মুহাম্মদ আবূ আহমদ-সভাপতি গেড়ামারা (বড়থলি) জামে মসজিদ, মাঈন উদ্দীন (সর্দার)-ক্যাশিয়ার, আবদুর রউফ মাস্টার- সম্পাদক, সালাউদ্দীন- পেশ ইমাম।
থানা: জোরারগঞ্জ, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: জোরারগঞ্জ, মিরসরাই বড়থলি জামে মসজিদে ২০০৫ সাল হতে মুসল্লিগণ ৫ ওয়াক্ত নামায ও জুমার নামায আদায় করে আসছেন। আমাদের সমাজের প্রায় লোক উক্ত মসজিদ হতে দুরত্বে অবস্থান করায় অনেক সময় নামায মসজিদে আদায় করতে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। কারণ মসজিদটি গ্রামের এক পার্শ্বে। তাই এলাকার মুসল্লিদের মতামতের ভিত্তিতে গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা ক্রয় করা হয়। এ ব্যাপারে গত ১০/০৯/২০২১ইং শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার সময় অত্র সমাজবাসী ও এলাকাবাসী একটি জরুরি সভার আয়োজন করেন। মসজিদের কমিটি, সমাজবাসী ও এলাকাবাসী সবাই নতুন মসজিদ তৈরি করার জন্য ঐক্যমত পোষণ করেন। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হল: আমরা পুরাতন মসজিদটিকে কি করব? কেউ কেউ বলল মক্তব করার জন্য আবার কেউ কেউ বলছে নূরানী মাদ্রাসা করার জন্য। অর্থাৎ পুরাতন মসজিদ কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়? সম্মানিত মুফতি সাহেবানের নিকট আমাদের আবেদন যে, উপরোক্ত বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক ফতোয়া/ফয়সালা প্রদানে চিরকৃতজ্ঞ করবেন।
উত্তর: উপরোক্ত বিষয়ে প্রদত্ত বিবরণ পর্যালোচনা করে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক এই মর্মে ফতোয়া/ফায়সালা প্রদান করা যাচ্ছে যে, জোরারগঞ্জ থানার অন্তর্গত ১নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গেড়ামারা (বড়থলি) জামে মসজিদে যেহেতু দীর্ঘদিন যাবৎ নামায-কালাম ও জুমা জামাত হয়েছে বিধায় উক্ত পুরাতন মসজিদের চিহ্নিত জায়গাটি (মূল মসজিদ বারান্দাসহ) কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবে সাব্যস্ত থাকবে। যেমন হানাফি মাযহাবের অন্যতম নির্ভরযোগ্য কিতাব আদ্দুররুল মোখতার কৃত: ইমাম আলাউদ্দীন হাসকফী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ ইসলামী ফিক্হের নির্ভরযোগ্য ফতোয়া গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে- ان المسجد الى عنان المساء অর্থাৎ নিশ্চয় মসজিদ আসমান পর্যন্ত।
আর রদ্দুল মোহতার-এ আল্লামা ইবনু আবেদীন শামী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন- كذا الى تحت الثرى অর্থাৎ তদ্রুপ মসজিদ সর্বনি¤œ তাহতুছ্ ছারা পর্যন্ত।
বস্তুত মসজিদের চিহ্নিত জায়গা (বারান্দাসহ) বরাবর উপরে আসমান ও নি¤েœ তাহতুছ্ ছারা পর্যন্ত মসজিদ হিসেবে নির্ধারিত। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া উক্ত নির্ধারিত মসজিদ শহীদ করা বা ভেঙ্গে আগের চেয়ে ছোট করা বা মসজিদের বারান্দাসহ চিহ্নিত জায়গায় দুনিয়াবী কোন প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, এমনকি মসজিদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে সেখানে ধর্মীয় কোন প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা, খানকাহ্ ইত্যাদি করা হারাম।
তবে বিশেষ প্রয়োজনে খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়া আল্লাহ্র ওয়াস্তে মুসল্লি সংকুলান না হলে কিংবা মসজিদ জরা-জীর্ণ বা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলে উক্ত মসজিদকে শহীদ করে উক্ত জায়গায় নতুন করে বড় আকারে মসজিদ সম্প্রসারণ করা ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত। আর যদি পুরাতন মসজিদ আয়তনে ছোট হয়, সামনে ও পার্শ্বে পুরাতন মসজিদের স্থানে মসজিদের চিহ্নিত জায়গায় পুনরায় উক্ত মসজিদকে বড় আকারে সম্প্রসারণ করা সম্ভব না হয় এবং উক্ত পুরাতন মসজিদের পার্শ্বে বা কিছু দুরে বড় আকারে মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় একান্ত বিশেষ প্রয়োজনে অধিকাংশ এলাকাবাসী ও পুরাতন মসজিদ কমিটির যৌথ উদ্যোগে/পরামর্শক্রমে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা যায়। সেখানে জুমা-জামাত পড়লে শরীয়ত মোতাবেক অসুবিধা নেই। তবে প্রথম ও পুরাতন মসজিদকেও মসজিদ হিসেবে সংরক্ষণ ও হেফাজত করতে হবে। পূর্বের ন্যায় আদব-সম্মান বজায় রাখতে হবে। সব সময় নফল ইবাদত, নফল নামায, ওয়াজ-নসীহত, ক্বোরআন তেলাওয়াত, মাসিক বা সাপ্তাহিক খতমে গাউসিয়া শরীফ, জিকির-আজকার, মিলাদ-কিয়াম ও দো‘আ-মোনাজাতের মাধ্যমে উক্ত পুরাতন মসজিদকেও আবাদ রাখতে হবে। উক্ত পুরাতন মসজিদকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবহেলা, বিলুপ্ত ও বেইজ্জত করা যাবে না। নতুন-পুরাতন উভয় মসজিদের আদব, সম্মান, হেফাজত ও সংরক্ষণের প্রতি লক্ষ্য রাখা মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীসহ সকল মুসলমানের উপর একান্ত অপরিহার্য। অবহেলা ও অসম্মানজনক আচরণ করা হারাম ও মারাত্মক অপরাধ। এ বিষয়ে ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত আ‘লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
جبكه اس مسجد كو مسلمانوں نے مسجد كرليا يه بهى مسجد هو گئى- مسجد اول كى اور اس كى دونوں كى حفاظت و ابادى فرض هے- مسجد اول كو منهدم كر كے تعمير دنياوى تعمير دينى ميں هى شامل كر دنيا حرام حرام سخت حرام هے-
অর্থাৎ এই নতুন মসজিদটিও এলাকার মুসলমানগণ মসজিদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং এটাও মসজিদে পরিণত হয়েছে। প্রথম মসজিদ (পুরাতন মসজিদ) এবং এ (নতুন) মসজিদ উভয়টিকে সংরক্ষণ ও ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা ফরয। প্রথম মসজিদকে বিলুপ্তি করে সেখানে দ্বীনি বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করাও হারাম, হারাম ও শক্ত হারাম। [ফতোয়ায়ে রজভীয়া: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৫৯০]
তদ্রুপ রদ্দুল মোহতার, ফতোয়ায়ে আলমগীরি (ফাতোয়ায়ে হিন্দিয়া), ফতোয়ায়ে শরয়ীয়া ৪র্থ খন্ডে এবং বাহারে শরীয়ত ১০ম খন্ডে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং মুসল্লি সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে গেড়ামারা (বড়থলি) জামে মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং উক্ত পুরাতন মসজিদের পার্শ্বে পুরাতন মসজিদকে বড় আকারে নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিশেষ প্রয়োজনে কিছু দূরে মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় বড় আকারে নতুন মসজিদ নির্মাণ করতে কোন অসুবিধা নেই। নতুন মসজিদ নির্মাণ হওয়ার পর পুরাতন মসজিদকে পূর্বের ন্যায় হেজাফত, সংরক্ষণ করবে ও আদব-সম্মান বজায় রাখবে এবং ইবাদত বান্দেগী, নফল নামায, ওয়াক্তিয়া নামায, ওয়াজ নসীহত, ক্বোরআন-তিলাওয়াত, মাসিক বা সাপ্তাহিক খতমে গাউসিয়া শরীফ, সুন্নি নূরানী মাদ্রাসা, জিকির-আজকার, মিলাদ-ক্বিয়াম, সালাত-সালাম ও দো‘আ-মোনাজাতের মাধ্যমে আবাদ রাখবে। যেহেতু এলাকার অধিকাংশ মুসলমানদের সম্মতিক্রমে নতুন মসজিদ তৈরি করা হবে। ফলে তাও শরীয়ত মোতাবেক মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় নতুন ও পুরাতন উভয় মসজিদেকে নিয়ে ফিতনা ফ্যাসাদ যেন সৃষ্টি না হয়, এলাকাবাসী সকলেই সেদিকে সুদৃষ্টি রাখবেন এবং ভবিষ্যতে ফিতনা-ফ্যাসাদ না হওয়ার জন্য এলাকাবাসী সকলের সহযোতিায় জুমা-জামাত সকলে একত্রে নতুন মসজিদে আদায় করবেন। কেউ কেউ ইচ্ছা করলে পুরাতন মসজিদে পাঞ্জেগানা নামায আদায় করতে পারবেন। তবে এ নিয়ে যেন ফিতনা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। উপরোক্ত বিষয়ে এটাই ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া/ফায়সালা।
মুহাম্মদ আবূ জায়েদ রাইয়ান
শিক্ষার্থী: সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই কথটি কতটুকু শরীয়ত সম্মত; জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এ কথাটি ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়। ‘‘বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ গ্রহণ করা মুমিন নর-নারীদের জন্য অসুবিধা নেই।’’ এ কথা মূলত: ইসলামী রীতি-নীতিকে বিসর্জন দেয়ার নামান্তর। যেমনিভাবে অমুসলিম বিধর্মীদের সাথে মুসলিম নর-নারীর বিবাহ্-শাদী এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি করার ইসলামে অনুমোদন নেই। তদ্রুপ তাদের ধর্মীয় উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করার অনুমতি নেই। তবে বিধর্মীদের সাথে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। যাতে ধর্ম নিয়ে পরস্পর কাদা-ছুড়াছুড়ি না হয়। এবং ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশে ও সমাজে অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা ও হানা-হানি সৃষ্টি না হয়। দেশ ও রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজমান থাকে। যেহেতু الفتنة اشد من القتل অর্থাৎ ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা হত্যা-খুন-খারাবীর চেয়েও মারাত্মক অপরাধ। [আল্ ক্বোরআন]
ইসলাম শান্তির ধর্ম, মুসলিম-অমুসলিম কারো প্রতি অবিচার-অত্যাচার করা, অহেতুক ঝগড়া সৃষ্টি করা এবং কোন নিরীহ অমুসলিমের সাথে অন্য মুসলমানের অসৎ আচরণ করা ইসলামী শরীয়তে জুলমের শামীল। আর জুলম হল মহাপাপ তথা কবিরা গুনাহ্।
কোন অমুসলিম কারো দ্বারা জুলুমের বা অবিচারের শিকার হলে বা বৈশ্বিক মহামারীর মত অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্গোগে তথা ভূমিকম্প, প্লাবন ও তুফানে দিশাহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত হলে পার্শ¦বর্তী মুসলিম নর-নারী মানবতার খাতিরে সাধ্যমত তাদের সহযোগিতা ও সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এটা ইসলামের মহান আদর্শ ও উদারতা, যাতে অমুসলিমগণ ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণীত হওয়ার সুযোগ পায়। অবশ্য এ কথা চূড়ান্ত যে, প্রত্যেক ধর্মের রীতি-নীতি যেভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় উৎসবও আলাদা আলাদা। এটাই বাস্তবতা। তবে অমুসলিম বিধর্মীদের সাথে মুসলমানদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করা বৈধ ও জায়েয।
মুহাম্মদ হাসানুর রশিদ
পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কোন ব্যক্তির পাওনা অর্থ পরিশোধ বাকি আছে। কিন্তু তার নাম ও ঠিকানা ভুলে গেছি। এখন কিভাবে উক্ত ব্যক্তির অর্থ পরিশোধ করতে পারি? শরীয়তের আলোকে জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: তাকে তালাশ করতে হবে। তার খোঁজ খবর নিতে হবে। তিনি মৃত্যু বরণ করলে তার ছেলে সন্তান অলি ওয়ারেছের নিকট তার পাওনা অর্থ/কর্জ বা ধার পরিশোধ করতে হবে। এক বৎসর যাবৎ বা এর বেশী সময় তালাশ করার ও খোজ-খবর নেয়ার পর যদি তার কোন সন্ধান পাওয়া না যায় এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও না থাকে তখন তার পাওনা তার পক্ষ হতে সাদকা স্বরূপ কোন গরীব অসহায়কে প্রদান করবে।
মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন সাদা (রোকন)
পাইরোল (সাদার পাড়া)
পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ইসলামে বিজয় দিবস পালনের রীতি বা পদ্ধতি কি জানানোর জন্য অনুরোধ রইল।
উত্তর: বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও অন্যান্য জাতীয় দিবস সমূহ ক্বোরআন তেলাওয়াত, খতমে গাউসিয়া, মিলাদ শরীফ, দরূদ-সালাম, দো‘আ-মোনাজাত, আলোচনা সভা, ভাল অর্থবোধক কবিতা আবৃত্তি করা এবং পরিশেষে খানা/তবাররুকাত পরিবেশনের মাধ্যমে পালন করা এবং মহান আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উত্তম তরিকা ও সওয়াব। আর অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, যুবক-যুবতীদের অশ্লীল নাচ-গান তথা অবৈধন্থায় বিজয় দিবস বা জাতীয় দিবস সমূহ পালন করা নাফরমানী ও মারাত্মক গুনাহ্।
মুহাম্মদ মিনহাজুর রহমান
গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ১. পটিয়া ফার্স্ট সিকিরিউটি ইসলামী ব্যাংক শাখার ইবাদতখানায় জুহরের নামাযের ঠিক সময়ে আজান দেওয়ায় সুন্নাত পড়ে বসে থাকি দেড়টায় জামাত হবে আশায়। ২টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর ইমাম সাহেব বললেন ব্যাংকের ম্যানেজার যতক্ষণ পর্যন্ত নামায পড়তে না আসেন, ততক্ষণ উনার জন্য মুসল্লিদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। শুনলাম উনি কাজে বেশী ব্যস্ত। তাই যত দেরীতে আসুক তবুও অপেক্ষা করতে হবে। প্রতিদিন যদি এরূপ হয় তাহলে নামায সঠিক হবে কিনা? মনে করলাম কাজকে প্রাধান্য দিলেন আর নামাযকে গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিলেন না। এই ম্যানেজার সাহেবের কারণে সবার নামায সঠিক হবে কি না?
উত্তর: ম্যানেজার বা অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করে নামায জামাতে আদায় করলে নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রতিদিন এভাবে দু’একজন কর্মকর্তার জন্য বসে থাকা অনুচিত।
প্রশ্ন: ২. গ্রামে কোন মানুষের মুত্যু হলে, দাফন করার সময় মৃত ব্যক্তির ঘর থেকে কিছু খাবার সামর্থানুসারে কিছু চাল, ফল, ও টাকাসহ কোন দরিদ্রকে দেন। আবার অনেকে এরূপ করেন না। এর ফযিলত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব। না দিলে অসুবিধা হবে কিনা? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: সাদকা ও ইসালে সওয়াব বা মৃত ব্যক্তির রূহে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদের সামর্থ অনুযায়ী দাফনের আগে-পরে কিছু চাল, ফল, টাকা বা অন্যান্য হালাল বস্তু ফকির/মিসকিনকে প্রদান করা জায়েয ও ভাল। সাদকা-খাইরাত দ্বারা বলা-মুসিবত দূর হয়, মৃত ব্যক্তির গুনাহ্ মাফ হয়, তাঁর রূহে সওয়াব পৌঁছে আর না দিলে অসুবিধা নেই।
মুহাম্মদ জাবেদ, আসিফ ও লিয়াকত
বুড়িশ্চর, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: পীর মধ্যপ্রাচ্যে এবং মুরিদ চট্টগ্রামে এমতাবস্থায় ইন্টারনেটে ভিডিও কলের মাধ্যমে পীর-মুরিদী করা তথা বাইয়াত করানো ইসলামী শরীয়ত/সুন্নত সম্মত কিনা? জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: কামিল সুন্নি শাইখ বা পীরের হাতে ইসলাম ও ঈমানের উপর অবিচল ও অটল থাকার জন্য আল্লাহ্-রাসূলের আদেশ-নির্দেশ মান্য করার জন্য এবং আল্লাহ্-রাসূল যা নিষেধ করেছেন তা হতে দূরে থাকার জন্য পুরুষদের ক্ষেত্রে শাইখ বা পীরের হাতে হাত দিয়ে বা রুমাল/চাদরের মাধ্যমে আর মহিলার ক্ষেত্রে রুমাল/চাদরের মাধ্যমে অথবা পীরের মুখে মুখে বাইয়াত গ্রহণ করা তথা অঙ্গিকার করা সুন্নাত। সাহাবায়ে কেরাম সরাসরি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে হাজির হয়ে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। আর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ওফাত শরীফের পর হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র সামনে, তাঁর ওফাত শরীফের পর হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র সামনে, তাঁর ওফাতের পর হযরত ওসমানগণি রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র সামনে, তাঁর শাহাদাতের পর হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র সামনে, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীনগণ সরাসরি বাইয়াত গ্রহণ করেছেন যা সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, তাফসীরে খাযায়েনুল ইরফান, তাফসীরে কবির, তাফসীরে রুহুল মা‘আনী ও তাফসীরে মাদারেকসহ নির্ভরযোগ্য তাফসীর ও হাদীসের অসংখ্য কিতাবে বর্ণিত আছে- সরাসরি শাইখ বা পীরের সামনে হাজির হয়ে বাইয়াত গ্রহণ করাই হল সুন্নাত তরিকা। যুগে যুগে তরিকতের কামিল আল্লাহ্ ওয়ালা শাইখ ও পীরানে তরিকত উক্ত পদ্ধতি তথা সুন্নাত তরিকা মোতাবেক শীষ্য ও অনুরক্তগণকে বাইয়াতের মাধ্যমে শরীয়ত ও তরিকতের দীক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সরাসরি উপস্থিত না হয়ে ইন্টারনেট বা ভিডিও কলের মাধ্যমে এক দেশ হেতে আরেক দেশে বাইয়াত করা সুন্নাত তরিকা এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন ও বুজর্গানে দ্বীনের যুগ যুগ ধরে প্রচলিত নিয়মের বরখেলাপ ও পরিপন্থি। যেমন পঞ্জেগানা নামায ও জুমার নামাযের জন্য প্রত্যেক মসজিদে মুয়াজ্জিন কর্তৃক সরাসরি আজান দেয়াই সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে প্রচলিত নিয়ম ও ইসলামী বিধান। তদ্রুপ জুমা ও ঈদের নামাযে খোতবা প্রদান। আযান ও খোতবা প্রদান যেভাবে ইন্টারনেট ও ভিডিও কলের মাধ্যমে এক স্থান হতে সর্বত্র সম্প্রচার করা ইসলামী শরীয়তের প্রচলিত তরিকার পরিপন্থি তদ্রুপ বাইয়াতের মাসআলা। তদপুরি ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেজা ফাযেলে বেরলভী, তাজুশ শরীয়া আল্লামা আখতার রেজা আযহারী ও বিশ্ব বরেণ্য ফকিহ্ মুফতিগণের মতে অনলাইন, ইন্টারনেট, ভিডিও সহ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিষয় সম্পাদন করা যেমন: বিবাহ্-শাদী, সাক্ষদান ও সাক্ষী গ্রহণ ইসলাম সমর্থিত নয়, বরং তা সরাসরি হতে হবে। তবে এসব যান্ত্রিক মাধ্যম দুনিয়াবী বিষয়ে ব্যবহার যোগ্য, শরয়ী বিষয়ে নয়। অতএব প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে নয়, বরং সুন্নাত তরিকা অনুযায়ী বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে সামনা-সামনি। অবশ্য ইন্টারনেট, ভিডিও বা মোবাইলের মাধ্যমে ভক্ত-অনুরক্তদের জন্য দো‘আ-মুনাজাত করতে অসুবিধা নেই।
সৈয়দ মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান শাহরিয়ার
হালিশহর দক্ষিণ মধ্যম, বন্দর, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: একজন মাওলানা ওয়াজ মাহফিলে বলেছেন আল্লাহর ওলী হতে হলে আলিম হতে হবে। আমরা জানি অনেক ওলী আছেন যারা আলিম নন। কোন কামিল ওলীর সোহবতে বা রিয়াযত ও সাধনা করে বেলায়ত লাভ করতে পারবে কিনা?
উত্তর: স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করে অলি বা আল্লাহ্র বন্ধু বা প্রিয় হওয়া অসম্ভব নয়। যদি ঈমান ও আমল বিশুদ্ধ হয় এবং প্রকৃত হক্কানী পীর অলি-বুজর্গের সোহবতে ও ফয়েজ প্রাপ্ত হয়ে বেলায়ত লাভ করা সম্ভব। এমন কি লেখা-পড়া মোটেই জানে না কিন্তু ঈমান আক্বিদা মজবুত ও মুত্তাকী আর নামায-রোযা, ইবাদত-রিয়াযতে মশগুল ব্যক্তি হক্কানী অলি বা আলিমে রাব্বানীর নিগাহে করম ও দো‘আর বরকতে আল্লাহ্ রাসূলের মেহেরবানী ও দয়ায় অলি বা আল্লাহ্র বন্ধু হওয়া যায়। এ ধরণের হক্কানী আলেম ও অলি বুজর্গের অনেক খাদেম লেখা-পড়া জানে না এরকম একনিষ্ঠ ভক্ত-অনুরক্ত তাঁদের সোহবত ও বিশেষ শুভদৃষ্টির বদৌলতে মৃত্যুর আগে অলি হয়ে কবর জগতে গিয়েছেন। এ ধরনের অনেক বর্ণনা ও প্রমাণ বাহজাতুল আসরার কৃত: ইমাম শাতনূফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও জামেয়ূ কারামাতিল আউলিয়া কৃত: আল্লামা ইউসূফ নাবহানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহে বর্ণিত আছে। এটা আল্লাহ্র খাস দয়া ও কৃপা- যিনি যাকে চান দান করতে পারেন। كما قال الله تعالى الله يختصّ برحمته من يشاء و الله ذو الفضل العظيم- অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে চান বিশেষ রহমত ও কৃপা দ্বারা ধন্য করেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলা মহান অনুগ্রহ দানকারী। [আল্ ক্বোরআন]
তবে এ ময়দানে ভন্ড-প্রতারক ও ধোকাবাজ, বেঈমান, বেআমল, বেনামাযী, মরদুদ, জাহিলদের ধৌরাত্ম ও ভন্ডামী বর্তমান ফিত্না-ফ্যাসাদের যুগে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশী বিধায় সজাগ থাকা ও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রত্যেক ঈমানদার নর-নারীর জন্য অপরিহার্য। এ ধরণের ভন্ডদের খপ্পরে পড়লে ঈমান-আমল ও দুনিয়া-আখিরাত উভয়টা বরবাদ হয়ে যাবে। এ কুল ওকুল উভয়টা হারাবে। অবশ্য পীর বা মুর্শিদ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইলমে দ্বীন (হাদিস, ফিকহ্ তাফসীর ও তাজবিদ সহকারে কেরাত পাঠ ও প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েলের জ্ঞান থাকা অবশ্যই জরুরি ও অপরিহার্য। কারণ শাইখ বা মুর্শিদের নিকট প্রয়োজনীয় ইলমে দ্বীন ক্বোরআন-সুন্নাহ্ ও ফিক্হ এর জ্ঞান না থাকলে তিনি মুরিদান ও শীষ্যদেরকে সঠিক পথ কিভাবে দেখাবেন? خفته را خفته كى كند بيدار (ফার্সী প্রবাদ বাক্য) অর্থাৎ ঘুমন্ত ব্যক্তিকে আর এক ঘুমন্ত ব্যক্তি কিভাবে জাগ্রত করবেন? তা সম্ভবপর নয়। হ্যাঁ কোন উম্মীকে ওস্তাদ/শিক্ষকের নিকট মেশকাত, জালালাইন ও হেদায়সহ কোন শিক্ষা লাভ করেনি। কিন্তু আল্লাহ্ আয্যাওয়া জাল্লাহ্ বিশেষ দয়ায় তাঁকে ইলমে লাদুন্নী/বাতেনী ইলম দান করেছেন। যেমন হযরত খাজায়ে খাজেগান সাহেবে মায়ারেফে লাদুন্নিয়া সৈয়দুনা খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তাঁদের বিষয় ভিন্ন। তাঁরা লাওহে মাহফূজের জ্ঞানে জ্ঞানী, তাদের ইলম ও জ্ঞানের সাথে জাহেরী আলিমের জ্ঞানের সাথে কোন তুলনা হয় না। বরং তুলনা করাটা চরম বেয়াদবী ও বদনসীবী।
এ বিষয়ে ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা মুহাদ্দিসে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় ফতোয়ায়ে আফ্রিকায় এবং আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘‘জামে কারামাতিল আউলিয়া’’ কিতাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সর্ব সাধারণের জন্য পূর্বে যা আলোচনা করা হয়েছে তা যথেষ্ট।
এস. এস. সালাহ উদ্দীন মোর্শেদ
হালিশহর দরবার শরীফ, বন্দর, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি বলল যে, তোমরা হুযূর কিবলার ফাতিহা করো ঠিক আছে, কিন্তু তাঁর খলিফাগণের ফাতিহা করার কি দরকার? এটা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের আলোকে যে কোন মৃত ঈমানদার নরনারীর ঈসালে সওয়াবের জন্য ফাতেহাখানী-দো‘আ-দরূদ ও তার্বারুক তথা খানা পরিবেশনে কোন সমস্যা ও অসুবিধা নাই। বরং পীর-মুর্শিদ সহ মুর্শিদের খলিফা ও ওফাত প্রাপ্ত মুরিদানের রূহে ও কবরে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য ফাতেহা খানি করা, খতমে ক্বোরআন, খতমে গাউসিয়া আলিয়া সহ জিকর-আজকার, ওয়াজ-নসীহত ও দো‘আ-দরূদ ও তাওফিক/ সামর্থ্য থাকলে জিয়াফতের/ তাবাররুকাতের আয়োজন করা অনেক সওয়াব ও কল্যাণময়। এমনকি স্বীয় মরহুম মা-বাবা ও মুরব্বীদের জন্যও ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে ফাতেহা খানির ব্যবস্থা করা সওয়াব ও মুস্তাহাব। এ জাতীয় ইবাদত থেকে আল্লাহ্র বান্দাগণকে বাধা দেয়া অথবা অনুৎসাহিত করা গুনাহ্ ও অপরাধ। প্রশ্নে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা জ্ঞানী ও নেক্কার ব্যক্তির কথা নয়। এ সব কথায় কান না দেয়াই শ্রেয়।
চৌধুরী এ আর ইসলাম
দ্বাদশ শ্রেণি: সরকারি মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমার বোনের স্বর্ণ শাশুড়ীর কাছে জব্ধ আছে। এ স্বর্ণের যাকাত আদায় কি আমার বোনের উপর ফরয হবে, নাকি তার স্বামীর উপর, নাকি তার শাশুড়ীর উপর হবে? যেহেতু তার ১০ ভরি স্বর্ণ শাশুড়ী জব্দ করে রেখেছে।
উত্তর: উক্ত ১০ ভরি স্বর্ণলাঙ্কারের মালিক যদি আপনার বোন হয় যদি তাকে মহর বাবৎ বিবাহের সময় তা দেয়া হয়েছে অথবা উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। সর্ব অবস্থায় সে তার মালিক হয়েছে। মালিক হতে তার সম্মতি ছাড়া শাশুড়ী বা স্বামী বা ঘরের কেউ আপনার বোনের স্বর্ণলঙ্কার জব্দ করা তা আত্মসাত করার নামান্তর। যা জঘন্যতম অপরাধ ও গুনাহ্ তবে তার সম্মতিতে শাশুড়ী বা স্বামী তা হেফজাত ও সংরক্ষণ করতে অসুবিধা নাই বরং উত্তম। আর জব্দ করার পর তা যদি আপনার বোনকে ফেরৎ না দেয় তাদের হাতে জব্দ থাকাকালীন আপনার বোনকে উক্ত ১০ ভরি স্বর্ণের যাকাত আদায় করতে হবে না। যখন তাকে ফেরৎ দিবে তখন থেকে প্রত্যেক বৎসর আপনার বোনকে তার যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি স্বামী বা শাশুড়ী আপনার কোনের রাজী-রগবতে উক্ত ১০ ভরি স্বর্ণ হেফাজতে রাখে তখন প্রত্যেক বৎসর স্বামী বা শাশুড়ী মালিক অথবা আপনার বোনকে বলে তার যাকাত আদায় করবে। উপরোক্ত বিষয়ে এটাই ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা।
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা: প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।