শহর এলাকায় কোন কোন কলোনীতে মুসলিম/অমুসলিম পাশাপাশি কক্ষ নিয়ে বসবাস করতে হয়। পাশাপাশি থাকার কারণে তাদের সাথে উঠা-বসা, মায়া মমতার বন্ধন তৈরি হয়। সুতরাং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কোন বিধর্মী হতে চাওয়া, লেন-দেন করা ইত্যাদি যাবে কিনা?

0

 মনিরা আরজু
গোবিন্দারখীল, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কাদিয়ানী কারা? এদের সঙ্গে (সুন্নীদের) সম্পর্ক রাখা যাবে কিনা? আত্মীয়তা করা যাবে কিনা?

উত্তর: পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুরের অন্তর্গত কাদিয়ান নিবাসী মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (জন্ম: ১৮৩৫ইং, মৃত্যু: ১৯০৮ইং) ভন্ডনবী, নুবুয়তের মিথ্যা দাবীদার, প্রতারক ও মুনাফিক কর্তৃক প্রবর্তিত মতবাদকে কাদিয়ানী মতবাদ বলা হয়। যারা সে মতবাদ ধারণ করে তারাই হলো কাদিয়ানী। আর এ মতবাদের ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের সমস্ত মুহাক্বক্বিক্ব দীনদার আলেম-ওলামা, ফক্বীহগণ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ফতোয়া প্রদান করেছেন যে, কাদিয়ানী মতবাদ হলো কুফরী মতবাদ। কাদিয়ানীদের কুফরী আক্বীদাসমূহের মধ্যে মারাত্মক বদ আক্বিদা হলো, তারা আমাদের প্রিয়নবী শফিউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, খাতেমুন নাবীয়্যীন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হওয়া স্বীকার করে না। অথচ পবিত্র কুরআন মজীদে এ ব্যাপারে রাব্বুল আলামীন চূড়ান্ত ফায়সালা প্রদান করে ইরশাদ করেছেন-
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَا اَحَدٍ مِّنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ- (سورة الاحزاب)
অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন; বরং তিনি হলেন আল্লাহর প্রিয় রসূল ও সর্বশেষ নবী।’’
[সূরা আহযাব, ৪০নং আয়াত] যেহেতু প্রিয় নবীর সকল পুত্র সন্তান অল্পবয়সেই ইনতেকাল করেছেন, তাই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, তোমাদের পুুরুষদের কারো আমার নবী পিতা নন। কোন সুন্নী মুসলমান কাদিয়ানীদের কুফরী/মতবাদ পোষণকারী ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে না। তাদের সাথে চলা-ফেরা, আত্মীয়তা ইত্যাদি করা যাবে না। সুতরাং কাদিয়ানীদের কুফরী মতবাদের ব্যাপারে মানুষকে তথা সরল সোজা মুসলমানদের সচেতন হতে হবে এবং নিজের ঈমান-আক্বিদাকে এদের প্রতারণা হতে হেফাজত রাখতে হবে।

প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির কাপড় গোসল ও দাফনের পর ব্যবহৃত জিনিষ, যথা-সাবান, কাপুর, আতর এবং কাফনের অতিরিক্ত কাপড় ঘরের সদস্যরা ব্যবহার করতে পারবে কিনা?

উত্তর: মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিষ-পত্র, কাপড়-চোপড়, পরিবারের সদস্যগণ ব্যবহার করতে পারবে। এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে পরিবারের জীবিত সদস্যরা ইচ্ছা করলে মৃত ব্যক্তির কবরে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য এলাকার গরিব-অসহায়দেরকে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাঁর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় ইত্যাদি দান, সদকা করতে পারবে। এতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই।

 এস.এম. সিরাজুল ইসলাম নেকী
লালখান বাজার, খুলশী, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: জানাযার নামাযের নিয়্যত মুখে উচ্চারণ করতে হবে কি? মৃত ব্যক্তিকে ঘর থেকে বের করার সময় ১০ কদম করে ৪০ কদম নেওয়ার কারণ, খাটিয়া বহন করে কবরের দিকে নেওয়ার নিয়ম কি? কবরে খেজুর পাতাযুক্ত ঢাল ব্যবহার ও কবরে তিনদিন পর্যন্ত পানি ছিটানোর কারণ কী? এ সম্পর্কে শরীয়তের আলোকে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর: পাঞ্জেগানা নামাযসহ জানাযার নামাজের নিয়্যত মুখে উচ্চারণ করা উত্তম ও জায়েয-তবে মনে মনে নিয়্যত স্মরণ করাও জায়েয। কুল বা বরই পাতা দিয়ে মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি সিদ্ধ করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার সুন্নাত। এটা হাদীসে পাক দ্বারা প্রমাণিত। হানাফী মাযহাব মতে মৃত ব্যক্তির খাটিয়া ৪ জনে বহন করে পর্যায়ক্রমে ৪০ কদম হাটা মুস্তাহাব এবং সম্মানিত সাহাবী ও তাবেঈগণের সুন্নাত। যেমন-
سن فى حمل الجنازة اربعة من الرجال كذا فى شرح النقاية للشيخ ابى المكارم اذا حملوه على سرير اخذوه بقوائمه الاربع به وردت السنة كذا فى الجوهرة النيرة ثم ان فى حمل الجنازة سنتين نفس السنة وكمالها اما نفس السنة ان تأخذ بقدائهما الاربع على طريق التعاقب بان تحمل من كل جانب عشر خطوات وهذا يتحقق فى حق الجمع واما كمال السنة فلا يتحقق الا فى واحد وهو ان يبدأ الحامل ويحمل يمين مقدم الجنازة كذا فى التتارخانية والتبيين-
অর্থাৎ জানাযার খাট ৪ জন ব্যক্তি বহন করা সুন্নাত। যা শায়খ আবীল মাকারীম এর ‘শরহে নেকায়া’ নামক ফিকহ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। যখন জানাযার খাট উঠাবে তখন তার ৪টি পায়া ধরে উঠানো সুন্নাত। এটা আল মুখতাচারুল কুদুরীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ জাওহারাতুন্ নাইয়ারা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। এটার ১টি হচ্ছে মূল সুন্নাত ও অপরটি হচ্ছে কামালে সুন্নাত। মূল সুন্নাত হচ্ছে ‘খাটিয়ার চার পায়া এভাবে পালা করে ধরে বহন করবে। প্রত্যেক দিক হতে ১০ কদম চলবে। এ সুন্নাত সকল ব্যক্তি আদায় করতে পারবে। আর কামাল সুন্নাত হলো খাট বহনকারী প্রথম ব্যক্তি মাথার দিকের ডান পায়া ধরবে এবং ডান কাঁধের উপর রাখবে। তারপর পায়ের দিকে ডান পায়া ডান কাঁধের উপর রাখবে। তারপর মাথার দিকের বাম পায়া বাম কাঁধের উপর রাখবে। তারপর পায়ের দিকের বাম পায়া বাম কাধের উপর রাখবে। এ সুন্নাত একজনই আদায় করতে পারে। এমনটি তাতারখানিয়া ও তাবেঈন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। [ফতোয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃ. ১৭৮] জানাযার খাটিয়া বহন করার ব্যাপারে উল্লেখ আছে- عن واثلة بن الاسقع قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حمل بجوانب السرير الاربع غفرله اربعون كبيرة – (ابن عساكر)
অর্থাৎ হযরত ওয়াছিলা ইবনে আসকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এরশাদ করেছেন যে সকল লোক জানাযার খাটিয়া বহন করবে, তার ৪০টি কবিরা গুনাহ্ মাফ করা হবে। [তারীখে দামেস্ক, কৃত. ইমাম ইবনে আসাকির রহ.] কাফনের ক্ষেত্রে মহিলার জন্য ৫টি কাপড় এবং পুরুষের জন্য ৩টি কাপড় দেয়া সুন্নাত। মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামানোর সময়- بسم الله وعلى ملة رسول الله ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ্ দোয়াটি পড়বে। দাফনের সময় চেহেরা কিবলামুখী করে দেয়া উত্তম। আর দাফনের পর জিয়ারত ও কবর তালক্বীন করা সুন্নাত। কবরের উপর কাঁচা খেজুরের ঢাল দেয়াও সুন্নাত। যা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার নূরানী আমল হতে প্রমাণিত।
হযরত জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহ. ‘শরহুচ সুদুরে’ জিয়ারত ও তালকিনসহ উপরোক্ত বিষয়াদি সম্পর্কে হাদীসে পাকের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যা তরজুমানের বিভিন্ন সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ও আমার রচিত যুগ-জিজ্ঞাসায়ও আলোচনা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে আপত্তি ও প্রশ্ন করে সাধারণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করা অজ্ঞতা ও মুর্খতার নামান্তর।

 মুহাম্মদ আকিব
ফিরিঙ্গবাজার, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কোন মুসলমান তার চিকিৎসার জন্য অন্যান্য মুসলমান থেকে সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশি অমুসলিম থেকে অর্থ সাহায্য (ঋণ/ধার নয়) চাইতে পারবে কিনা? এরূপ করলে আখিরাতে ওই অমুসলিমকে প্রতিদান দিতে হবে কিনা? অমুসলিম থেকে (ঋণ/ধার) সাহায্য (অফেরৎযোগ্য) চাওয়া যাবে কিনা?

উত্তর: আন্তরিক বন্ধুত্ব ব্যতীত অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা/বাণিজ্য, লেন-দেন ইত্যাদি ইসলামে নাজায়েয নয় বরং বৈধ। মুসলিম হিসেবে অপর মুসলিম ভাইয়ের কাছ থেকে সাহায্য নেয়া উত্তম। তবে একান্ত অপারগতায় ও বিশেষ প্রয়োজনে পরিচিত অমুসলিম, বিধর্মী হতে টাকা কর্জ ও ধার নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। কোন ব্যক্তির হক তাকে বা তার ইন্তেকালের পর তার আওলাদকে ফিরিয়ে না দিলে পরকালে তার প্রতিদান উক্ত ব্যক্তিকে তার নেক আমলসমূহ হতে নিয়ে নেওয়া হবে। যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। একজন মুসলিম হিসেবে অমুসলিমের কাছে প্রশ্নে উল্লেখিত এরূপ সাহায্য না চাওয়াই শ্রেয়। তবে অপরাপর মুসলিমদেরও উচিত কোন মুসলিম বিপদগ্রস্ত ও অভাবী হলে তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা। এটা একান্ত কর্তব্য ও দায়িত্ব।

প্রশ্ন: শহর এলাকায় কোন কোন কলোনীতে মুসলিম/অমুসলিম পাশাপাশি কক্ষ নিয়ে বসবাস করতে হয়। পাশাপাশি থাকার কারণে তাদের সাথে উঠা-বসা, মায়া মমতার বন্ধন তৈরি হয়। সুতরাং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কোন বিধর্মী হতে চাওয়া, লেন-দেন করা ইত্যাদি যাবে কিনা? এ ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: হিন্দু-বৌদ্ধসহ যে কোন কাফির-মুশরিকদের সাথে পার্থিব প্রয়োজনীয় লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্জ-ধার ইত্যাদি ছাড়া আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করা, তাদের সাথে সদা-সর্বদা উঠা-বসা, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ বিনিময় করা, তাদের সাথে কোন মুসলমানদের আনন্দ, মজাক ও খেলাধুলায় মেতে উঠা ইত্যাদি একজন সত্যিকার প্রকৃত মুসলমানের জন্য নাজায়েয বা অবৈধ। এতে ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মহান আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআন মজীদে এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেন-
وَ اِمَّا یُنْسِیَنَّكَ الشَّیْطٰنُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظّٰلِمِیْنَ –
অর্থাৎ শয়তান যদি তোমাকে ভুলিয়ে দেয় সুতরাং স্মরণ হওয়া মাত্রই জালিমদের (কাফিরদের) সাথে বসো না। [সূরা আনআম, আয়াত-৬৮] পবিত্র কুরআন মজীদে অপর আয়াতে আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন-
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللّٰهِ وَ كَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗؕ-اَلَیْسَ فِیْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكٰفِرِیْنَ-
অর্থাৎ তার চেয়ে বড় জালিম কে আছে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে এবং তার কাছে সত্য আসার পর সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দোযখ কি কাফিরদের ঠিকানা নয়? নিশ্চয়। (সূরা জুমার, আয়াত-৩২)
সুতরাং বুঝা গেল যে, মুশরিক ও কাফিরগণ হল বড় জালিম, আর যেখানে জালিমদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের সাথে দোস্তী-বন্ধুত্ব করা তো আরো মারাত্মক অপরাধ।
তাছাড়া হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
من جامع المشرك وسكن معه فيه مثله-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মুশরিকের সাথে মিলিত হবে এবং তার সাথে সহাবস্থান করে সেও মুশরিকের অনুরূপ।
[সুনানে আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং- ২৪৫০, কিতাবুল জিহাদ] হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
لانصاحب الا مؤمنا ولا ياكل طعامك الا ثقىٌ-
অর্থাৎ ঈমানদার ছাড়া অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করোনা, আর তোমার খাদ্য নেক্কার ছাড়া অন্য কেউ যেন আহার না করে বা অন্য কাউকে খেতে দিওনা।
[মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি ও রিয়াজুস্ সালেহীন, ৩৬৬] অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, বিধর্মীদের সঙ্গে এক সাথে প্রায় পানাহার করা ও তাদেরকে ভালবাসা বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব হত্যাকারী বিষতুল্য। মহান আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের এরশাদ করেন-ومن يتولهم منكم فانه منهم অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে তাদের (কাফিরদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। (সূরা মায়েদা, আয়াত-৫১)
হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- المرء مع من احب অর্থাৎ মানুষ দুনিয়াতে যার সাথে বন্ধুত্ব করবে, তার সাথে তার হাশর হবে।
(সহীহ্ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, ৬১৬৯ ও ২৬৪০ হাদীস)
সুতরাং হিন্দু-বৌদ্ধ, ইহুদী-খ্রিস্টানসহ সকল বিধর্মী কাফির-মুশরিকদের সাথে সখ্যতা-বন্ধুত্ব করা নাজায়েজ ও গুনাহ্। হ্যাঁ, পার্থিব লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে তাদের সাথে প্রকাশ্যে সদ্ভাব বজায় রাখা জায়েয বা বৈধ। হিন্দু-বৌদ্ধসহ সকল কাফির-মুশরিকদের জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়া নাজায়েয বরং হারাম। এ ছাড়া অন্যান্য হালাল ও পবিত্র বস্তু ফল-ফ্রুট ও চা-নাস্তা তাদের ঘর, দোকান বা অফিসে খাওয়া বা গ্রহণ করা প্রয়োজন বশতঃ জায়েয ও বৈধ। তবে সাধ্য অনুযায়ী বিধর্মীদের ঘরে খাওয়া-দাওয়া ও ওঠা-বসা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাই উত্তমপন্থা ও নিরাপদ।
কাফির-মুশরিক ও বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না করা প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে মজীদে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা আরো এরশাদ করেন-
لَا یَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَۚ-وَمَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَیْسَ مِنَ اللّٰهِ فِیْ شَیْءٍ اِلَّاۤ اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقٰىةًؕ-وَ یُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفْسَهٗؕ- وَ اِلَى اللّٰهِ الْمَصِیْرُ-
অর্থাৎ মুমিন কাফিরদেরকে (বাহ্যিক লেনদেন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে) বন্ধু বানাতে পারে না মুমিনকে বাদ দিয়ে। অতঃপর যে (কোন মুমিন) এ রকম করবে অর্থাৎ মুমিনকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু বানাবে আল্লাহর সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক থাকবে না।
[সুরা আলে ইমরান, আয়াত-২৮] অতএব, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ তথা যে কোন কাফির-মুশরিক ও বিধর্মীদের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে না বরং তাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া ও আহার গ্রহণ করা সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি। এটাই কুরআন সুন্নাহ্ তথা ইসলামী শরীয়তের ফয়সালা।
[সহীহ্ বুখারী শরীফ, জামে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, মুসনদে আহমদ ও যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]  মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
পাড়াদিঘুলিয়া, টাঙ্গাইল।

প্রশ্ন: .১মিলাদ শরীফ কখন হতে শুরু? মিলাদ-কিয়াম না করলে গুনাহ্ হবে কিনা? ক্বোরআন-হাদীসের আলোকে জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর: মিলাদ মাহফিলে প্রিয় মাহবুব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বেলাদত মুবারকের বর্ণনার মুহূর্তে সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহসান ক্বিয়ামকারী এর দ্বারা মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অনেক সাওয়াব ও মহান মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে। যারা ক্বিয়ামকে হারাম বলে তাদের উক্ত ফতোয়াকে যুগ যুগ ধরে মুহাক্কি¡ক্বিন আলিমগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ক্বিয়ামকে নাজায়েয বলা নবীবিদ্বেষীদেরই পরিচায়ক এবং মুসলিম মিল্লাতকে ভাল কাজ থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টার নামান্তর।
আ’লা হযরত আযীমুল বরকত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ্ আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র লিখিত ‘ইক্বামাতুল ক্বিয়ামাহ্ আলা ত্বা-ইনিল ক্বিয়াম’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট ফক্বীহ্ ও মুহাদ্দিস মাওলানা ওসমান ইবনে হাসান দিমাতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর লিখিত কিতাব ‘রিসালায়ে ইসবাতে ক্বিয়াম’-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন-
القيام عند ذكر ولادة سيد المرسلين صلى الله عليه وسلم امر لاشك فى استحبابه واستحسانه وندبه يحصل نفاعله من الثواب الاوفر والخير الاكبر لانه تعظيم النبى صلى الله عليه وسلم-
অর্থাৎ মিলাদ শরীফ পাঠকালে রসূলকুল শিরমণি রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বেলাদত মুবারকের বর্ণনাকালে হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা তথা দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা মুস্তাহাব, মুস্তাহাসান এবং উত্তম। এ আমলকারী অনেক সাওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়। কেননা ক্বিয়াম করা মানে নবীজীকে সম্মান করা (যা হল ঈমানের দাবী) ক্বিয়াম বিরোধীদের নির্ভরশীল ব্যক্তি মাওলানা রফীউদ্দীন তারিখে হারামাঈন নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة ذو رواية ودراية قطوبى لمن كان تعظيمه صلى الله عليه وسلم غاية مرامه-
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার মিলাদ বা বেলাদত শরীফ বর্ণনার মুহূর্তে ক্বিয়াম করা ঐ সমস্ত সম্মানিত হক্বক্বানী আলিমগণ মুস্তাহাব বলেছেন, যারা হলেন (যুগের) মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ। অতএব, মুখ্য উদ্দেশ্য হল নবীজীকে সম্মান করা তার জন্য এটা হল বড় আনন্দের ব্যাপার।
খাতেমুল মুহাদ্দিসীন হযরত সৈয়দ আহমদ দাহলান মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় কিতাব ‘আদদুরারাস সানিয়্যাহ্ ফির রদ্দে আলাল ওয়াহাবিয়্যাহ’র মধ্যে উল্লেখ করেছেন-
من تعظيمه صلى الله عليه وسلم الفرح بليلة ولادته وقراة المولد والقيام عند ذكر ولادته صلى الله عليه وسلم واطعام الطعام-
অর্থাৎ নবীজীর মিলাদ রজনীতে খুশী উদ্যাপন করা মিলাদ শরীফ পাঠ করা, বেলাদত শরীফের বর্ণনার মুহূর্তে ক্বিয়াম করা এবং মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত জনতাকে খাবার পরিবশেন করা নবীজীর তা‘জীমের অন্তর্ভুক্ত। মাওলানা মুহাম্মদ সালেহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র বরাতে হযরত আ’লা ইমাম শাহ্ আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
امة النبى صلى الله عليه وسلم من العرب والمصر والشام والروم والاندلس وجميع بلاد الاسلام مجتمع ومتفق على استحبابه واستحسانه-
অর্থাৎ- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আরব, মিসর, সিরিয়া, রোম, আন্দালুস ও সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের উম্মতগণ এ কথার উপর একমত যে, মিলাদ শরীফ পাঠ করা এবং ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহসান।
হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহ্য়া হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মিলাদ মাহফিলে বেলাদত শরীফের বর্ণনার মুহূর্তে ক্বিয়ামের আলোচনায় বলেন-
يجب القيام عند ذكر ولادته صلى الله عليه وسلم اذا يحضر روحانيته صلى الله عليه وسلم فعند ذلك يجب التعظيم والقيام-
অর্থাৎ হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের বর্ণনার মুহূর্তে ক্বিয়াম করা ওয়াজিব। কেননা, সে মুহূর্তে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার নূরানী রূহ মোবারক হাজির হয়ে থাকেন। সুতরাং ওই মুহূর্তে নবীজীকে সম্মান করা ও ক্বিয়াম করা আবশ্যক। তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। ওহাবী-দেওবন্দী মৌলভীদের বড়পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
ميں خود قيام كرتا هوں اورقيام ميں لذت پاتاهوں-
অর্থাৎ (মিলাদ পাঠের সময়) আমি নিজে ক্বিয়াম করি এবং ক্বিয়ামকালে আমি তৃপ্তি পাই।
[ফায়সালাহ্-এ হাফত মাসআলা] যার অন্তরে প্রিয়নবী রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রেম-ভালবাসা আছে তাঁর জন্য এতটুকু যথেষ্ট।

 প্রশ্ন: ২.. কি কাজ করলে মুনাফিক হয়? এবং মুনাফিকের শাস্তি কি? ক্বোরআন-হাদীসের আলোকে জানালে ধন্য হবো।

 উত্তর: মুনাফিক শব্দটি নফক বা নিফাক শব্দ হতে উৎপত্তি। যার অর্থ- দ্বি-মুখী আচরণ বা কোন কিছু গোপন করা ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় যে ব্যক্তি অন্তরে নাপাকী-কুফরী রেখে শুধুমাত্র মুখে ও প্রকাশ্যে মুসলিম হওয়ার দাবী করে তাকে মুনাফিক বলে। যে সব আমল বা কাজ সম্পাদন করলে মুনাফিক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় সে প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যেমন-
عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ منافقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْ النفاقِ حتّى يَدَعَهَا اذا اؤتُمِنَ خَانَ وَاذا حدَّثَ كَذَبَ وَاذا عَاهَدَ غَدَرَ وَاِذَا خَاصَمَ فَجَرَ- (متفق عليه)
অর্থাৎ- বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যাদের মধ্যে ৪ (চার)টি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে তারা খাঁটি মুনাফিক হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যার মধ্যে উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর ১টি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে, তার মাঝে যেন মুনাফিকির ১টি বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে তা পরিহার করে। তা হলো- ১. যখন তার কাছে আমনত রাখা হয় সে খেয়ানত করে, ২. যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, ৩. অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করে, ৪. ঝগড়া-বিবাদের সময় অশোভন আচরণ করে। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ] অপর হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
ايَةُ الْمُنَافِقِ ثلاث زاد مسلم واِنْ صَامَ وَصَلَّى وزَعَمَ اَنَّهُ مُسْلِمٌ ثُمَّ اتفَقَا اذا حَدَّثَ كذِبَ وَاذا وَعَدَ اَخْلَفَ وَاذا اؤتُمِنَ خَانَ-
অর্থাৎ মুনাফিকের আলামত তিনটি- ইমাম মুসলিম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র বর্ণনা অতিরিক্ত এ কথাও এসেছে। যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং ধারণা করে যে, সে মুসলিম। অতঃপর বর্ণনায় ইমাম বুখারী ও মুসলিম এক, (আলামতগুলো) ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, ৩. যখন কোন আমানত (কথা বা জিনিস) তার কাছে রাখা হয় সে খেয়ানত করে। [মিশকাত শরীফ] উপরোক্ত আলামতসমূহ কারো মাঝে ১টি পাওয়া গেলে মুনাফিক হিসেবে বিবেচিতি হবে। মুনাফিক সম্পর্কে পবিত্র ক্বোরআন মজীদে আল্লাহ্ তা‘আলা ১টি সূরা এবং অসংখ্যা আয়াত নাযিল করেছেন। মুনাফিকদের পরিচয় ও কুআচরণের বর্ণনায় মাহন আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا-
অর্থাৎ- এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ্র অবতীর্ণ কিতাব এবং রসূলের পথে এসো তখন তুমি দেখবে যে, মুনাফিকরা তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। [সূরা নিসা: আয়াত-৬১] যারা মুনাফিক তাদের শাস্তির ধরণ বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا-
অর্থাৎ- (হে নবী আপনি) সুসংবাদ দিন মুনাফিকদেরকে যে, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। [সূরা নিসা: আয়াত-১৩৮] অপর আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا-
অর্থাৎ- নিশ্চয় মুনাফিকগণ দোযখের সর্ব নিম্ন স্তরে রয়েছে এবং তুমি কখনো তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। [সূরা নিসা: আয়াত-১৪৫] উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হল যে, মুনাফিক প্রকাশ্য কাফির অপেক্ষা জঘন্য নিকৃষ্ট এবং তাদের শাস্তিও কঠিন। আর দোযখের স্তরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরটা হচ্ছে সর্বাধিক ভয়ানক। সেখানে সমস্ত দোযখীর পূঁজ ও রক্ত ইত্যাদি প্রবাহিত হয়ে পৌঁছে। এ থেকে বুঝা যায়, মুনাফিকদের শাস্তি কতো কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক হবে।

 কাজী মুহাম্মদ সাজেদুল হক
বাড়ী-৩২, রোড-৮, উত্তরা, ঢাকা।

 প্রশ্ন: ১.এক পরিবারের স্বামী/স্ত্রী দু’জনেই ১ ছেলে ও ১ মেয়ে না বালেগ অবস্থায় রেখে মারা যায়। ছেলে/মেয়ে ২ জনেই তাদের এক ফুফুর তত্ত্বাবধানে আছে। কয়েকজন আত্মীয় মিলে কিছু টাকা (নেসাব পরিমাণ) কোন- এক ইসলামী ব্যাংকে এ শর্তে জমা রাখে যে, ছেলে/মেয়ের বিয়ের সময় এ টাকা তুলতে পারবে। মায়ের নামে একটি ফ্ল্যাটে আছে। তা থেকে যে ভাড়া পাবে তাও ব্যাংকে রেখে দেয়া হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে উক্ত টাকার উপর যদি নেসাব পরিমাণ হয় যাকাত-ফেৎরা বা কোরবানী উক্ত এতিম ছেলে/মেয়ের উপর ফরয বা ওয়াজিব হবে কিনা?

 উত্তর: ১.যাকাত প্রদান ইসলামের মৌলিক স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এ যাকাতের ধর্মীয় ও সামাজিক বহু উপকার রয়েছে। তাছাড়া যাকাত প্রদান ফরয ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তবে যাকাত আদায় সকল মুসলমানের জন্য ফরয নয়। সাধারণত যাকাত ফরয হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তসমূহ প্রয়োজন: ক. মুসলমান হওয়া, খ. বালেগ হওয়া, গ. বিবেকবান হওয়া, ঘ. নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া, ঙ. নেসাব ঋণমুক্ত হওয়া, চ. নেসাবের মালের উপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া ইত্যাদি। এসব শর্ত পাওয়া গেলে নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপর যাকাত প্রদান করা ফরয হয়। মাতা-পিতার ইন্তেকালের পর রেখে যাওয়া সন্তান-সন্ততি উভয়ে যদি নাবালাক বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন তাদের (মাতা-পিতার) রেখে যাওয়া সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলেও না-বালেগ ছেলে-মেয়ের উপর যাকাত ফরয হবে না। তারা যেহেতু ফুফুর নিকট লালিত-পালিত হচ্ছে তাই তিনি তাদের সম্পদ সমূহের রক্ষক বা হেফাজতকারী মাত্র। না-বালেগ ছেলে-মেয়ের উপর সাদকাতুল ফিতর ও ক্বোরবানী ওয়াজিব নয়।
[বাহারে শরীয়ত: ১ম খণ্ড, যাকাত পর্ব ও কুদূরী, যাকাত অধ্যায় ইত্যাদি]

 প্রশ্ন: ২. কোন মেয়ের নাম মালাইকাহ্ (ফেরেস্তার বহুবচন) রাখা ঠিক হবে কি?

 উত্তর: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- কিয়ামতের দিন তোমাদের নিজ নাম ও পিতার নামে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখো। [আবূ দাঊদ শরীফ] তাই সুন্দর, অর্থবোধক, নবী-রসূলগণের নামের সাথে বা উপাধির সাথে মিল রেখে সন্তান-সন্ততি নবজাতকের নাম রাখা পিতা-মাতার উচিত। প্রশ্নোল্লিখিত ‘মালাইকা’ শব্দটি বহুবচন ও আরবী শব্দ। যার অর্থ ফেরেশতা সমূহ। তা কোন মেয়ের নাম হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। মেয়েদের নাম হবে আয়েশা, ফাতেমা, হুমাইরা, উম্মে হাবীবা, উম্মে কুলসুম ইত্যাদি।

 মুহাম্মদ আবদুল হান্নান
আতুরার ডিপো, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: ১. পুরাতন ক্বোরআন শরীফ বা হাদীস শরীফ সম্বলিত কোন পুস্তক বা কিতাব একেবারে পুরাতন হয়ে গেলে ও পাঠ করা সম্ভবপর না হলে কি করতে পারি? আগুনে পুড়ানো অথবা দাফন করার মধ্যে উত্তম তরিকা কোনটি? প্রমাণ সহ জানালে খুশী হব। অনেকেই পুরাতন ক্বোরআন শরীফকে আগুনে পুড়াতে বা পানিতে ফেলে দিতে দেখা যায়- এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করার অনুরোধ রইল।

 প্রশ্ন: ২. তাহাজ্জুদের নামায পড়ার পর রাতে কিছু পরিমাণ বিশ্রাম নিলে ওযূ কি ভঙ্গ হয় যাবে? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর: ১. যদি ক্বোরআন শরীফ অনেক বেশি পুরাতন হয়ে তিলাওয়াতের অনুপযোগী হয়ে যায় এবং এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দেয় তখন একটি পবিত্র কাপড় দ্বারা মুড়িয়ে পবিত্র স্থানে (যেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় না) দাফন করে ফেলা উত্তম। অর্থাৎ একটি গর্ত কবরের মত খনন করে, আর তাতে মাসহাফ মোবারক (পুরাতন ক্বোরআন শরীফ) রেখে তার উপর ছাদ দিয়ে মাটি চাপা দিবে। অথবা লাহাদ কবর খনন করবে, যেহেতু পুরাতন ক্বোরআন শরীফের উপর সরাসরি মাটি পড়লে তাও এক প্রকার সম্মানের পরিপন্থি। এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহের উদ্ধৃতি নিম্নে পেশ করা হল।
১. ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৩২৩-এ বর্ণিত আছে-
المصحف اذا صار خُلُقا لايقرأ منه ويخاف ان يضيع يجعل فى حرقة طاهرة يدفن ودفنه أولى من وضعه موضعًا يخاف ان يقع عليه النجاسة او نحو ذالك ويلحد له لانه لوشق ودفن يحتاج الى اهالة التراب عليه الا اذا جعل موفوقة سقف لايصل التراب اليه فهو حسن ايضا كذا فى الغرائب-
অর্থ: যখন মাসহাফ (ক্বোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপি) এত বেশি পুরাতন হয়ে যায় যে, যা পড়ার অনুপযোগী এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়। তখন উক্ত পুরাতন ক্বোরআন শরীফকে একটি পবিত্র কাপড় জড়িয়ে দাফন করবে। আর যেখানে রেখে দিলে নাপাক ইত্যাদি লাগার আশংকা আছে, সেখানে রাখার চেয়ে দাফন করাটাই উত্তম। আর (দাফন করার জন্য) লাহাদ কবর খনন করবে। কারণ পুরাতন ক্বোরআন শরীফ যখন জীর্ণশীর্ণ হয়ে যায় এবং দাফন করা হয়, তখন তার উপর মাটি চাপা দেয়া অসম্মান জনক, কিন্তু যখন পুরাতন ক্বোরআন শরীফকে দাফনের পর তার উপর ছাদ দিয়ে মাটি চাপা দেয়া হয় তখন পুরাতন ক্বোরআন শরীফের উপর মাটি লাগার সম্ভাবনা থাকে না, এটা খুবই উত্তম ও সুন্দর পদ্ধতি। এভাবে গারায়েব কিতাবেও আছে। আরো উল্লেখ থাকে যে, এ ধরণের পুরাতন ও তিলাওয়াতের অনুপযোগী ক্বোরআনের পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়ানো যাবে না। যেমন আলমগিরী তথা ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ৫ম খণ্ড, ৩২৩ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
المصحف اذا صَارَ خلقا وتعذرت القراة عنه لايحرق بالنار اشار الى هذا فى السير الكبير وبه نأخذ كذا فى الذخيرة- ولا يجوز فى المصحف الخلق الذى لايصلح للقرأة ان يجلدبه-
অর্থ: পবিত্র ক্বোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপি যখন বেশি পুরাতন হয়ে যায় এবং পড়ার অনুযোগী হয়ে যায় তখন তা আগুনে পুড়ানো যাবে না। (বরং তা দাফন করবে)। ইমাম মুহাম্মদ শায়বানি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি আস্ সিয়ারুল কবির কিতাবে এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আর আমাদের হানাফী ফকিহগণ এটাকে গ্রহণ করেছেন, অনুরূপ যখিরাহ্ কিতাবের মধ্যেও রয়েছে আর এমন পুরাতন ক্বোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপি যা পড়ার উপযুক্ত নয়, তা (আবার) বাধাই করে রাখা জায়েয নেই।
২. আদ্ দুররুল মুখতার কৃত- ইমাম আলাউদ্দীন হাছকাফী হানাফীর ১ম খণ্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
الصحف اذا بحال لايقرأ فيه يدفن كالمسلم انتهى-
অর্থাৎ- পুরাতন ক্বোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপি যদি পড়ার উপযোগী না থাকে তখন তা মুসলিম মৃতের মত দাফন করা হবে।
৩. রদ্দুল মুহতার কৃত- ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১ম খণ্ড, ৩৫৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
اى يجعل فى خرقة طاهرة ويدفن فى محل غير ممتهن-
অর্থাৎ- উক্ত পুরাতন ও পড়ার অনুযোগী ক্বোরআন শরীফকে পবিত্র একটি কাপড়ের টুকরায় জড়িয়ে এমন পবিত্র স্থানে দাফন করে দেবে যে স্থানকে অসম্মান করা হয় না। এবং যা পা দিয়ে মাড়ানো হয় না।
৪. আল বাহরুর রায়েক শরহে কানযুদ দাকায়েক কৃত- ইমাম ইবনে নুজাইম মিসরী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১ম খণ্ড, ৩৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فى التجنيس المصحف اذا صار كهنا اى عتيقا وصار بحال لايقرأ فيه وخاف ان يضيع يجعل فى خزقة طاهرة ويدفن لان المسلم اذا مات يدفن فالمصحف اذا صار كذالك كان دفنه افضل من وضعه وموضعا يخاف أن تقع عليه النجاسة يخاف اونحو ذالك-
অর্থাৎ- তাজনীস কিতাবে রয়েছে ক্বোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপি যদি এমনভাবে পুরাতন হয়ে যায় যে, যা পড়ার উপযোগী নয় এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দেয়, তখন তা পবিত্র একটি কাপড়ের টকুরায় জড়িয়ে দাফন করা হবে। যেভাবে কোন মুসলামন মারা গেলে দাফন করা হয়। আর পবিত্র ক্বোরআনের পুরাতন পাণ্ডুলিপিকে দাফন করা উত্তম। কারণ ওটাকে এভাবে কোথাও রেখে দিলে তার উপর নাপাকি লাগার সম্ভাবনা থাকে। তদ্রুপ বাহারে শরীয়ত ৩য় খণ্ড, ৪৯৫ পৃষ্ঠায় ছদরুশ শরীয়ত মুফতি আমজাদ আলী খান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি পবিত্র ক্বোরআনের পুরাতন পাণ্ডুলিপিকে ছাদ দিয়ে দাফন করাটা উত্তম (যা পড়া বা তিলাওয়াত করার যোগ্য নয়) বলেছেন। তা জ্বালানো যাবে না মর্মে ফয়সালা প্রদান করেছেন। সুতরাং জীর্ণশীর্ণ একেবারে পুরাতুন ক্বোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপিকে এবং পবিত্র ক্বোরআনের আয়াত ও পবিত্র হাদীস সম্বলিত কিতাব সমূহকে আগুনে জ্বালিয়ে বা পানিতে না ফেলে পবিত্র কাপড়ে জড়িয়ে পবিত্র স্থানে ছাদসহকারে দাফন করাটা উত্তম পন্থা এবং পবিত্র ক্বোরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। সুতরাং জীর্ণশীর্ণ পুরাতন ক্বোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপি আগুনে জ্বালানো উচিত নয়। বরং যা উত্তম তার উপর আমল করার অনুরোধ রইল। উপরোক্ত বিষয়ে এটাই ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া/ফয়সালা।
[আল্ ফতোয়াল হিন্দিয়া: ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩২৩, আদ্ দুররুল মুখতার: ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৭৭, আল বারুর রায়েক: ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৩৫০ ইত্যাদি।

উত্তর: ২. নামায পড়তে হলে প্রথমে ওযূ করতে হবে। বিনা ওযূতে নামায শুদ্ধ হয় না। স্বেচ্ছায় বিনা ওযূতে নামায পড়লে ঈমান থাকবে না। আর ওযূ ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট কারণ সমূহের মধ্যে ‘কাত বা চিৎ হয়ে’ নিদ্রায় বিভোর হয়ে যাওয়া । অথবা কোন বস্তুর সাথে হেলান দিয়ে এমনভাবে বিভোর হয়ে ঘুমানো যদি ওই বস্তুটি সরিয়ে নেয় তখন সে মাটিতে পড়ে যাবে- এভাবে, এ পরিমাণ শুয়ে ঘুমালেও ওযূ ভেঙ্গে যাবে। তবে তন্দ্রাভাব অল্প ও হালকাভাবে হলে বা নিন্দ্রা/ঘুম পরিপূর্ণ না আসলে ওযূ ভঙ্গ হবে না।

 মুহাম্মদ আক্তার হোসেন
পশ্চিম পোমরা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: ১. ফজরের ফরয নামাযে কেউ ইমামের পেছনে দ্বিতীয় রাকাত পেল। এ ক্ষেত্রে দু’রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ’র নামায আগে আদায় করবে না। জমাতের পরে আদায় করবে? জানালে উপকৃত হবো।

প্রশ্ন: ২. কাপড় শুকানোর সময় পুরুষ মহিলাদের কাপড় বা মহিলা পুরুষের কাপড় দেখলে কোন অসুবিধা হবে কিনা? জানাবেন।

উত্তর: ১. যদি ফজরের ফরয নামাযের আগে ফজরের সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ পড়া না হয় বা জামাআত ছুটে যাওয়ার আশংকায় সুন্নাত না পড়েই জামাআতে শামিল হয়ে জামাআত আদায় করে নেয়া হয়; তখন সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত ছুটে যাওয়া ফজরের দু’রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ আদায় করবে না। যদিও জামাআত আদায়ের পর সূর্যোয়ের আগ পর্যন্ত সময় থাকে। তাছাড়া ফজরের নামাযের আগে ফজরের সুন্নাত নামায আরম্ভ করে ভঙ্গ করা হলে আর ফজরের ফরজের পর তা পড়তে চাইলেও পড়া জায়েয নেই। বরং ফজরের অনাদায়ী সুন্নাত সূর্যোদয়ের পর সূর্য একটু উপরে উঠার পর (অন্তত ২০ মিনিট) কাযা আদায় করবে।
অবশ্য অন্যান্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্র চেয়ে ফজরের সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহর গুরুত্ব অনেক বেশী বিধায় ফজরের ফরয নামাযের জামাআত শুরু হয়ে গেলে তখন সুন্নাত আদায় করে ফজরের জামাআতে শরীক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ফজরের সুন্নাত আদায় করে ফরযের জামাআতে শামিল হবে আর ফজরের সুন্নাত আদায় করতে গেলে ফজরের জামাআত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে জামাআতে শরীক হবে। ফজরের সুন্নাত সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর পড়বে। ফজরের সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্র বিষয়ে এটাই গ্রহণযোগ্য অভিমত।
[ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ফাতাওয়ায়ে রযভীয়্যাহ্: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর- ৪৬২, ৬১৬, ৬২০ এবং মুমিন কি নামায: ৭ম অধ্যায়]

 উত্তর: ২. নারীদের কাপড় শুকানোর ক্ষেত্রে তা পরপুরুষের দৃষ্টির আড়ালে রাখা উচিত ও উত্তম তরিকা। যাতে কোন বেগানা নারীর প্রতি পরপুরুষের অন্তরে কু-ধারণা সৃষ্টি না হয়। আর কোন নারী যদি এমনটা করে তথা নিজের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় গাইরে মুহরাম পুরুষের দৃষ্টির আড়ালে শুকায় তা অবশ্যই তাকওয়া বা পরহেজগারি। ফলে কু-ধারণা হতেও রক্ষা পাবে এবং পাপ হতেও রক্ষা পাবে। কেননা অনেক সময় কু-ধারণা পাপ বা গুনাহের কারণ হয়ে যায়। তবে কোন পুরুষের কু-ধারণা ব্যতিত কোন মহিলার কাপড়ের দিকে কোন পুরুষের দৃষ্টি পড়লে বা কোন পুরুষের কাপড়ের দিকে কোন বেগানা যুবতী মহিলার দৃষ্টি পড়লে অসুবিধা নেই।

 রোকেয়া বেগম
গোবিন্দারখীল, পটিয়া পৌরসভা, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: ১. বিতিরের নামাযের সময় শেষের ৩য় রাকাতে ভুলে পুনঃ তাকবির না করে (সূরা ফাতিহা ও একটি সূরা পড়ে) রুকুতে ও সাজদায় চলে যায়। তখন মনে পড়ে যে, আমিত বিতরের নামাযে দো‘আ কুনূত পড়া হয়নি। তখন সাহু সাজদাহ্ দিয়ে নামায শেষ করি। এখন এই নামায শুদ্ধ হবে? না পুনঃ পড়তে হবে। এই সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রশ্ন: ২. অপবিত্র থেকে পবিত্র হওয়ার মধ্যখানের সময়ের মধ্যে দুরুদ, তাসবিহ, আল্লাহ্র পবিত্র নাম জপতে পারা যায়? অনেকে কর্মস্থল হতে বাসায় ফিরতে ৬/৭ ঘন্টার ব্যবধান থাকে বা প্রয়োজন হয়। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর:১. বিতর নামাযে দো‘আ-এ কুনূত পড়া ওয়াজিব। যদি কেউ দো‘আ-এ কুনূত পড়তে ভুলে যায় এবং রুকুতে চলে যায়, তখন রুকু থেকে আর ফিরে যাবে না। অর্থাৎ সোজা হয়ে দাঁড়াবে না বরং রুকুর তাসবিহপূর্ণ করে দাঁড়াবে। নামায (তৃতীয় রাকাত) পূর্ণ করে সাহু সাজদা দিবে। নামাযে বিতর আদায় হয়ে যাবে।
[বাহারে শরীয়ত, ফাতওয়ায়ে আলমগীরি, ফাতওয়ায়ে রযভীয়্যাহ্, ৩য় খণ্ড, ৬৪৫ পৃষ্ঠা, মুমিন কি নামায ৭ম অধ্যায় ও যুগজিজ্ঞাসা ইত্যাদি]

উত্তর: ২. নিশ্চয় আল্লাহ্ পবিত্র, যিনি পবিত্রতাকে ভালবাসেন। তাই একজন মুসলমানের উচিত ওযূ ও গোসলের মাধ্যমে পবিত্র থাকার চেষ্টা করা। অপবিত্র অবস্থায় নামায আদায় ও ক্বোরআন মজীদ সম্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখস্ত জিকির, আযকার, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি আদায় করতে পারবে। তবে ওযূ অবস্থায় পাঠ করা অধিকতর উত্তম। এ বিষয়ে পূর্বে তরজুমান প্রশ্নোক্তর বিভাগে আলোচনা করা হয়েছে।

দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা  একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে  প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তর দাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা: প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •