নূর মুহাম্মদ
খাগরিয়া, সাতকানীয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কোন কোন বক্তা বক্তব্যে বলে যে, মাজারের উপর গম্বুজ বানানো, মাজারের টাকা দেয়া, আগর বাতি জ্বালানো, মোমবাতি জ্বালানো, ফুল দেয়া, ইত্যাদি হারাম। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে খুশী হবো।
উত্তর: আম্বিয়ায়ে এযাম, আউলিয়ায়ে কেরাম ও হক্কানী ওলামায়ে রাব্বানীয়ীন এবং তাঁদের মাজার সমূহ হল আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন। যেমন সাফা ও মারওয়া, পাহাড়দ্বয় আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান করা মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অন্তরের তাকওয়া। আউলিয়ায়ে কেরামের সম্মান মূলত ইসলামের সম্মান। তাই আউলিয়ায়ে কেরামের রওযার চতুর্পাশে দালান তৈরি করে গম্বুজ বানানো, এতে ফুল দেয়া, গিলাফ চড়ানো, এবং বাতি জ্বালানো মূলত আউলিয়া কেরামকে সম্মান প্রদর্শন করার নামান্তর। সুতরাং এগুলো শরিয়ত সম্মত। যেমন উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হুজরা মোবারকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সমাধিত হওয়ার উপর দালান ও গম্বুজ নির্মিত হওয়াটা প্রকৃত নায়েবানে নবী ও আউলিয়া কেরাম এর মাজারে গম্বুজ বানানো বৈধ হওয়ার একটি উজ্বল প্রমাণ।
বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড কিতাবুল জানায়েযে উল্লেখ আছে যখন হযরত হাসান ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর কবর তথা মাজার শরীফের উপর এক বছর পর্যন্ত গম্বুজ বিশিষ্ট ঘর তৈরি করে রেখে ছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের যুগে সবার উপস্থিতে এটা তৈরি হয়েছিল। এবং এটাকে কেউ অস্বীকার করেননি। তাফসীরে রুহুল বয়ান ৩য় খণ্ড, ১ম পারা انّما يعمر مساجد الله الخ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে-
فبناء القبات على قبور العلماء والا ولياء والصلحاء المرجائز اذا كان القصد بذالك التعظيم فى اعين العامة حتى لا يحتقروا صاحب هذا القبر অর্থাৎ হক্কানী ওলামায়ে কেরাম আউলিয়ায়ে এযাম ও সালিহীনের রওজাগুলোর গম্বুজ বিশিষ্ট দালান বানানো বৈধ কাজ। যখন এর দ্বারা সাধারণ লোকদের দৃষ্টিতে তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন উদ্দেশ্য হয়। যেন সাধারণ মানুষ উক্ত কবরবাসীকে সাধারণ মনে করে তুচ্ছ না ভাবে। মিরকাত শরহে মিশকাত কিতাবুল জানায়েযে উল্লেখ আছে قد اباح الله البناء على قبور المشائخ والعلماء المشهورين ليزورهم الناس وليستريحوا بالحلوس অর্থাৎ পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম মাশায়েখে কেরাম এবং প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরামের কবর সমূহে দালান বানানো জায়েয বলেছেন, যেন মানুষ তাঁদের যিয়ারত করতে এবং সেখানে বসে আরাম হাসিল করতে পারে।
উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল হক্কানী রব্বানী ওলামায়ে কেরাম ও আউলিয়া এযামের মাজারে গম্বুজ বিশিষ্ট দালান বানানো জায়েয বরং উত্তম কাজ। অনুরূপ আউলিয়ায়ে কেরাম ও হক্কানী ওলামায়ে কেরামের মাজারে বাতি জ্বালানোও শরিয়ত সম্মত। যেমন হাদিকাতুন নদীয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে-
اخراخ الشموع الى القبور بدعة واتلاف مال كذا فى البزازية وهذا كله اذا خلاعن فائدة وما اذا كان موضع القبر مسجدا او على طريق او كان هناك احد جالسا او كان قبر ولى من الاولياء او عالم من المحقيقين تعظيما لروحه اعلاما للناس انه ولى ليبتر كوابه ويدعو الله تعالى عنده فيستجاب لهم فهو امر جائز
সাধারণ মানুষের কবরের উপর বাতি জ্বালানো বিদআত এবং সম্পদের অপচয় এরূপ বাযযিয়া নামক ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে। তবে উক্ত হুকুম হল যদি এটা অনর্থক হয়। কিন্তু যদি কারো কবরের পার্শ্বে মসজিদ হয় বা কবর রাস্তার উপর হয় বা কবরের পার্শ্বে কেউ বসে থাকলে বা উক্ত কবর শরীফে কোন আল্লাহর ওলিকে দাফন করা হয়েছে বা কোন মুহাক্কিক আলেমকে দাফন করা হয়েছে তখন তাঁদের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এবং জনগণকে একথা জানানোর জন্য যে এটা আল্লাহর ওলির কবর যেন মানুষ উক্ত মাজার থেকে বরকত হাসিল করতে পারে এবং উক্ত অলির মাজার শরীফের কাছে দুয়া করতে পারে অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের ফরিয়াদ কবুল করবেন এসব অবস্থায় কবরে বাতি জ্বালানো বৈধ। সুতরাং আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার সমূহে রাতের বেলায় বা অন্ধকারে বাতি /লাইট জ্বালানো মানুষের যিয়ারত, কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মুনাজাতের সুবিধার্তে জায়েয ও মঙ্গলময়। তবে অপচয় ও অনর্থক যেন না হয় সেদিকে অবশ্যই দায়িত্ববান ও কর্তব্যরত ব্যক্তিবর্গ সজাগ ও সতর্ক থাকবে। তদ্রুপ জনহিতকর কাজের জন্য মকতব, মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালনার জন্য তাদের মাজারে টাকা দেয়া, আগরবাতি ও ফুল দেয়া শরিয়ত মত অসুবিধা নাই তবে মাজার কর্তৃপক্ষের উপর দায়িত্ব তারা যেন মাজারের দান বাক্স ও বিভিন্ন খাতে অর্জিত টাকা পয়সা মসজিদ মাদরাসা, এতিমখানা, ফোরকানীয়া, ও গরীব মিসকিনের সাহায্যে ব্যয় করেন। আর যারা আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার শরীফে নিয়মিত খেদমতে আছেন তাদেরকে বেতন বা আহার্য সামগ্রী বা হাদিয়া স্বরূপ মাজার শরীফের জন্য জিয়ারতকারীদের প্রদত্ত হাদিয়া টাকা পয়সা থেকে প্রদান করা যাবে। খেয়াল রাখবে যেন উক্ত টাকা ইসলামের খেদমতে ব্যয় হয়, তখন আল্লাহর অলিগণের রূহানী দোয়া লাভ করা যাবে। যেহেতু আউলিয়ায়ে এযাম তাদের সারা জীবন দ্বীনের খেদমতে উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁদের ইন্তেকালের পরেও যেন তাঁদের মাজার /দরগাহ শরীফ কে কেন্দ্র করে ইসলাম ও আহলে সুন্নতের খেদমত জারী থাকে।
[তাফসীরে রূহুল বয়ান- কৃত: আল্লামা ইসমাঈল হক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, মেরকাত শরহে মেশকাত- কৃত: হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহ. ও আমার রচিত এবং আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট চট্টগ্রাম কৃর্তকক প্রকাশিত যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
প্রথম পাতা প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: কোন কোন বক্তা বক্তব্যে বলে যে, মাজারের উপর গম্বুজ বানানো, মাজারের...