সম্পাদকীয়

0
গাউসুল আযম হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ওফাতের মাস রবিউস্ সানী। এ মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের এ ধরাপৃষ্ঠে আগমন আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ স্বরূপ। ইতিহাস থেকে জানা যায় গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এমন সময়ে বাগদাদে গমন করেন যখন ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের পতনের যুগ আরম্ভ হয়। যদিও ইসলামী সা¤্রাজ্য সুদূর স্পেন থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কিন্তু সা¤্রাজ্যের অবস্থা এমন দুর্বল হয়ে পড়েছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আল্লামা সুয়ূতী, শিবলি নুমানী, ইবনে জওযী প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ সে যুগের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তার সারমর্ম হলো, তখন মুসলমানদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও চারিত্রিকসহ সর্বক্ষেত্রে এক নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি মুসলিম জগতের তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা দর্শনে ইমাম গাযালী (৪৫২-৫০৫হি.)’র মত মহান ব্যক্তিত্ব চরম অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটান। এমন এক যুগ সন্ধিক্ষণে হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খোদা প্রদত্ত রূহানী ও ইলমী শক্তি বলে ইসলামের ডুবে যাওয়া তরীকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়া থেকে উদ্ধার করেন, মৃত প্রায় ইসলামকে পুণর্জীবন দান করেন, তাই তার উপাধি ছিল ‘মুহিউদ্দীন’ দ্বীনের পুণর্জীবন দানকারী। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সত্যিকার প্রতিনিধি হিসেবে দ্বীনের প্রচার প্রসারে এবং জটিল ইসলামী তথ্য ও তাত্ত্বিক সমাধানে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অমূল্য বাণীর সঠিক ব্যাখ্যা দানে ইসলামের আসল রূপ জনসম্মুখে তুলে ধরার মাধ্যমে অধঃপতিত মানব সমাজকে তিনি ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। হুযুর গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সাথে সম্পর্কিত ও তাঁর প্রবর্তিত তরিকার নাম কাদেরিয়া তরিকা। বর্তমান বিশ্বে কোটি কোটি মুসলমান এ তরিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। বিশেষত পাক-ভারত উপমহাদেশে কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশেও এ তরিকা সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার প্রচার প্রসারে যাঁদের ভূমিকা অগ্রগণ্য তাঁরা হলেন আওলাদে রসূল হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি ও তাঁর বংশ পরম্পরায় আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি ও তাঁর শাহ্জাদাদ্বয় খেলাফতপ্রাপ্ত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (ম.জি.আ.) ও পীরে বাঙাল আল্লামা পীর সাবির শাহ্ (মু.জি.আ.)। হুজুর গাউসে পাকের শিক্ষা ও আদর্শের ছোঁয়ায় যেমন তৎকালীন আত্মবিসৃত দ্বিধাগ্রস্ত মুসলমানদের হৃদয়ে নবচেতনা ও প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল। তেমনি বর্তমানেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত তরিকার শিক্ষা ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হলে বর্তমান মুসলমানদের দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতে প্রভূত কল্যাণ লাভে সহায়ক হবে।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পুজামন্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আবহমানকাল থেকে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এ দেশে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি কুচক্রী মহল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তাদের এ চেষ্টা সফল হয়নি। ঐতিহ্যগতভাবে এ দেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টান সকল সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করে আসছে। ইসলাম ধর্মের মর্মবাণীতেও যার যার ধর্ম পালনের অনুমোদন রয়েছে। অহেতুক দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করে অশান্তি সৃষ্টি করাও ইসলাম অনুমোদন দেয় না। ইসলাম শান্তির ধর্ম শান্তির মর্মবাণী তুলে ধরে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন সুফীবাদি ওলী-আউলিয়া। পবিত্র কুরআন অথবা ইসলাম ধর্মের অবমাননা বা কটাক্ষ করলে তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করাই সঙ্গত। তা না করে অন্য ধর্মাবলম্বির উপাসনালয়ে হামলা করা হলে ব্যাপক আকারে দাঙ্গা ছড়িয়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এর রেশ গিয়ে পড়বে অন্য দেশে অবস্থানরত মুসলমানদের উপর। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে এ অজুহাতে নিরীহ মুসলিমদের উপর এবং মুসলমানদের পবিত্র স্থান মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রসঙ্গত এ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগামীতে আরো কঠোর নজরদারির মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে আশা করি। যাতে কোন ধর্ম-অবমাননা যাতে কেউ করতে না পারে, কেউ যাতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারে এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি কামনা করছি।
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •