প্রশ্নোত্তর

0
প্রশ্নোত্তর : দ্বীন ও শরীয়ত বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব
উত্তর দিচ্ছেন: অধ্যক্ষ মুফ্তি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
মুহাম্মদ আলী আসগর- মাদার্শা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমাদের এলাকার একটি সুন্নি মাদ্রাসায় প্রায় চার শত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। বৈশ্বয়িক মহামারি কোভিড-১৯’র কারণে ক্লাস বন্ধ থাকলেও নামাযে জানাযাসহ যাবতীয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য মাদ্রাসার একমাত্র মাঠটি ব্যবহার হয়ে থাকে; কিন্তু উক্ত মাঠের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে বহু বছরের পুরানো একটি কবর থাকায় নামাযে জানাযায় মাঠ ব্যবহারে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত জায়গাটি কবরস্থ মুর্দার বা তার কোন ওয়ারিশগণের নয়। কবরস্থিত জায়গার মালিক ক্রয়সূত্রে অত্র মাদ্রাসা। তাই মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার ও নামাজে জানাযা আদায় এবং মাদ্রাসার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কবরস্থিত জায়গাটিকে কি করলে ইসলামী শরীয়তের খেলাফ বা পরিপন্থি হবে না শরয়ী ফায়সালা প্রদানের নিবেদন রইল।
 উত্তর: উল্লেখিত বিষয় যাছাই বাছাইপূর্বক এ মর্মে ফতোয়া প্রদান করা হচ্ছে যে, সাধারণত কবরস্থানের জন্য ওয়াক্বফকৃত বা অনেক পূর্ব হতে কবরস্থানের জন্য নির্ধারিত স্থানে মালিক/ওয়াক্বফকারী/মতওয়াল্লী বা কবরস্থান সংরক্ষণ কমিটির দায়িত্ববান ব্যক্তির অনুমতিক্রমে যদি কোন মৃত মুসলমান নর-নারীকে শরিয়ত সমর্থিত নিয়ম অনুযায়ী দাফন করা হয় তখন উক্ত মৃত ব্যক্তির কবরের উপর সাধারণত চলাফেরা করা, ক্ষেত-খামার করা, দোকান-পাঠ ইত্যাদি তৈরী করা, জীবিত ব্যক্তিদের থাকার জন্য ঘর বা ইমারত নির্মাণ করা, মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ্ ইত্যাদি নির্মাণ করা নিষিদ্ধ ও বড় ধরনের অপরাধ। যেহেতু ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক কবর দাফনকৃত মৃত ব্যক্তির হক এবং কবরের ছাদ তথা উপরিভাগও দাফনকৃত মৃত ব্যক্তির হক।
ফতোয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণনা করা হয়েছে-ياثم بوطى القبور لان سقف القبر حق الميت অর্থাৎ কবরের উপর (বিনা প্রয়োজনে) পা দিয়ে মোড়ানো তথা চলাফেরা করলে গুনাহ্গার হবে। কেননা কবরের ছাদ মৃত ব্যক্তির হক। ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ان الميت يتاذى بما يتاذى به الحى অর্থাৎ জীবিত ব্যক্তি যে সব কারণে কষ্ট পায়, মৃত ব্যক্তিও সে সব কারণে কষ্ট পায়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাহাবী হযরত ওকবা বিন আমের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি জ্বলন্ত কয়লার টুকরার উপর, অপর বর্ণনায় তরবারীর উপর পা রাখা শ্রেয় মনে করি কবরের উপর পদচারণা করার চেয়ে। [সুনানে ইবনে মাজাহ্ শরীফ] তবে মাদ্রাসার জন্য খরিদকৃত বা ওয়াক্বফকৃত নির্ধারিত ময়দান ও জায়গায় যদি অনেক পূর্বে ২/১ জন ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয় আর উক্ত মাদ্রাসার জন্য ক্রয়কৃত ময়দানে অনেক সময় নামাযে জানাযা পড়া এবং বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও বার্ষিক সভা-জলসা ইত্যাদি আনজাম দেয়া একান্ত জরুরী হয়ে যায়, তখন বিশেষ প্রয়োজনে উক্ত কবরের চতুষ্পার্শে দেওয়াল নির্মাণ করে কিংবা খুঁটি গেড়ে কবরের মাটি হতে এক/দেড় ফুট উপরে ছাদ নির্মাণ করে উক্ত ছাদ/স্লেফের উপর প্রয়োজনে নামাযে জানাযা, সভা-সেমিনার ও মাহফিল ইত্যাদি আদায় করতে ইসলামী ফিক্বহের বিধান মোতাবেক অসুবিধা নেই বরং বিশেষ প্রয়োজনে জায়েয বলে ফিক্বহবিদগণ ফতোয়া প্রদান করেছেন। যেহেতু উক্ত ছাদ কবরের উপর আড়াল স্বরূপ হয়ে গেল। তখন কবরের উপর নামাযে জানাযা আদায় হল না বরং ছাদের উপর নামাযে জানাযা আদায় হল। তবে উক্ত ছাদ বা স্লেপ যেন কবরের মাটি হতে পৃথক হয়, কবরের মাটির সাথে লাগানো না হয়, সে দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
হাদিস শরীফে রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সরাসরি কবরের উপর নামায পড়তে নিষেধ করেছেন; কিন্তু কবরের মাটি হতে পৃথক করে ২/১ ফুট উচুঁতে নির্মিত ছাদের উপর নামায বা নামাযে জানাযা আদায় করতে নিষেধ করেননি। যেমন সরাসরি কবরকে সামনে নিয়ে পর্দা বা ছুতরা ছাড়া নামায আদায় করা নিষিদ্ধ; কিন্তু যদি কবরের সামনে কোন বৃক্ষ বা দেওয়াল থাকে আর উক্ত বৃক্ষ বা দেওয়ালকে সামনে নিয়ে কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করতে অসুবিধা নেই। মদিনা মুনাওয়ারায় মসজিদে নববী শরীফে প্রিয়নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর রওজা শরীফকে সামনে নিয়ে প্রতি ওয়াক্তে অসংখ্য মুসল্লি জুমা-জামাত ও নামাযে জানাযা আদায় করে থাকেন। কেননা মুসল্লিদের সামনে রওজা শরীফের দেওয়া বা জালী শরীফ আড়াল বা পর্দা হয়ে গেছে। তদ্রুপ খানায়ে কাবা বায়তুল্লাহ্ শরীফের চতুর্পাশে খালি জায়গায় মাতাফ শরীফ (যেখানে তাওয়াফ করা হয়) অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞ, প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরাম ও ইমামগণের মতে হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম ও হযরত হাজেরা আলাইহাস্ সালামসহ সত্তর জন, কোন কোন ইমামের বর্ণনা মতে আরো বেশি নবীগণের মাজার/কবর শরীফ অবস্থিত। অথচ সেখানে প্রতি মুহূর্তে তাওয়াফ আদায় করা হচ্ছে এবং নামাযে জানাযাসহ জুমা-জামাতও আদায় করা হচ্ছে। সেখানেও বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী সম্মানিত নবীগণের কবর বা রওজাসমূহের চতুষ্পার্শে খুঁটি বা স্তম্ভ দিয়ে কবর শরীফের মাটি হতে কয়েক ফুট উপরে ছাদ দ্বারা আড়াল করে মাতাফের স্থানকে সাজানো হয়েছে, যাতে শরিয়ত মোতাবেক সেখানে তাওয়াফ ও নামায আদায় করতে অসুবিধা না হয়। নি¤েœ ফিক্বহ-ফতোয়া গ্রন্থের উদ্ধৃতিসমূহ প্রদত্ত হল-
১. ففى اقرب المسالك بشرحه الصغير ج ـ اصـ ৫৭৭ ما نصه والقبر حبّس على الميت لاينبش ما دام به الا لضرورة شرعية لضيق المسجد الجامع او دفن اخر معه عند الضيق او كان القبر فى ملك غيره واراد اخراجه منه او كفن بمال الغير بلا اذنه واراد به اخذه قبل نغيره او دفن معه مال من حلى او غيره الخـ
[فتاوى شرعية القسم الثانى ـ صفحه ১৮
المطبوعة من دائرة الاوقاف والشيون الاسلامية بدبى] ২. قبروں كا نشان اگرچه مٹ چكا هےمر جس مقام پر قبروں كے هونے كاظن غالب هواس مقام كا احترام ضرورى هے ـ بهتر هے كه قبروں كے چاروں طرف كم سے كم ستره كي مقدارديواريں اونىں كركے قبروں كو بيچ ميں كرديں يازميں سے ڈر دوفٹ چاروں طرف سے ديواريں اونيو كركے اوپر سےچھت ڈھال ديں اور مدرسة كانفرش او اناا كركے چھت كے برابر كرديں يه دونوں صورتيں جائز هيں
৩. سئل (اى القاضى الامام شمس الائمة محمود الازجندى) عن المقبرة فى القرى اذا اندرست ولم يبق فيها اثر الموتى لا العظم ولاغيره هل يجوز زرعها واستغلالها قال لا ولها حكم المقبرة كذا فى المحيط
[افتاوى فيض الرسول جـ ا ـ صـ ৪৬৫
ازمفتى جلال الدين امجدى] ৪. نيز فتاوى شرعية ميں هے : فان حرمة الميت كحرمة الحى وفى الحديث عن عائشة رضى الله تعالى عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم قال كسر عظم اليت ككسر عظم الحى اخرجه احمد وابوداؤد باسناد حسن ـ
৫. [فتاوى شرعية : جـ ২ـ صـ ৮৩] ৬. هكذا فى العطايا النبوية فى الفتاوى الرضوية للامام اعلى حضرت شاه احمد رضا رحمة الله عليه [كتاب الجنائز ـ جلد ـ چهارم ـ صـ ১১০] সুতরাং নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ বিশেষত ফতোয়ায়ে শরঈয়া ২য় খন্ড, পৃ. ৮১ ও ৮৩, ফতোয়ায়ে ফয়জুর রসূল ১ম খন্ড, পৃ. ৪৬৫, কৃত. মুফতি জালাল উদ্দিন আমজাদী রহমাতুল্লাহি আলায়হি, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ২য় খন্ড, পৃ. ৩৬২ এবং ফতোয়ায়ে রজভীয়া, কিতাবুল জানায়েয, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ১১০ ইত্যাদি বিবরণ সমূহের আলোকে মাদ্রাসার জন্য ক্রয়কৃত উক্ত জায়গা ও ময়দানের এক পার্শ্বে বা মাঝখানে অবস্থিত অনেক পুরাতন কবরটিকে বিশেষ প্রয়োজনে চতুর্দিকে দেওয়াল দিয়ে এক বা দেড় ফুট উঁচু করে ছাদ দ্বারা আড়াল করে উক্ত ময়দানকে সাজিয়ে সেখানে প্রয়োজনে নামাজে জানাযা, সভা-সেমিনার ও মিলাদ-মাহফিল করতে শরিয়তের দৃষ্টিতে অসুবিধা নেই। তবে উক্ত কবর ও কবরে দাফনকৃত মৃত ব্যক্তির প্রতি যেন অশুভ আচরণ করা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা অপরিহার্য।
মনে রাখতে হবে সবাইকে কবরে যেতে হবে। কোন প্রকারের আচরণে যেন কবরবাসীর সম্মানহানি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। আল্লাহ্, রসূলকে ভয় করবে। উপরোক্ত বিষয়ে এটাই ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া/ফয়সালা।
মুহাম্মদ তানভীর রহমান শুভ- পটিয়া, রেলওয়ে ষ্টেশন, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: নামায পড়া অবস্থায় জরুরী প্রয়োজনে নামাজের নিয়ত না ভেঙ্গে সামনে যেতে বা চলা-ফেরা করতে পারবে কিনা? জানালে উপকৃতত হব।
উত্তর: নামায অবস্থায় অহেতুক হাঁটাহাঁটি বা এদিক সেদিক চলাফেরা করা অথবা কিয়াম বা দাঁড়ানোর স্থান হতে বিনাপ্রয়োজনে সরে গেলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি জামাআত চলাকালীন ২য় কাতারে নিয়ত বাঁধলো এমন সময়ে দৃষ্টিগোচর হলো যে ১ম কাতারে জায়গা খালি রয়ে গেছে তখন অনুমতি আছে সামনে এগিয়ে গিয়ে ওই খালি স্থান পূর্ণ করার। এই অল্পটুকু চলা বা হাঁটার অনুমতি শরীয়তের পক্ষ হতে রয়েছে। অর্থাৎ নামায অবস্থায় এক কাতার পরিমাণ এগিয়ে পূর্বের কাতারের খালিস্থান পূর্ণ করা শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত। হ্যাঁ ২ কাতার পরিমাণ সামনে এগিয়ে নামায অবস্থায় যদি খালি স্থান পূর্ণ করতে হয় তখন তা করা যাবে না, কেননা ২ কাতার পরিমাণ হাটা আমলে কাসীর পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। আর নামায অবস্থায় এক সাথে ২ কাতার পরিমাণ হাঁটা নিষেধ। তবে নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর আগত মুসল্লি দেখল যে আগের বেশ কয়েকটি কাতার খালি রয়েছে তখন নামাযের নিয়্যত না বেঁধে আগের খালি কাতারে গিয়ে নিয়্যত বাঁধবে। অবশ্য নামাযরত অবস্থায় অযু ভেঙ্গে গেলে অযুখানা বা পুকুরে গিয়ে অযু করে কথা-বার্তা না বলে পুনরায় জমাতে হাজির হয়ে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর মুসল্লি অযু করতে গিয়ে মাঝখানে যত রাকাত ছুটে গেছে তা আদায় করে নিবে। এতে নামায পুনরায় পড়তে হবে না। ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া বা আলমগীরিতে আছে, এক সাথে নামায অবস্থায় দুই কাতার পরিমাণ সামনে হাঁটলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। আর যদি এক কাতার পরিমাণ যাওয়ার পর সামান্য থেমে যায় তার কিছুক্ষণ পর আর এক কাতার সামনে হেঁটে খালি জায়গায় অগ্রসর হয় তখন নামায ফাসেদ হবে না।
[হুলিয়া, কৃত. আল্লামা ইবনে আমীরুল হাজ্ব, রাদ্দুল মুহতার, ফাত্ওয়া-ই রজভীয়্যাহ্ ৩য় খন্ড, পৃ. ৩১৬, ফতোয়ায়ে আলমগীরি, নামায অধ্যায় বাংলা অনুবাদ- পৃ. ১৭৩, মীনাবুক হাউজ ঢাকা হতে প্রকাশিত। মু’মিন কি নামায, পৃ. ২০১, কৃত. আল্লামা আব্দুস্ সাত্তার হামদানী রহ.]
প্রশ্ন: নামাজরত অবস্থায় চোর জিনিষপত্র নিেেত দেখলে নামাযের নিয়্যত ভেঙ্গে চোরকে ধরতে পারব কিনা?
উত্তর: বর্তমানে দেখা যায় মসজিদে নামায আদায়কালে চোর নামাজির জুতা বা কোন মূল্যবান বস্তু/ জিনিস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বা পালাচ্ছে। নামাযরত অবস্থায় নিজের মূল্যবান জিনিস চুরি হতে দেখলে তখন নামাজ ছেড়ে দিয়ে তা রক্ষা করা বা উদ্ধার করা জায়েয ও বৈধ। এমনটা করার কারণে গোনাহ্গার হবে না। তবে অবশ্যই পরে উক্ত নামায আদায় করতে হবে। কোন কোন ইসলামী ফক্বীহ্ ও গবেষক বলেছেন, মূল্যবান বস্তু বা জিনিসের মূল্য যদি ১ দিরহাম, রূপা সম-পরিমাণ সম্পদ হয়। (যার বর্তমান বাংলাদেশের বাজার মূল্য ৩৩৫ টাকার মতো হয়) তবে তা রক্ষা ও হেফজতের জন্য নামায ভঙ্গ করা জায়েয অবশ্য নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বেই জুতা বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ও মালপত্র ইত্যাদি হেফাযতের জায়গায় রাখা উচিত যেন নামাযের সময় এসব কারণে নামাজের মনোযোগ বা মনোনিবেশে বিঘ্ন না ঘটে। [ফাতাওয়া-ই হিন্দিয়া, ১ম খন্ড, ১০৯, পৃ. ও আদ্ দুররুল মুখতার, পৃ. ২য় খন্ড, ৫১পৃ.]
মুহাম্মদ মুফাচ্ছেল চৌধুরী- পশ্চিম বেতাগী, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আত্মহত্যাকারীর গোসল, জানাযা ও দাফনের নিয়ম জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: ফাঁসি বা বিষ খেয়ে কোন মুসলিম নর-নারী আত্মহত্যা করলে তাকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো, মুসলমানের কবরে দাফন করা ইত্যাদি আত্মহত্যাকারীর জীবিত আত্মীয়-স্বজন, তাদের অনুপস্থিতিতে পাড়া-প্রতিবেশী মুসলমানদের উপর অপরিহার্য। আত্মহত্যা করা গুনাহে কবিরা। কিন্তু তার ঈমান নষ্ট হয় নি, তাই তার দাফন, কাফন ও নামাযে জানাযার নিয়ম একই রকম। তবে এলাকার জুমা মসজিদের ইমাম, খতিব বা এলাকার কোন বিশিষ্ট আলেম আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামায পড়াবে না। যে কোন একজন মামূলী হাফেজ বা সাধারণ মওলভী তার জানাযার নামাযে ইমামতি করবেন। যেন আত্মহত্যার কুফল সম্পর্কে অন্য সব লোকেরা সজাগ হয়। এবং এ ধরনের কুকর্ম হতে সবাই বেচে থাকে। যেহেতু আত্মহত্যা করা মহাপাপ তথা কবীরাহ্ গুনাহ্, পরকালে এ গুনাহর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। তাই আত্মহত্যার মত জঘন্য পাপ থেকে বেঁচে থাকা সকলের উচিত। পবিত্র কুরআন মজীদ এবং হাদীস শরীফেও এ ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এ বিষয়ে তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে পূর্বে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে।
[আমার লিখিত এবং আনজুমান ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত যুগ জিজ্ঞাসা ৩২৯পৃ]
মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান -সৈয়্যদপুর।
প্রশ্ন: আমরা নামের আগে ছেলে হলে মুহাম্মদ ও মেয়ে মোছাম্মৎ ব্যবহার করে থাকি। এর কোন ফযিলত রয়েছে কিনা? জানতে আগ্রহী।
উত্তর: মুসলিম পরিবারে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হলে তার মূল নামের পূর্বে ‘মুহাম্মদ’ অথবা ছেলের নাম সরাসরি মুহাম্মদ রাখা হয়। এ নাম মুবারক যুক্ত করে রাখা হয়, যা অতি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। আর প্রত্যেকটি নামের আলাদা আলাদা তাছির বা প্রভাব ব্যক্তির উপর থাকে। তদ্রুপ ‘মুহাম্মদ’ নামটি হলো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র নূরানী নাম মুবারক। যাতে ইহকালীন ও পরকালীন বহু ফযিলত অন্তর্নিহিত। যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন অর্থাৎ যে আমার ভালোবাসার কারণে এবং বরকতের উদ্দেশ্যে নিজ পুত্র সন্তানের নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখবে আল্লাহ্ তা‘আলা ওই পিতা এবং সন্তান উভয়কে জান্নাত দান করবেন।
[কানযুল উম্মাল, কিতাবুন নিকাহ্, হাদীস নম্বর ৪৫২১, খন্ড-১৬, ১৭৫নং পৃষ্ঠা] অপর এক বর্ণনায় রয়েছে – ইমামে ইশক্ব ও মুহাব্বত আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা খাঁন রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর ‘মালফুজাতে’ উল্লেখ করেছেন-
قيامت كے دن ملائكه كهيں ‏‏گےكه
جن كا نام محمد يا احمد هے جنت ميں چےگ جاو
[مسند فردوس ـ ديلمي] অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন ফেরেশতাগণ বলবেন, যাদের নাম মুহাম্মদ অথবা আহমদ তাঁরা বেহেশতে চলে যাও। এ ছাড়া আরো বহু ফজিলতে ভরপুর বরকতপূর্ণ ‘মুহাম্মদ’ নামটির মধ্যে। আর মেয়ে সন্তানের নামের শুরুতে মোছাম্মৎ লিখা হয় তা নিছক যা শুধুমাত্র রছম/প্রচলন বা প্রথাগত। বস্তুত এর কোন ফায়দা-উপকার নেই। কেননা ‘মোছাম্মৎ’ শব্দের অর্থ, যার নাম রাখা হয়েছে, ‘এতে কোন বরকত বা ফজিলত নেই। তাই কন্যা-মেয়ে সন্তানের নামের পূর্বে ‘মুছাম্মৎ’ যুক্ত করা অনর্থক ও বেহুদা। অতএব, অর্থপূর্ণ নাম রাখা প্রত্যেক মাতা-পিতার একান্ত কর্তব্য।
উল্লেখ্য, যার নাম মুহাম্মদ বা আহমদ রাখা হয়েছে অথবা নামের পূর্বে বরকত হাসিলের জন্য মুহাম্মদ নামটি যুক্ত করা হয়েছে তা ডাকার/আহ্বান করার সময় আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী। উক্ত নাম মুবারক যেন কটুভাবে বা বিশ্রী করে ডাকা না হয় সেদিকে সজাগ ও সতর্ক থাকা অপরিহার্য। [মালফুজাত-এ আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, কানযুল উম্মাল-১৬তম খন্ড, ও যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ্ হাসনাবাদ, সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমরা আউলিয়া কেরামের মাজারে যিয়ারতে যাই তখন মাজারে অনেকেই টাকা দেয়, এটা জায়েয কিনা? জায়েজ হলে কি উদ্দশ্যে দেবো জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: যে সব হক্কানী-রব্বানী আউলিয়ায়ে কেরামের পবিত্র মাজার শরীফে সংরক্ষিত টাকার বক্সে জিয়ারতকারী ও ভক্ত-অনুরক্তদের প্রদত্ত টাকা দ্বারা মাজার কমিটির আওতাধীন ও পরিচালনাধীন মসজিদ, মাদ্রাসা, হেফজখানা, এতিমখানার যাবতীয় খরচাদি (হোস্টেলে অবস্থানরত এতিম ও গরীব ছাত্রদের খানা-খোরাকী, লেখা পড়ার খরচ, শিক্ষক সাহেবানের সম্মানী ও মাদ্রাসার খাদেমগণের বেতনসহ ইত্যাদি) নির্বাহ করা হয় ওইসব মাজারে এ ধরনের দ্বীনী খেদমতের নিয়তে টাকা-পয়সা দান করা নেহায়ত উত্তম ও অনেক সাওয়াব। এ জাতীয় দান-খায়রাত দ্বীনের খেদমত ও সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আর যে সব মাজারে এ ধরনের দ্বীনী সেবামূলক কার্যক্রম চালু নাই; মাজারের টাকা বা বক্সের টাকা-পয়সা দিয়ে আওলাদ ও মতোওয়াল্লী বা খাদেমগণ আমোদ-ফুর্তি, গুনাহ্, নাফরমানীতে মশগুল, সেসব মাজারের বক্সে টাকা-পয়সা দান করা গুনাহ্। টাকা দিয়ে তাদের নাফরমানী ও কুকর্মকে সমর্থন করা ও সহযোগিতা করার নামান্তর। সুতরাং ওই টাকা দিয়ে কি হচ্ছে তা অবশ্যই খোঁজ-খবর নেয়া একান্ত ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ এ টাকা দিয়ে দ্বীনের, সমাজের এবং গরীব-দুঃখীর খেদমত হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে। নতুবা আল্লাহর দরবারে জবাব দিতে হবে। অবশ্য যে সব আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার শরীফে ভক্ত-অনুরক্তদের দেয়া টাকা-পয়সা জনহিতকর কাজে গরীব-অসহায় ও এতিম মিসকিনের লেখা-পড়া, সেবা এবং মাদ্রাসা এতিমখানা পরিচালনায় ব্যয় করা হয় সে সব মাজার পরিচালনা কমিটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
মুহাম্মদ গোলাম কাদের তানভীর
মধ্য বেতাগী, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: নামাযে সূরা ফীলের পর সূরা মাউন পড়লে বা সূরা নসর পড়ার পর সূরা ইখলাস পড়লে নামায মাকরূহ হয়? যদি মাকরূহ হয় নামায হবে কিনা? এ ক্ষেত্রে সূরাগুলো পড়ার নিয়ম জানালে উপকৃত হবো।
 উত্তর: হ্যাঁ, প্রথম রাকাতে বড় সূরা আর ২য় রাকাতে প্রথম রাকাতের পড়িত সূরার পরবর্তী একটি সূরা বাদ দিয়ে তার পরের বড় সূরা পড়া মাকরূহ। যেমন ১ম রাকাতে সূরা কাফিরূন পড়া এবং ২য় রাকাতে সূরা লাহাব পড়া মাঝখানে সূরা ‘নসর’ বাদ দেয়া অথবা প্রশ্নোল্লিখিত নিয়মে পাঠ করাও মাকরূহ। কেউ ভুলবশত যদি পাঠ করে তাহলে নামায হয়ে যাবে এবং ইচ্ছাকৃত এরূপ পড়লে গুনাহ্গার হবে, তাওবা করবে এবং ভবিষ্যতে এরূপ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। সুতরাং এসব সূরাগুলো পড়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পড়া এবং একটির পর ১টি সুরা বাদ দিয়ে পরের সূরা না পড়াই সঠিক নিয়ম। তবে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একটি সূরা পড়ে তার পরের দুই বা আরো অধিক সূরা বাদ দিয়ে ২য় রাকাতে ফাতেহার পর পরবর্তী সূরা পড়তে অসুবিধা নেই।
[দুররে মুহতার, ফাতাওয়া-এ রজভীয়্যা, ৩য় খন্ড, ১৩৬পৃ. মুমিন কি নামাজ, ৬৯ পৃষ্ঠা, ও আমার রচিত যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
মুহাম্মদ আল হাসান পূর্ব চরণদ্বীপ, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমরা গ্রামের কয়েকজন তরুণ মিলে আমাদের স্থানীয় জামে মসজিদে মাসিক গেয়ারভী শরীফ চালু করি। কয়েকমাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমাদের গাউসিয়া কমিটির মুরব্বিরা গেয়ারভী শরীফের জন্য হুজুর কেবলার অনুমতি আবশ্যক বলে অবহিত করেন। পরে শাজরা শরীফ দেখে আমরা নিশ্চিত হই। এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় প্রসঙ্গে জানালে উপকৃত ও কৃতজ্ঞ থাকব।
 উত্তর: অলিকুল স¤্রাট হযরত পীরানে পীর দস্তগীর গাউসুল আজমের তরিকাভুক্ত পীর-মাশায়েখ এবং অন্যান্য তরিকার বরহক মাশায়েখ কেরাম গাউসে পাকের ফয়েজ-করম, বরকত ও শুভ দৃষ্টি লাভের আশায় প্রতি চন্দ্র মাসের ১১ তারিখ রাতে বা দিনে বিশেষ নিয়মে এই গেয়ারভী শরীফ পালন এবং সালাত-সালাম শেষে আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে সকল মুমিন নর-নারীর জন্য দু‘আ করে থাকেন। এটাকে মূলত গেয়ারভী শরীফ বলা হয়। গেয়ারভী ও বারবী শরীফ আদায় অত্যন্ত বরকতময় ও কল্যাণকর। নিজের বাসা, বাড়ী, দফতরের নিকট খানকাহ্ থাকলে তখন উক্ত খানকাহ্ শরীফে গেয়ারভী শরীফের মাহফিলে শরীক হবে। বর্তমানে বহু জেলা, উপজেলায়, থানায় ইউনিয়নে সিলসিলার খানকা শরীফ রয়েছে, সেহেতু উত্তম হলো গেয়ারভী শরীফ ও বারভী শরীফ খানকাহ্ শরীফে আয়োজন করা হলে উক্ত খানকায় শরীক হওয়া। তবে ঘরে-বাসায়, দফতরে বা এলাকার পীরভাইদের নিয়ে কোন এক জায়গায় খতমে গেয়ারভী ও বারবী শরীফ আয়োজনের ক্ষেত্রে সিলসিলার মাশায়েখ-হযরাত, পীর-মুর্শিদ থেকে অনুমতি গ্রহণ করা অধিক কল্যাণ ও ফয়েজ বরকত লাভের জন্য অন্যতম ওসিলা।
অবশ্য ঘরে বাসা ও মসজিদে খতমে গাউসিয়া শরীফের জন্য নূতন করে হুজুর কেবলার অনুমতির প্রয়োজন নাই। হুযুর কিবলা (মু.জি.আ.)সহ সিলসিলার মাশায়েখ হযরাতের পক্ষ হতে গাউসিয়া শরীফ আয়োজন করার জন্য সকলের প্রতি আম ইজাযত রয়েছে। বিধায় আপনারা স্থানীয় জামে মসজিদে উক্ত তারিখে বা ভিন্ন তারিখে খতমে গাউসিয়া শরীফ ফয়েজ বরকত হাসিলের জন্য এবং করোনাসহ যাবতীয় বালা-মুসিবত হতে মুক্তি লাভের জন্য আয়োজন করতে পারবেন। মুস্তাহাব ও বরকতময়।
মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান- সুচক্রদন্ডী, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমার অর্শ্বরোগ অবস্থায় (কয়েকদিন যাবৎ) পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যাচ্ছে। এ অবস্থায় কি নামায পড়া যাবে? কিভাবে নামায পড়লে এ অবস্থায় শুদ্ধ হবে জানালে উপকৃত হবে। যাদের অবিরাম ফোঁটা ফোঁটা প্র¯্রাব হয়। তাদের নামাজ পড়া কি সঠিক হবে? কিভাবে নামায আদায় করলে সঠিক হবে জানালে ধন্য হব।
 উত্তর: সদা-সর্বদা অল্প অল্প বা অবিরাম প্র¯্রাবের ফোঁটা বা মজি বের হতে থাকলে, ঘন ঘন বায়ু নির্গত হলে, অর্শ্ব বা অন্য কোন রোগের কারণে পায়খানার রাস্তা দিয়ে ফোঁটা-ফোঁটা রক্ত বের হলে এবং চিকিৎসার পরও কোন প্রকার সুস্থতা বা নিরাময় না হলে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় উক্ত ব্যক্তি মা’জুর হিসেবে গণ্য হবে। এমন ব্যক্তি প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য নতুন করে অযু করবে এবং এ অযু দিয়ে উক্ত ওয়াক্তের ফরয, সুন্নাত, নফল, কাযা নামায, জুমা-জামাতসহ যত নামাজ পড়তে চাই পড়ে নিতে পারবে। এমনকি কোরআন তেলাওয়াত ও জুমার খোৎবা শুনা ইত্যাদি করতে পারবে। তবে মাজুর ব্যক্তি এক ওয়াক্তের অযু দ্বারা অন্য ওয়াক্বের ফরয, সুন্নাত বা নফলসহ কোন নামায আদায় করতে পারবে না। মাযুর ব্যক্তির ওযর যদি এতোবেশি হয় যে, যার কারণে কাপড় অপবিত্র হয়ে যায়, নাপাকি তথা প্র¯্রাব করাও, যদি এক দিরহাম হতে বেশি হয়, এটা ধৌত করে পবিত্র কাপড় পরিধান পূর্বক নামায পড়া যাবে, প্রবল ধারণা বা এতটুকু নিশ্চিত হলে উক্ত কাপড় তখন ধৌত করে নামাজ পড়া ফরজ। আর যদি এটা নিশ্চিত বা প্রবল ধারণা হয় যে, ধৌত করার পরও উক্ত পরিধানের কাপড় নামায পড়তেই আরো ততটুকু অপবিত্র হয়ে যাবে তখন ধৌত করা আবশ্যক নয়। এটা দ্বারা নামাজ আদায় করলে হয়ে যাবে। আর যদি নাপাকি এক দিরহাম বরাবর হয়, তখন ১ম বারে ধৌত করা ওয়াজিব। এক দিরহাম হতে পরিমাণে কম হলে ধৌত করা সুন্নাত। আর ২য় বারে সাধারণ ভাবে না ধৌয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। তাছাড়া যদি এমন কোনো ধরনের পদ্ধতি গ্রহণের কারণে ওযর দূরীভূত হয় বা ওযর কমে আসে তখন উক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করা ফরজ। যেমন কেউ দাড়িয়ে নামায পড়লে পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় বা রক্তের ফোঁটা এবং প্র¯্রাবের ফোঁটা বের হয় বা টপকায়; কিন্তু বসে বসে নামায আদায় করলে এসব ওযর হতে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যায় বা ফোঁটা টপকায় না তখন বসে নামায পড়া তার জন্য ফরজ। উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয় তাহলে পবিত্র কাপড় পরিধান করে এবং সম্ভব না হলে উক্ত কাপড়ে নামাজ আদায় করে নিবে, তবে ওযু করার সময় যতটুকু সম্ভব পানি ছিটিয়ে বা ধৌত করে নিবে। আর আন্ডারওয়ার, অন্তরবাস, টিসু পেপার ইত্যাদি ব্যবহার করে নাপাকি ছড়িয়ে পড়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে মাজুর ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্তে অযু করার সময় পরিধেয় কাপড়, লুঙ্গি, পায়জামা, আন্ডারওয়্যার ইত্যাদিতে সামনের দিকে বা সন্দেহ যুক্ত জায়গায় ভালভাবে পানি ছিটিয়ে দেবে।
[হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আ’লা মারাকিল ফালাহ্: ১৪৯ পৃ. দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ৫৬পৃ. হেদায়া-১ম খন্ড, ১৬০পৃ. বাহারে শরীয়ত ২য় খন্ড, ৩য় খন্ড-৬৯ নং পৃষ্ঠা ও আমার রচিত যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
প্রশ্ন: আমাদের কাছে যাকাতের কিছু টাকা বাকী আছে, এ টাকা থেকে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার মুসলমানদের জন্য (যারা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান নিয়ে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায় আছেন) তাদের সাহায্য করা যাবে কিনা? করলে যাকাত আদায় হবে কিনা? উত্তর আশা করছি।
 উত্তর: যাকাত আদায় করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত। ইসলামে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য-ভ্রাতৃত্ব ও সুষম সম্পদ বন্টন ও এবং গরীব-অসহায়দের কষ্ট লাঘবের নিমিত্তে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা যাকাতের ব্যবস্থাপনা প্রদান করেছেন। আর তাই স্বয়ং রাব্বুল আলামীনই যাকাত আদায়ের খাতসমূহ সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে হযরত সিয়াদ ইবনে হারেম আস্ সুদাই রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, জনৈক সাহাবী রাসূলে পাকের দরবারে হাজির হয়ে যাকাতের জন্য প্রার্থনা করলেন। তখন প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাকে (তার সুস্থ দেহ বিশিষ্ট দেখে) বললেন, দেখ যাকাতের খাত নির্ধারণ আল্লাহ্ তা‘আলা কোন নবী কিংবা অন্য কারো হাতে না রেখে নিজেই ৮টি ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন। তুমি সে ৮ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত থাকলে আমি তোমাকে যাকাতের অংশ দিতে পারি। অন্যথায় নয়। [আবূ দাউদ শরীফ ও মিশকাত শরীফ, কিতাবুয্ যাকাত] তাই পবিত্র কুরআনে বর্ণিত, যারা অভাবগ্রস্থ, নিতান্ত নিঃস্ব, যারা যাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত, যাদের অন্তরসমূহ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার মানষে, (এ খাত পরবর্তীতে রহিত হয়ে গেছে।) ক্রীতদাস মুক্তি, ঋণ মুক্তির জন্য, আল্লাহ্র পথে এবং মুসাফিরের জন্য যাকাত-প্রদান করা যাবে। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। [সূরা তাওবা, আয়াত-৬০] সুতরাং দেশে বা পার্শ্ববর্তী এলাকার গরীব আত্মীয়-স্বজন, অসহায় ব্যক্তিরা হলো যাকাত পাওয়ার প্রথম হকদার। এ দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের প্রতি যাকাতের অংশ আদায় করা যাবে। অন্যান্য গরীব-অসহায়দের মধ্যেও যাকাত প্রদান করাতে অসুবিধা নেই।
তবে দেশের বাইরে অন্য দেশের যেখানে মুসলমানগণ নির্যাতিত এবং অসহায় হলে তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে। যদি যথাযথভাবে তাদের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা ও সুযোগ থাকে। যেন তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া যাকাতের অংশ/টাকা মাঝ পথে লুটপাট হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা  একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা: প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •