সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
সাহাবায়ে কেরাম হেদায়াতের নক্ষত্র, তাকওয়ার পূর্ণচন্দ্র, দীপ্তিমান তারকা, সুদীপ্ত পূর্ণিমা; রাতের দরবেশ, দিনের অশ্বারোহী; যাঁরা আপন আঁখি যুগলকে সজ্জিত করেছেন মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরের সুরমায়; ইসলাম নিয়ে যাঁরা ছুটে গেছেন পূর্বে ও পশ্চিমে, যার বদৌলতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে ভূভাগের প্রতিটি দেশে এবং প্রতিটি প্রান্তে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর তাঁরাই বহন করেছেন ইসলামের ঝা-া, উড্ডীন করেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। আল্লাহ তাঁদের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমকে সম্মানিত করেছেন। এ কারণেই আমরা বিচারের দিন পর্যন্ত তাঁদের নিকট ঋণী।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মূলনীতি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের ব্যাপারে মুসলমানগন তাদের অন্তর এবং বাক-যন্ত্রকে পুত-পবিত্র ও সংযত রাখবে, রাফেযী- খারেজীদের ভ্রষ্ট তরীকা থেকে মুক্ত থেকে কিতাব ও সুন্নাহয় সাহাবায়ে কিরামের যে ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে তা মেনে নেবে এবং বিশ্বাস করবে যে, তাঁরাই যুগের সর্বোত্তম প্রজন্ম। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعود رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ ( )
হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী। অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী। এরপর এমন সব ব্যক্তি আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেয়ার আগে কসম করে বসবে। ( )।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন,
عبد الله بن مسعود رضي الله عنه : ” مَن كانَ مُسْتَنًّا ، فَلْيَسْتَنَّ بمن قد ماتَ ، فإنَّ الحيَّ لا تُؤمَنُ عليه الفِتْنَةُ ، أولئك أصحابُ محمد صلى الله عليه وسلم، كانوا أفضلَ هذه الأمة: أبرَّها قلوبًا، وأعمقَها علمًا، وأقلَّها تكلُّفًا، اختارهم الله لصحبة نبيِّه ، ولإقامة دِينه ، فاعرِفوا لهم فضلَهم، واتبعُوهم على أثرهم، وتمسَّكوا بما استَطَعْتُم من أخلاقِهم وسيَرِهم، فإنهم كانوا على الهُدَى المستقيم “.
“তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে যেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নেককার, ইলমের দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে স¦ল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শধন্য হবার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে বাছাই করে নিয়েছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণ, তাঁরা ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ( )
আর এ সকল ফযীলতের কারনে সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে বিখ্যাত ফক্বীহ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের সমালোচনা করা, বিদ্বেষ করা কুফরী: আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন:
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا
“নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁদের প্রতি আল্লাহ পাকের অভিসম্পাত এবং তাঁদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি।” [ সূরা আহযাব ৫৭ ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ.
“তোমরা আমার সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দিও না। কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ণ আল্লাহ পাকের রাস্তায় দান করে, তবুও সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের এক মুদ বা অর্ধ মুদ সমপরিমাণ যে কোন কিছু দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না।” ( )
সমগ্র দুনিয়ার সকল মানুষের নেক আমল এক করলেও সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের কয়েক মুহূর্তের আমলের সমান হবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন
لا تَسُبُّوا أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ فَلَمَقَامُ أَحَدِهِمْ سَاعَةً خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمْرَهُ
‘তোমরা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের গালাগাল করো না। কেননা তাঁদের এক মুহূর্তের (সোহবতের) মর্যাদা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ ( )
এ ব্যাপারে ইবন হাযম বলেন, ‘আমাদের কাউকে যদি যুগ-যুগান্তর ব্যাপ্ত সুদীর্ঘ হায়াত প্রদান করা হয় আর সে তাতে অব্যাহতভাবে ইবাদত করে যায়, তবুও তা ওই ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারবে না যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সেকেন্ড বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য ঈমানের সাথে দেখেছেন।’ ( )
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي، اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي، لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا بَعْدِي، فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ، فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ، وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي، وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ، وَمَنْ آذَى اللَّهَ فَيُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ ” ( )
‘আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাদের ভালোবাসবে। আর যে তাদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাদের অপছন্দ করবে। আর যে তাদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’ ( )
সূতরাং উক্ত দলীল থেকে বোঝা গেল, যারা সাহাবায়ে কেরমের প্রতি বিন্দু মাত্র সমালোচনা করবে, তাঁদের বিরুদ্ধে স্বজন প্রীতির অপবাদ দেবে, তারা নিশ্চিত কাফির হয়ে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন: لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ “একমাত্র কাফিররাই তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। (সূরা ফাতাহ ২৯ )
সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আমাদের অন্তঃকরণকে নিষ্কলুষ রাখতে হবে। তাঁদের প্রতি হৃদয়ে কোন হিংসা-বিদ্বেষ বা ঘৃণা থাকবে না; থাকবে না কোন প্রকার শত্রুতা। বরং হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পাবে শুধু ভালবাসা, অনুগ্রহ আর সহানুভূতি। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।’ {সূরা আল-হাশর, আয়াত : ১০}
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে:
قال الإمامُ مالك ـ رحمه الله ـ: من أصبحَ في قلبِه غَيْظٌ عَلى أحَدٍ مِن أصْحَابِ رَسُولِ الله – صلى الله عليه وسلم – فقد أصَابَتْه الآية ( )
ইমাম মালেক বলেন, যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, সে এ আয়াতের হুকুমের আওতায় পড়বে।”( )
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
آيَةُ الْإِيمَانِ حُبُّ الْأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الْأَنْصَارِ( )
“হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের প্রতি বিশেষ করে আনসারগণের প্রতি মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা নিফাক তথা কুফরী।”( )
ইমাম আবূ যুর‘আ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
قال الإمام أبو زرعة العراقي أحد مشايخ مسلم: ( ):إذا رأيت الرَّجلَ يَنْتَقِصُ أحدًا منْ أصحابِ رسولِ الله -صلى الله عليه وسلَّم- فاعْلَمْ أنَّه زِنْدِيقٌ؛ وذلك أنَّ الرَّسولَ -صلى الله عليه وسلَّم- عندنا حقٌّ، والقرآنُ حقٌّ، وإنَّما أدَّى إلينا هذا القرآنَ والسُّنَنَ أصحابُ رسولِ الله -صلى الله عليه وسلَّم-، وإنَّما يريدون أن يُجَرِّحُوا شهودَنا لِيُبْطِلُوا الكتابَ والسُّنَّةَ، والجَرْحُ بهم أَوْلَى، وهم زَنادِقَة. ( )
‘যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের কোনো একজনেরও মর্যাদাহানী করতে দেখবে তখন বুঝে নেবে যে, সে একজন ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। আর তা এ কারণে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে সত্য, কুরআন সত্য। আর এ কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কিরাম। নিশ্চয় তারা চায় আমাদের প্রমাণগুলোয় আঘাত করতে। যাতে তারা কিতাব ও সুন্নাহকে বাতিল করতে পারে। এরা হলো ধর্মদ্রোহী- নাস্তিক। এদেরকে আঘাত করাই শ্রেয়।’ ( )
হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাত শরীফের পর একটা মুরতাদ দল বের হবে যারা সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুদের প্রতি বিদ্বেষ করবে। এদের সম্পর্কে পূর্বেই সতর্ক করে ভবিষ্যতবাণী করেছেন:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ اخْتَارَنِي، وَاخْتَارَ أَصْحَابِي، وَإِنَّهُ سَيَجِيءُ قَوْمٌ يَنْتَقِصُونَهُمْ، وَيُعِيبُونَهُمْ، وَيَسُبُّونَهُمْ، فَلا تُجَالِسُوهُمْ، وَلا تُؤَاكِلُوهُمْ، وَلا تُشَارِبُوهُمْ، وَلا تُصَلُّوا مَعَهُمْ، وَلا تُصَلُّوا عَلَيْهِمْ “. ( )
“অতি শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা আমার সাহাবীগণকে দোষারোপ করবে, অভিযুক্ত করবে এবং গালি দেবে। সাবধান! সাবধান! তোমরা তাদের মজলিসে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিয়ে-শাদীর ব্যবস্থা করবে না। অন্য রেওয়ায়াতে আছে, তাদের পেছনে নামায পড়বে না এবং তাদের জন্য দোয়া করবে না।”( )
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
عَنْ نَافِعٍ ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِذَا رَأَيْتُمُ الَّذِينَ يَسُبُّونَ أَصْحَابِي فَقُولُوا: لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى شَرِّكُمْ ” ( )
“যখন তোমরা কাউকে আমার সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দিতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি আল্লাহ পাকের লা’নত বর্ষিত হোক।”( )
হযরত আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ، وَالْمَلائِكَةِ، وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لا يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلا عَدْلا ” ، قَالَ : الْعَدْلُ: الْفَرَائِضُ , وَالصَّرْفُ: التَّطَوُّعُ . ( )
‘যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেবে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা সকল মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তার নফল বা ফরয কিছুই কবুল করবেন না।’ [ – তাবরানী-২১০৮]
হযরত আতা ইবন আবী রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আমাকে সুরক্ষা দেবে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুরক্ষাকারী হব। আর ‘যে আমার সাহাবীকে গাল দেবে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ [আহমাদ বিন হাম্বল, ফাযাইলুস ছাহাবা ১৭৩৩]
বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ “শিফা”তে বর্ণিত আছে:
إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِي فَأَمْسِكُوا ]- رواه الطبراني في “الكبير” (২ / ৯৬ [
“আমার সাহাবীদের আলোচনাকালে তোমরা সংযত থেকো।”
আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীদের প্রশংসা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ওপর তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ কর্তৃক তাঁদের স্তুতি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁদের ভূয়সী প্রশংসাই প্রমাণ করে যে তাঁরা হলেন ন্যায়নিষ্ঠ, তাঁরা ছিলেন ভূ-পৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির শ্রেষ্ঠতম সহচর। সর্বোপরি আপন নবীর সঙ্গী ও তাঁর সহযোগী হিসেবে আল্লাহ যাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তাঁদের তো আর কোনো ন্যায়নিষ্ঠতা প্রমাণের প্রয়োজন নেই। এর চেয়ে বড় আর কোনো সনদ হতে পারে না। এর চেয়ে পূর্ণতার আর কোনো দলীল হতে পারে না।
[ইবন আবদিল বার, আল-ইস্তি‘আব ফী মা‘রিতিল আসহাব- ১/১]
তাঁদের যাবতীয় অপ্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত আল্লাহ কর্তৃক ন্যায়নিষ্ঠতার ঘোষণার পর আর কোনো সৃষ্টি কর্তৃক তাঁদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ ঘোষণার প্রয়োজন নেই। আর তাঁদের মর্যাদা এমনই প্রশ্নাতীত যে তাঁদের মর্তবা সম্পর্কে যদি আয়াতগুলো নাযিল না করতেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোল্লিখিত হাদীসগুলো উচ্চারণ না করতেন, তথাপি তাঁদের হিজরত, জিহাদ, নুছরত, পদ ও প্রতিপত্তি ত্যাগ, পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে লড়াই, দ্বীনের জন্য অবর্ণনীয় কল্যাণকামিতা এবং ঈমান ও ইয়াকিনের দৃঢ়তা তাঁদের ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে বিচ্যুত হওয়া ঠেকাত, তাঁদের পবিত্রতা ও মহানুভবতার পক্ষে সাক্ষী হত। মোদ্দাকথা তাঁরা তো সকল সত্যায়নকারী ও সাফাইকারীর চেয়েই শ্রেষ্ঠ যারা তাঁদের পর এসেছে। এটাই উল্লেখযোগ্য আলিম এবং ফিকহবিদের মত।
[খতীব বাগদাদী, আল-কিফায়া ফী ইলমির রিওয়ায়াহ্ ১১৮/১]
সাহাবীগণের মধ্যে যেসব মতানৈক্য হয়েছে, তদ্বিষয়ে আমাদের করণীয় কি?
সালাফে সালেহীনের এক ব্যক্তিকে যখন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, আল্লাহ তা থেকে আমাদের তরবারীকে মুক্ত রেখেছেন। অতএব, আমরা তা থেকে আমাদের যবানকেও মুক্ত রাখব’।
[ঘটনাটি ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়। দ্রঃ হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৯/১১৪; আল-মুজালাসাহ/১৯৬৫।]
আরেকজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন,
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘তারা ছিল এক সম্প্রদায়, যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদেরই জন্য। তারা কি করত, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না’। [বাক্বারাহ ১৩৪।[দ্রঃ খাল্লাল, আস-সুন্নাহ, ২/৪৮১।]
সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আমাদের অন্তঃকরণকে নিষ্কলুষ রাখতে হবে। তাঁদের প্রতি হৃদয়ে কোন হিংসা-বিদ্বেষ বা ঘৃণা থাকবে না; থাকবে না কোন প্রকার শত্রুতা। বরং হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পাবে শুধু ভালবাসা, অনুগ্রহ আর সহানুভূতি।
টিকা.
– روى البخاري (২৬৫২) ، ومسلم (২৫৩৩)
– বুখারী-২৬৫২, ৩৬৫১, ৬৪২৯, ৬৬৫৮ মুসলিম- ৪৪/৫২ হাঃ ২৫৩৩, আহমাদ ৪১৩০। আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৬০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৪৭৬
– আবূ নাঈম, হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৩০৫/১; ড.মুহাম্মদ ইবন আবূ শাহবা, আল ইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাওযূয়াত ফী কুতুবিত তাফসীর
– বুখারী-৩৬৭৩.মুসলিম ৪৪/৫৪, হাঃ ২৫৪০ আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৫
– ইবন মাজা : ১৬২; আহমাদ বিন হাম্বল, ফাযাইলুস ছাহাবা ১৫
– ইবন হাযম, আল-ফাছলু ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল ২/৩৩
– أخرجه الترمذي في المناقب، باب فيمن سب أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم، وراوه أيضاْ أحمد في المسند ৪/৮৭.
– তিরমিযী : ৪২৩৬; সহীহ ইবন হিব্বান-৭২৫৬
– حلية الأولياءগ্ধ (৬/ ৩২৭). قال القرطبيُّ ـ رحمه الله ـ مُعلِّقا عليه: ্রقلتُ: لقد أحسنَ مالكٌ في مقالته وأصابَ في تأويله؛ فمن نَقص واحدًا منهم أو طَعن عليه في روايتِه فقد ردَّ على الله رَبِّ العالمين، وأبطل شرائع المسلمينগ্ধ ্রالجامع لأحكام القرآنগ্ধ (১২/ ২৯৭(.
– হিলয়াতুল আওলিয়াল ৬/৩২৭
– رواه البخاري برقم (৩৫০০) ومسلم برقم (১০৯)، وهذا لفظ البخاري
– বুখারী-৩৫০০, মুসলিম-১০৯
– قال عنه الإمام أحمد بن حنبل: ما جاء الجسر أحفظ من أبي زرعة، وقال الإمام أبو حاتم: إن أبا زرعة ما خلف بعده مثله. (العواصم من القواسم، ص৩৪، ط: الرياض ১৪০৪هـ).
– الكفاية للخطيب البغدادي، ص: ৪৯، ط: حيدر آباد الدكن (الهند) ১৩৫৭.
– খতীব বাগদাদী, আল-কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়ায়াহ ১/১১৯
– الجامع لأخلاق الراوي وآداب السامع للخطيب গ্ধ بَابُ : اتِّخَاذِ الْمُسْتَمْلِي গ্ধ إِمْلاءُ فَضَائِلِ الصَّحَابَةِ وَمَنَاقِبِهِمْ ، … رقم الحديث: ১৩৮২
– কানযুল উম্মাল-৩২৪৬৮
– أخرجه الترمذي في المناقب.
– তিরমীযি শরীফ ছাহাবীদের অধ্যায়।
– رواه الطبراني (৩ / ১৭৪ / ১) عن الحسن بن قزعة عن عبد الله بن خراش عن العوام بن حوشب عن عبد الله بن أبي الهذيل عن ابن عباس مرفوعا.
লেখক: লেকচারার-সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। খতিব: মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম।