ঐক্যের মূল ভিত্তি হোক সুন্নী আক্বীদা

0

আল্লামা কাযী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দীন আশরাফী

ঐক্য-অনৈক্য এ দুটি শব্দ নিয়ে প্রত্যেক দল-মতের অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই আলোচনা অব্যাহত। প্রত্যেকেই ঐক্যের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখতে মোটেই কার্পণ্য করে না। অপরদিকে অনৈক্যের ক্ষতি সম্পর্কে যথেষ্ট সোচ্চার দেখা যায় মানুষকে। এসব দেখে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই আসতে পারে যে, প্রত্যেকই যদি ঐক্যের পক্ষে হয়- তাহলে প্রায়সব ক্ষেত্রেই এতো অনৈক্য সৃষ্টি হয় কিভাবে। এর সহজ উত্তর হলো- ঐক্যের বুলিটুকু মুখে উচ্চারিত হচ্ছে মাত্র, অন্তরে লালন করছে অনৈক্যের সব কূট-কৌশল। আমরা ছাত্রজীবন থেকেই ঐক্যের পক্ষে বক্তব্য শুনতে শুনতে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত অনৈক্যের বিষবৃক্ষ নতুন শাখা-প্রশাখার জন্ম দিচ্ছে। সব চেয়ে দুঃখজনক চরম হতাশার বিষয় একই আক্বীদা-বিশ্বাসীদের মধ্যে নানা ধরনের অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা। যা মূল আক্বীদা বিশ্বাসের প্রচার-প্রসারে, প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে, সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে হক আক্বীদার উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার মত মৌলিক কাজে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে চলেছে। বাস্তবতা যাই হোক ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তাই সত্যিই ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে তার একটি মূলভিত্তি ঠিক করতে হবে এবং তারই আলোকে ঐক্য-প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। বর্তমান বাস্তবতাকে পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় দিবালোকের মত স্পষ্ট হচ্ছে যে, সুন্নী মুসলমানদের ঐক্যের মূলভিত্তি সুন্নী আক্বীদাই এ সত্যটি সবার জানা থাকা সত্ত্বেও অনৈক্যের মূল কারণ হলো- আন্তরিকতার অভাব, সংকীর্ণ দৃষ্টি ভঙ্গি, নিজস্ব বলয় সৃষ্টির চরম আবহ, সীমীত পরিমন্ডলে অবস্থান করে নিজের স্বার্থসিদ্ধির ঘৃণ্য মানসিকতা, পদ-পদবির প্রতি লালসা। এ অগ্রহণযোগ্য মানসিকতার কারণে বাস্তবক্ষেত্রে কাংক্ষিত সাফল্য আসবে না জেনেও ঐ পথে চলে- যা অন্ত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটি আমাদের চলার পথে বারংবার চরম বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ বাধাটার মূলোৎপাঠন করতে হলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে সুন্নী ওলামা মাশায়েখকে। তাই ‘‘ঐক্যের কোন বিকল্প নেই’’ বিষয়টি যদি ওলামা মাখায়েখ অতীব গুরুত্বসহকারে না নেন- তাহলে ময়দানে অনৈক্য হ্রাস পাবার পরিবর্তে বৃদ্ধিই পাবে নিঃসন্দেহে।
সুন্নী অঙ্গণে অতীতের বিভক্তির সঠিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিষয়টি প্রত্যেকের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে মনে করি। তাই বিষয়টিকে মনযোগসহকারে পাঠ করার অনুরোধ করছি। কোন সম্প্রদায়-এর লোকজন অসংগঠিত অবস্থায় থাকলে সেক্ষেত্রে ঐক্য-অনৈক্যের প্রশ্ন আসে না। সব বিষয় সমানে আসে যখনই কোন মতাদর্শকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার মহান উদ্দেশ্যে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় এগুতে যায়। কারণ, তখন উপরোক্ত অগ্রহণযোগ্য মানসিকতার মানুষগুলো বেশতৎপর হয়ে উঠে। আর নিজেদের ঘৃণ্য মানসিকতা নিয়ে মাঠে ময়দানে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়। এ ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যক্তি সংখ্যা খুবই নগন্য। তবে এ নগন্য সংখ্যাই জঘন্য কাজ করতে পারে- এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ গঠন করা কঠিন- ভাঙ্গা সহজ; একটি বিল্ডিং নির্মাণে কত সময় লাগে আর ভাঙ্গতে কত অল্প সময়ে সম্ভব হয়- তা কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই বাস্তবিকরূপ জানি। সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও তাই বাস্তব। আমরা সমাজে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কমপক্ষে চার ধরনের মানুষ দেখতে পাই।
এক. যাঁরা নিজের মূল আদর্শ বাস্তবায়নে সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা আন্তরিক ও তৎপর। এ শ্রেণিই ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় হন।
দুই. সর্বক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থে তৎপর। তাদের নিকট সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল, আদর্শিক লাভ-ক্ষতি কিছুই বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য শুধু স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টি। এ শ্রেণিটি কোন সাধারণ শ্রেণি নয়, বরং তাঁদের একটি অবস্থান আছে সমাজে। অন্যথায়- ক্ষতি করা তো সহজ হবে না। এ শ্রেণির মানুষগুলোর বাহ্যিক অবস্থান বেশ স্পষ্ট ও পরিচিত। তাদের স্বরূপ সাধারণ মানুষের নিকট উপস্থাপন করাও খুব কষ্টসাধ্য বিষয়। কারণ তাঁরা ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করত: তা বাস্তবায়নে সুদূর প্রসারী গোপন কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যান। প্রথমত: তাঁদের বক্তব্যই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে তুলবে। মনে হবে যেন সংশ্লিষ্ট আদর্শের জন্য তিনি বা তাঁরা নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন ও করছেন। কিন্তু বাস্তব সত্যটি জানেন তাঁরাই যাঁরা সংগঠন প্রতিষ্ঠায়, বাস্তবক্ষেত্রে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষ মহান ব্যক্তিদেরকে মঞ্চ আলোকিত করতে দেখে তাঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা আদৌ জানেন না যে, এ মহান ব্যক্তিদের অনেককে মঞ্চে উপস্থিত করার পেছেনে যাবতীয় ব্যবস্থা এমনকি যাতায়ত ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও সংগঠনের নেতাকর্মীদের বহন করতে হয়েছে। এবার একটু ভেবে চিন্তে বলুন তো- এ ক্ষেত্রে আসল প্রশংসার হকদার কারা। সংগঠন করতে গিয়ে এতো ত্যাগ ও কুরবানীর পরও সব সমালোচনার লক্ষ্য স্থলে পরিণত করা হয় সাংগঠনিক ব্যক্তিদের। এটিই যেন তাদের প্রাপ্য। তখন অনেকেই বলবে নেতারা কি তাঁদের পকেট থেকে দিয়েছেন। হাঁ হযরত সবক্ষেত্রে পকেট থেকে দেয়নি, তবে ব্যবস্থা নেতারাই করেছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে পকেট থেকেও দিতে হয়েছে- সেটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ বিষয়টি অন্তত: আমার কারো থেকে শুনে বলতে হবে না। বরং এর বাস্তব অভিজ্ঞতা আমারও আছে। এ শ্রেণির মানুষগুলো কিন্তু কোন সময় সাধারণ মানুষের আন্তরিক শ্রদ্ধার্জনে সফল হন না। ব্যক্তি স্বার্থ সচেতন মানুষগুলো কখনো সাংগঠনিক ঐক্য ও শৃঙ্খলা মনে প্রাণে কামনা করে না। কারণ তাঁরা জানেন যে, মৌলিক অর্থে তাঁদের অবদান না থাকার ফলে তাঁরা মূল্যায়ন পাবেন না। সুতরাং সংগঠনে যে কোনভাবে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারলে বা বিভক্তি হলে তখন তাঁরা নেপথ্যে বিশৃঙ্খলাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাঁদের আনুকুল্যে সাময়কি মূল্যায়ন পেতে সক্রিয় থাকেন। প্রকৃত অর্থে এ শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ যদি বিশৃঙ্খলাকারীদের মাথার উপর তাঁদের গোপন সমর্থনের হাত না রাখতেন- বিশৃঙ্খলায় লিপ্ত পক্ষ কোথাও দাঁড়াবার সুযোগটিও পেত না। সুন্নী অঙ্গণে জাতীয় সংগঠনের বিভক্তির ক্ষেত্রে দু’জন বড় আলেম ও একজন সাধারণ শিক্ষিত পীরের জঘন্য ভূমিকার কথা সংগঠনের মূল ধারার নেতৃবৃন্দ এমনকি কর্মীরাও জানেন। এ দ্বিতীয় শ্রেণির লোজন ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। এ শ্রেণিটি সবসময় নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন হিসেবে উপস্থাপন করবে। বাস্তব সত্য উদ্ঘাটনে তৎপর হবে না। সত্যিকার অর্থে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে না। বরং উভয়পক্ষের আনুকুল্য নিয়ে স্বার্থ সিদ্ধিতে তৎপর থাকবে। এ দ্বিতীয় শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।
তিন. নিজের আক্বীদা আদর্শের সংগঠন প্রতিষ্ঠার কথা শুনে বুক ভরা আশা নিয়ে সাংগঠনিক কাজে সংশ্লিষ্ট হবে একাগ্রচিত্তে আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করে পদ-পদবীর লোভ, ব্যক্তি স্বার্থের মত বিষাক্ত জীবাণু থেকে নিজেকে সদা দূরে রাখে। এ শ্রেণিটি হলো সাংগঠনিক অগ্রযাত্রার মূল উপাদান। অনেক ক্ষেত্রে এদের যথাযথ মূল্যায়ন না হলেও প্রকৃতপক্ষে ইতিহাস তাঁদেরকেই মূল্যায়ন করে। সংগঠনের গতিশীলতার মূল উপাদানকে যথাযথ মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।
চার. মধ্যবিত্ত এক শ্রেণি। যারা নিজেদের যোগ্যতা বা সুস্থ মানসিকতার অভাবে সামাজিক অবস্থান অর্জনে পিছিয়ে। সব সময় সুযোগের সন্ধানে অপেক্ষায় থাকে। নিজের আক্বীদা-আদর্শের ক্ষেত্র থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা লাভ করলেও তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন অবদান রাখার মানসিকতাই রাখে না। সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে সাংগঠনিক তৎপরতা ও সাংগঠনিক ব্যক্তিদের বিরোধীতায় লিপ্ত হয়। এ শ্রেণির লোকজন যখন দেখে যে, তাদের আকাংখার বিপরীতে সাংগঠন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন লাভ করে চলেছে, মাঠ-ময়দান সাংগঠনিক ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে, নিজের স্বার্থ অর্জনের ক্ষেত্র সংকোচিত হয়ে পড়ছে- তখন এ শ্রেণিটি প্রথমে বুলি পাল্টাতে আরম্ভ করে- যে-না সংগঠনের কোন বিকল্প নেই। অবশ্যই আমাদেরকে সাংগঠনিকভাবে মজবুত হতে হবে। ধীরে ধীরে সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তোলে। অতঃপর নিজের কূট-কৌশলে সংগঠনের মূল নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে নিজের স্বার্থ-সিদ্ধির পথ সুগম করে। অতঃপর নিজের একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে মনে হলে- তাকে পুঁজি করে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব ও ফাটল সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাউকে কাউকে নানা কৌশলে পক্ষে নিয়ে মূল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে জুনিয়রদের নিকট উদ্ভট, ভিত্তিহীন, মনগড়া অপবাদ প্রচারে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে গোপনে নয় বরং স্পষ্টভাবে সংগঠনে বিভক্তি সৃষ্টির হুমকি দেয়। একপার্যায়ে নামমাত্র ভাঙ্গন সৃষ্টি করে আত্মতৃপ্ত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে সুন্নী অঙ্গণে বিভক্তির পেছনে এ চতুর্থ শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিই মূল ভূমিকা পালন করেছে। অনুসারীদের কামনা পূরণে বেশ অবদান রেখেছে। ফলে অনেকটাই নিজ ঘরেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। নিজের যাবতীয় অপকর্মের ক্ষেত্রগুলো থেকেও চরমভাবে বিতাড়িত হয়ে পড়েছে। যে সব ক্ষেত্রে অবস্থান গড়ে তোলে সংগঠনের মূল ধারার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের জাল প্রসারিত করেছে, একপর্যায়ে ওখান থেকেও বিতাড়িত হয়েছে লাঞ্চিত হয়ে। এটাই হবে এ ধরনের মতলববাজদের অশুভ পরিণতি। এসব বিষয় থেকে সচেতন ব্যক্তিদের উপদেশ গ্রহণ করা উচিত।
উল্লেখ্য যে, মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। বরং ধ্বংসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এ চরিত্রের লোকজন কখনো সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছতে পারে না, বরং ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। নাম শুনলেই মানুষ আঁতকে উঠে- আর এদের থেকে সদা সতর্ক থাকার কথা বলে। অন্তত: সাম্প্রতিককালে সুন্নী অঙ্গণে এমন ব্যক্তির অবস্থান প্রত্যেকের নিকট স্পষ্ট।
সুন্নী অঙ্গণে ঐক্য গড়ে তুলতে উপরোল্লিখিত ২য় ও ৪র্থ শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে প্রত্যেককে অত্যন্ত সতর্ক অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় বারংবার একই-বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সুন্নী অঙ্গণে ‘‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’’কে নিয়ে বিভক্তির পেছনে ও জাতীয় সংগঠনে অতীতে ঘটে যাওয়া বিভক্তির পেছনেও পদলোভ, নিজস্ব বলয় ভিক্তিক অপতৎপরতার বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদিই মূল কারণ। এক্ষেত্রেও উপরোক্ত চরিত্রের মানুষগুলোর অবস্থান ফুটে উঠে। সাম্প্রতিক সময়ের বিভক্তি রোধ করার জন্য মূলধারার পক্ষ থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এসব কিছুকে পরাজিত করল- পদলোভ, নিজস্ব বলয় ভিত্তিক অপশক্তি ও সুযোগ সন্ধানীদের স্বার্থপরতা। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে যাদের তেমন কোন অবদান নেই- তারাও কিন্তু ঠিকই মূল্যায়ন চায়। আবার তারা এটাও নিশ্চিতভাবে জানে যে, ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে তারা তেমন মূল্যায়ন পাবার সম্ভাবনা নেই। অতঃপর একটি অংশক মূল ধারা থেকে নানা কূট-কৌশল ও জঘন্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন রেখে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে পদ-পদবী লুপিয়ে নেয়। এতে আরেকটি অংশ এমন আছে যে, সাম্প্রতিক অবস্থানে কেউ তাদের তোশামোদ করতে যাবে না। অতএব, নেপথ্যে থেকে বিভিন্ন অংশকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে বিভক্তি পাকাপোক্ত করে, তোশামোদ লাভের ঘৃন্য প্রত্যাশায় এরা আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে বেশ আন্তরিকতা প্রদর্শন পূর্বক বলে- আরে এগুলো কোন কঠিন বিষয় নয়, এক বৈঠকেই এসব সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তারা একটি বৈঠকের আয়োজন নিজেরা কখনো করেনি, এখনো করছে না। বরং বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র অংশটিকে তাদের মুখাপেক্ষী করে রাখার সব আয়োজনই করে চলেছে।
অভিন্ন আক্বীদায় বিশ্বাসীদের মধ্যে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা বেশী না হলেও এমন সংখ্যক অংশটি বরাবরই ক্ষতি করে চলেছে। এসব বিষয়ে সম্মানিত ওলামা মশায়েখগণ সচেতন না হলে সুন্নী আক্বীদার ভিত্তিতে মজবুত ঐক্য গড়ে তোলাও আপাত দৃষ্টিতে কঠিন বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও কিন্তু চূড়ান্ত সত্য হলো কেবলমাত্র সুন্নী আক্বীদার ভিত্তিতেই হতে হবে- সুন্নী মুসলমানদের মজবুত ঐক্য।

লেখক: চেয়ারম্যান, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’ত বাংলাদে। শায়খুল হাদীস, সোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •