هے همارا-
উচ্চারণ:
খম হো গ্যায়ী পুশতে ফালাক উস ত্বা’নে যমীঁ সে
সুন! হাম পেহ মাদীনা হ্যায় উয়হ রুতবাহ হ্যায় হামারা।
শব্দার্থ: خم (খম) ঝুঁকে যাওয়া, নিরুত্তর অধোবদন। پشت (পুশত) পিঠ, কোমর। فلك (ফালাক)- আসমান। طعن (ত্বা’ন)- ভর্ৎসনা, বাক্যবাণ। رتبه (রুৎবাহ)- মর্যাদা।

বাংলা গদ্যরূপ:
যমীনের ওই বাক্যবাণে আসমানের পিঠ ন্যূজ হয়ে গেছে, কোমর ভেঙ্গে গেছে যে, শুনে নাও, আমার মাঝে আছে মদীনায়ে মুনাওয়ারা, আমার মর্যাদা সেটাই।

কাব্যরূপ:
শুনে মর্ত্যলোকের এ বাক্যবাণ থ’ বনে আসমান,
দেখো মর্যাদা মোর এই বুকেতেই সোনার মদীনা।
৫.
اس نے لقب خاك شهنشاه سےپايا- جو حيدر كرار كه مولے هے همارا-

উচ্চারণ:
উস নে লকবে খা-ক শাহিনশাহ্ সে পায়া,
জু হায়দারে কাররা-র কেহ মাওলা হ্যায় হামারা।
শব্দার্থ: لقب (লকব)- উপাধি। شهنشاه (শাহিনশাহ্)- রাজাধিরাজ, বাদশাহদের বাদশাহ। (এখানে আল্লাহর রাসূলকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।) حيدركرار (হায়দারে র্কারার)- শত্র“র ওপর উপর্যুপরি আক্রমণকারী, সিংহ। (এটি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র অপর উপাধি।) مولى (মাওলা)- মুনিব, অভিভাবক, সর্দার।

বাংলা গদ্যরূপ:
যিনি সৃষ্টিকুল সম্রাট হযরত সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র প্রদত্ত মাটির (বাবা) খেতাবে ভূষিত হয়েছেন, * তিনি আমাদের মাওলা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হায়দারে র্কারার অর্থাৎ শত্র“র ওপর প্রচণ্ড বিক্রমে আক্রমণকারী বীর যোদ্ধা।
কাব্যরূপ:
যাঁরে শাহানশাহ্ দেন মাটির খেতাব; ‘হে আবু তুরাব’
তিনি মাওলা মোদের, শেরে খোদা, নবীর ঘরানা।

[* নবীজির পবিত্র আহ্বান يا اباطراب‘قم’ পেয়ে তিনি ধন্য] ৬.
اے مدعيو! خاك كو تم خاك نه سمجے’- اس خاك ميں مدفوں شه بطحا هے همارا-
উচ্চারণ:
এ্যায় মুদ্দাঈও, খা-ক কো তুম খা-ক না সমঝে
উস্ খা-ক মে মদফুঁ শাহে বাত্বহা হ্যায় হামারা।
শব্দার্থ: مدعيو (মুদ্দাঈও)- হে দাবীদার (مدعى -এর বহুবচন)। خاك (খা-ক)- তুচ্ছ, সাধারণ, মামুলি (হয় প্রয়োগে)। مدفون (মাদফুঁ)- দাফনকৃত, সমাহিত।شه بطحا (শাহে বাত্বহা) মক্কাবাসী বাদশাহ্ (মক্কার অপর নাম বাত্বহা) অর্থাৎ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম।

বাংলা গদ্য রূপ:
হে দাবীদার, এই মাটিকে তোমরা মাটি (বা অতি নগন্য) বুঝো না। ভাবো এই মাটির বুকে পা রেখে যিনি তাকে পবিত্র করার ক্ষমতা দিয়েছেন (অর্থাৎ তায়াম্মুম প্রক্রিয়া) সেই মক্কী মাদানী, মরুর শাহিনশাহ্ মাটিতেই সমাহিত হয়েছেন। (তাঁর বরকতে নূরানী নব্যুয়তের দেহস্পর্শে ধন্য মাটি আরশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে গেছে।

কাব্যরূপ:
এই মাটি কি তুচ্ছ না ছার? শুনো হে ঝুট দাবীদার,
এই মাটির বুকেই রয় শুয়ে যাঁর শান যে শাহানা।
৭.
هے خاك سے تعمير مزار شه كو نين- معمور اسى خاك سے قبله هے همارا-

উচ্চারণ:
হ্যায় খা-ক সে তা’মীর মাযা-রে শাহে কাওনাইন,
মা’মুর উসী খা-ক সে ক্বিবলাহ হ্যায় হামারা।
শব্দার্থ: تعمير (তা’মীর)- নির্মাণ, নির্মিত। مزار (মাযার)- যিয়ারত স্থান, বুযুর্গানে দ্বীন’র পবিত্র সমাধি। شه كونين (শাহে কাওনাইন)- উভয় জগতের বাদশাহ্ (সরকারে দো’আলম দ.)। معمور (মা’মুর) আবাদ, সরবে মুখরিত। قبله (ক্বিবলা)- যা (নামাযে) সামনে রাখতে হয়, কা’বা শরীফ।

বাংলা গদ্য রূপ:
সারওয়ারে কাওনাইন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নূরানী রওজা শরীফও মাটি দ্বারাই নির্মিত। আর ওই মাটি দ্বারাই নির্মাণ করা হয বিশ্ব মুসলিমের পবিত্র কেবলা খানায়ে কা’বা।

কাব্যরূপ:
সেই মাটি দিয়েই তৈরি, আমার হযরতের মাযার,
সেই মাটির গড়া, মাটির বুকেই কা’বার নিশানা।
৮.
هم خاك اڑائيں گے جو وه خاك نه پائى- اباد رضا جس په مدينه هے همارا-

উচ্চারণ:
হাম খা-ক উড়া-য়েঙ্গে তু উয়ই খা-ক পা-য়ী
আ’বাদ রেযা, জিস পেহ্ মদীনা হ্যায় হামারা।
শব্দার্থ: اڑاينگے (উড়া-য়েঙ্গে)- উড়াব, ছিটাব। (এখানে আফসোসে মাথায় ধুলো ছিটানো অর্থে)। وه خاك (উয়হ খা-ক)- ওই মাটি। অর্থাৎ মদীনা তৈয়বার ধুলোবালি। اباد (আ’বাদ)- বসতি গড়ে ওঠা।

বাংলা গদ্য রূপ:
হে রেযা! যে মাটিতে মদীনা শরীফের গোড়াপত্তন ঘটেছে, আমরা যদি সে মাটির স্পর্শ না পাই, তবে বঞ্চনার বেদনা প্রকাশে মাথায় ধুলোমাটি নিক্ষেপ করব।
কাব্যরূপ:
মাটি মাথায় ছিঁটাই, সেই মাটি না যদিই ছুঁতে পাই,
যাতে বসতি হল, হে রেযা, মোর নবীর মদীনা।

[আ’লা হযরতের হাদায়েকে বখশীস থেকে]

বের হয়েছে!

প্রিয়নবীর সকল পূর্বপুরুষ মুসলমান ছিলেন এর স্বপেক্ষে ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি রচিত বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়া ‘শুমুলুল ইসলাম’ গ্রন্থের অনুবাদ। ‘প্রিয়নবীর পূর্বপুরুষদের ইসলাম গ্রহণ’ বের হয়েছে।
অনুবাদক: মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জমান।

শীঘ্রই প্রকাশিত হচ্ছে ক্বসিদায়ে গাউসিয়া শরীফ ও ক্বসিদায়ে বুরদা শরীফের কাব্যানুবাদ।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •