সম্পাদকীয়: সফর মাস দুই মহান সংস্কারক মুজাদ্দিদ-ই দ্বীন’র ওফাত’র স্মৃতি বিজড়িত মাস

0
ফর মাস হিজরী বর্ষের দ্বিতীয় মাস। এ মাস ইসলামের দুই মহান সংস্কারক মুজাদ্দিদ-ই দ্বীন’র ওফাত’র স্মৃতি বিজড়িত মাস। পবিত্র হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক শতাব্দীর শেষ ভাগে এ উম্মতের দ্বীনের সংস্কারের জন্য একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করে থাকেন’’। মুজাদ্দিদ আগমনের এ ধারাবাহিকতায় ভারতীয় এ উপমহাদেশে হিজরি দশম ও একাদশ শতাব্দিতে আবির্ভূত হন হযরত শায়খ আহমদ সারহিন্দী। এ মহান ব্যক্তির মূল নামের চেয়ে মুজাদ্দিদ-ই আলফেসানী অর্থাৎ হিজরি দ্বিতীয় সহ¯্রাব্দের সংস্কারক নামে তিনি সমধিক পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। তিনি সে যুগের শাসক গোষ্ঠির ইসলামপরিপন্থী সকল অনাচারের বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করে মুসলিম সমাজকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন। এ সময় মুঘল স¤্রাট আকবর দ্বীন-ই ইলাহী নামক নতুন ধর্মমত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের যে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেন ঠিক সেই সংকটময় মুহূর্তে মুজাদ্দিদ-ই আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলায়হির অক্লান্ত ত্যাগ-তিতিক্ষা ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে ইসলাম ও মুসলিম সমাজ এক বড় ফিতনা থেকে রক্ষা পায়। তিনি কুরআন-হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, দ্বীন’র সঠিক তালিম দিয়ে ফিতনায় নিমজ্জিত মুসলিম মিল্লাত’র ঈমান-আক্বিদা রক্ষায় বিশাল ভূমিকা রাখেন।
অপর দিকে ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলনের চরম বিপর্যয়ের যুগে উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও হতাশার সৃষ্টি হয়। এহেন দুর্যোগ মুহূর্তে একান্ত প্রয়োজন অনুভুত হচ্ছিল এক আলোর দিশারীর। আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে ওই সময় ১৮৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। তিনি উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্ম, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রভূত অঙ্গনে সঠিক পথ নির্দেশ করেন। যুগ সমস্যা মোকাবেলায় গভীর অনুসন্ধানী দৃষ্টি তাঁকে একজন সফল মুজতাহিদ মুজাদ্দিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। দুনিয়া জুড়ে তাঁর খ্যাতি আ’লা হযরত মুজাদ্দিদ-ই মিল্লাত নামে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ৭২টির অধিক শাখায় তাঁর ক্ষুরধার লিখনী ও সহ¯্রাধিক প্রামাণ্য রচনাবলীতে ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা বিশ্বাস প্রতিফলিত। কুরআন-হাদীসের নির্যাসে সমন্বিত তাঁর রচিত কিতাবসমূহ যুগ যুগ ধরে পথনির্দেশনা দেবে সত্য সন্ধানী মুসলিম সমাজকে। তাঁর যে তিনটি গ্রন্থ বিশ্বব্যাপী বেশী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ অনুবাদ কানযুল ঈমান, ফতোয়ায়ে রজভিয়া ও হাদা-ইকে বখশিশ (কাব্যগ্রন্থ)। পবিত্র কুরআনের অনুবাদ কানযুল ঈমান বর্তমান বিশ্বে শ্রেষ্ঠ ও নির্ভুল অনুবাদের মর্যাদায় উত্তীর্ণ। এ দুই মহান মুজাদ্দিদ এর জীবন দর্শন পাঠ-পর্যালোচনা মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদাকে শানিত করবে। আ’লা হযরত সমসাময়িক উদ্ভূত বাতিল ফির্কার খন্ডনে কলমী যুদ্ধ করে ক্ষান্ত হননি বরং তরিকত চর্চার নামে শরীয়ত বিরোধিতা ও শরীয়ত বর্জনকারী ভন্ডামীর বিপক্ষেও সমানভাবে তিনি গর্জে উঠেছিলেন। শরীয়ত-তরিকতের বিশুদ্ধ অনুসরণ, অনুশীলনকে তিনি একমাত্র মুক্তির উপায় বলে মত পেশ করেছেন।
আওলাদে রসূল, কুতুবুল আউলিয়া হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি মসলকে আ’লা হযরত’র নীতি ও আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠা করেন দ্বীনি মারকাজ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া। গাউসে জামান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি মসলকে আ’লা হযরত তথা আহলে সুন্নাতের সঠিক মতাদর্শ প্রচার-প্রসারের মানসে প্রতিষ্ঠা করেন মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত। মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মূল্যবান ঈমান-আক্বিদা নষ্ট করার জন্য বর্তমানে বিজাতীয় শত্রুর প্রয়োজন নেই; একশ্রেণির মুসলিম নামধারী আলিম বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউভ চ্যানেলে ইসলামের নামে নানা আজগুবি তথ্য দিয়ে মুসলমানদের বিভ্রান্তি করে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান হরণের পাঁয়তারা করছে। ইসলামের নামে বর্তমানে শিয়া, আহলে হাদীস, সালাফী, লা-মাযহাবী ফিতনা ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে, আর চরম বেকারত্ব ও অভাবের তাড়নায় কিছু তরুণ শিক্ষিত বা শিক্ষার্থী তাদের সর্বনাশা ফাঁদে পা দিয়ে মূল্যবান ঈমান হারাচ্ছে। তারা মুসলিম সমাজ যুগ যুগ ধরে পূর্বপুরুষ তথা উত্তম যুগের মুসলমানদের অনুসরণে আদায়কৃত নামাজ ও আমল-আখলাকে নিত্য নতুন নিয়ম-কানুন সংযোজন করে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলছে। মাসিক তরজুমান-এ আহলে সুন্নাত এ সব বিভ্রান্তির অপনোদনে পবিত্র কুরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সমন্বিত লেখনী প্রকাশ করে ঈমান-আক্বিদা রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে আসছে।
সম্প্রতি এক আলিম নামধারী ইতিহাসে চরম ধিকৃত কুখ্যাত এয়াজিদের পক্ষে সাফাই গেয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। তরজুমানের চলতি সংখ্যায় বিশদভাবে ‘এজিদ সমাচার’ নামে তথ্য ও তত্ত্ব ভিত্তিক জবাব রয়েছে। এ ছাড়াও জনৈক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হির পবিত্র কুরআনের অনুবাদগ্রন্থ কানযুল ঈমানের সমালোচনার জবাবে তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ পত্রস্থ হয়েছে। আগামীতেও মাসিক তরজুমান বাতিল ও পথভ্রষ্ট গোষ্ঠির যে কোন বক্তব্য বা লেখনীর ক্ষুরধার জবাব দানে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে সুন্নী মতাদর্শী আলিম-ওলামা বুদ্ধিজীবী সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। নবীন-প্রবীণ সুন্নি স্কলারদের জ্ঞানগর্ভ লেখনীর মাধ্যমে নবসৃষ্ট সকল বিভ্রান্তির তড়িৎ জবাব দিতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে তরজুমান পরিবার সদা সচেষ্ট। মহান আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন- আমিন।
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •