অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান
আমাদের প্রিয়নবী তাজেদারে মদীনা সরওয়ারে কায়েনাত হুজুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত ও প্রচারিত দ্বীন ইসলাম’র রক্ষণ ও হেফাজতের দায়িত্ব পালন করছেন পরম শ্রদ্ধাষ্পদ আওলাদে রসূল ও নায়েবে রসূলগণ।
ইমামে আলী মোকাম হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা ধর্মদ্রোহী, নবীদ্রোহী, কুলাঙ্গার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নরাধম কুখ্যাত ইয়াজিদের খপ্পর থেকে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও প্রিয়নবীর প্রচারিত দ্বীন ইসলাম এবং সুন্নাতকে রক্ষাকল্পে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে সপরিবারে কারবালার মরুপ্রান্তরে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁরই উত্তরসূরি বংশধর গাউসিয়তের ঝান্ডা বহনকারী শরীয়ত, তরীক্বত, হাকীকত ও মারেফতের আধার মাহবুবে সোবহানি কুতুবে রব্বানী হযরত শেখ সুলতান সৈয়্যদ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহে আলায়হি লুপ্ত প্রায় ‘দ্বীন ইসলাম’কে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবে বর্তমান হয়ে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আওলাদে রসূল ‘দ্বীন ইসলাম’ শরীয়ত, তরীক্বত এর ধারক রক্ষক হিসেবে পৃথিবীতে জিহাদ করে যাবেন ইনশাআল্লাহ্। এরই ধারাবাহিকতায় গাউসে জমান, আওলাদে রসূল (৩৯তম) আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহে আলায়হির আবির্ভাব ঘটে দ্বীন মাযহাব মিল্লাতের প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে।
জন্ম : পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের (খাইবার পাখতুন খাওয়া) হাজারা জিলার সিরিকোট শরীফের নবী বংশে (১৯১৬ খ্রি.) গাউসে জমান আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) শুভাগমন করেন পিতা আওলাদে রসূল আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) ও মাতা সৈয়্যদা খাতুনের ঔরসে।
সৈয়্যদুশ শুহাদা ইমামে আলী মোকাম হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার বংশধর আওলাদে রসূল, সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি এঁদেরই বংশধর। সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ আফ্রিকার কেপটাউন, মোম্বাসা জাঞ্জিবারসহ বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বীন ইসলাম প্রচার ও ব্যবসার কাজে ব্যয় করেছেন। এক সময় দেশে প্রত্যাবর্তন করলে বিদুষী স্ত্রী সৈয়্যদা খাতুন তৎকালীন বিশ্বখ্যাত বুযুর্গ হরিপুর নিবাসী এলমে লুদুন্নীর প্র¯্রবণ অদ্বিতীয় ও অলৌকিক বিস্ময়কর সৃষ্টি ‘মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রসূল’ নামক ত্রিশপারা সম্বলিত দুরূদ শরীফের লেখক কুতুবে আলম, গাউসে দাওরান, হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রহ.)’র হাতে বাইয়াত হন। হঠাৎ একদিন হুজুর চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্র শাহাদাত আঙ্গুলি নিজের পিঠে নিয়ে ঘর্ষণ করতে করতে বললেন, ‘ইয়ে পাক চিজ তুম লে লো, (এ পবিত্র জিনিষ তুমি নিয়ে নাও), এ রকম আকস্মিক মন্তব্যের রহস্য উন্মোচিত হয় তৈয়্যব শাহর জন্মগ্রহণের মধ্যদিয়ে। নাম রাখা হয় তৈয়্যব (অর্থাৎ পবিত্র), হুজুর চৌহরভীর ‘পাক’ শব্দার্থ অনেকটা কাকতালীয়ভাবে হলেও নামের অর্থ ও বরকত এক ও অভিন্ন। এ জন্য হুজুর সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, ‘তৈয়্যব মাদারজাত ওলী হ্যায়’, মায়ের গর্ভ হতে ওলী হয়ে এসেছেন।
এতে বুঝা যায় পবিত্র আমানত এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হবার প্রক্রিয়া অলৌকিক ও আধ্যাত্মিক পন্থায় হয়ে থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় বহু শতাব্দী পূর্বে এ রকম আরেকটি কারামতের অবতারণা হয়েছিল। শায়খুল মাশায়েখ আল্লামা মহিউদ্দিন ইবনুল আরবী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)’র জন্মপূর্ব ঘটনাটিও ছিল অবিকল এ রকম। সন্তান প্রার্থীর পিঠের সাথে নিজের পিঠ ঘর্ষণ করে গাউসুল আযম মীর মহিউদ্দিন সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি যে সন্তান দান করেছিলেন সে মহান ব্যক্তিত্ব ইবনুল আরবী বিশ্বে সুফীবাদ ও আধ্যাত্মিক সোপানের উঁচু স্তরের মর্যাদায় আসীন হন।
শিশু তৈয়্যবকে শিরনী খাওয়ানোর জন্য (আমাদের দেশেও প্রচলিত) হযরত চৌহরভীর দরবারে নিয়ে যান আম্মাজান। খলিফায়ে শাহে জিলান হযরত চৌহরভী মুখে শিরনী তুলে না দিয়ে শিশুর উদ্দেশ্যে বলেন, তৈয়্যব তুম নেহী খাতেতো, ম্যায় ভী নেহী খায়েঙ্গে। কথা শেষ হতে না হতেই মাদারজাত ওলী শিশুটি গরম শিরনীতে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে খাওয়া শুরু করলেন। মাতা পিতাসহ উপস্থিত সকলেই বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন। অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে কারো বুঝতে বাকী রইলো না যে, এ শিশু ভবিষ্যতে উঁচু দরজার ওলী হবেন। মাতৃদুগ্ধ ছাড়ার কাছাকাছি সময়ে শিশু তৈয়্যবকে পুনরায় নিয়ে হুজুরের দরবারে যান আম্মাজান। ক্ষুধার্ত শিশু দুধপান করার জন্য মায়ের কোলে ছট্ফট্ করছেন দেখে হুজুর চৌহরভী বললেন, ‘তৈয়্যব তুম বড়া হো গায়া, দুধ মত পিয়ো’। দুগ্ধপোষ্য শিশু সাথে সাথে স্থির হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে আম্মাজান দুধ পান করানোর শত চেষ্টা সত্ত্বেও শিশু তৈয়্যবকে দুধ পান করাতে পারেননি। বেশী সাধাসাধি করলে বলতেন, বাজি-নে মানা কিয়া, দুধ নেহী পিয়োঙ্গা’ সুবহানাল্লাহ্। কারামতের প্রকাশ শুরু হলো শিশু বয়স থেকে। অল্প বয়সে (৫/৬ বছর) একদিন আব্বা হুজুরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাজী, নামাজ মে আপ আল্লাহ্ কো দেখতা হ্যায়’, মুঝেহভী দেখনা হ্যায়। সিরিকোটি ছাহেব মসজিদে যাবার সময় একদিন শিশু তৈয়্যবও পিছু নিলেন। মসজিদের দরজার সামনে এসে শিশু তৈয়্যব থেমে গিয়ে বিস্ময়াভিভূত হয়ে মসজিদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আব্বাজানকে জিগ্যেস করেন, ‘ইয়ে কিসকা ঘর হ্যায়, ‘কৌন র্যাহতা হ্যায়?’ জমানার গাউস, হুজুর সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি শিশু তৈয়্যবের এমন বহু ঘটনার মাধ্যমে বুঝলেন যে এ শিশু একদিন বেলায়তের শীর্ষে পৌঁছে যাবেন। বাবা দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকট ছেলের জন্য দোয়া করলেন। এ রকম বহু কারামত তৈয়্যব শাহর শৈশবে ঘটেছে, যা স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। কুতবুল আউলিয়া সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ প্রায়শ: বলতেন, ‘তৈয়্যব মাদারজাত ওলী হ্যায়, উসকা মকাম বহুত উঁচা হ্যায়।’ আরো বলতেন, বেলায়তের অবস্থান সম্পর্কে তৈয়্যবের আম্মাজান অধিক জানেন।
হুজুর কেবলার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি আব্বাজান-আম্মাজানের নিকট। অতি অল্প বয়সে তিনি কুরআন হিফয করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভীর প্রতিষ্ঠিত হরিপুর মাদরাসায়ে রহমানিয়ায় খ্যাতনামা উস্তাদদের নিকট হতে বিশেষ করে প্রখ্যাত আলিম আল্লামা সরদার আহমদ লায়লপুরীর বিশেষ তত্ত্বাবধানে কুরআন-হাদিসসহ অনেক বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করার সুযোগ পান। তিনি হরিপুর রহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করে অধ্যক্ষ পদে আসীন হন।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে শাবান মাসে হুযুর তৈয়্যব শাহ্ প্রথম চট্টগ্রাম আসেন। হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) রেঙ্গুনের মিশন শেষ করে চট্টগ্রামে ঐ সময় থেকে স্থায়ীভাবে শরিয়ত, তরিকত তথা সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার মিশন শুরু করেন কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস ভবনে খানকাহ স্থাপনের মাধ্যমে। চট্টলার কৃতি সন্তান হুজুর কেবলার খলিফা ও প্রেসের মালিক আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আবদুল খালেক (রহ.) এর অনুরোধে হুজুর এখানে অবস্থান করতেন। এতদঞ্চলে সিলসিলার প্রচার প্রসার মূলত এখান থেকেই শুরু হয়।
উল্লেখ্য, হযরত সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) শেষ সফরের সময় (১৯৫৮খ্রি.) তৈয়্যব শাহ্কে ‘খিলাফত’ প্রদান ও দরবারের সাজ্জাদানশীন পীর মনোনীত করেন। আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র সংশোধনের দায়িত্ব অর্পণ করে আনজুমান ট্রাস্টে অভিষিক্ত করেন এই বছরেই। তাঁর এদেশে আগমনের মাধ্যমে সুন্নীয়তের প্রচার প্রসার আরো গতিশীল হয়ে উঠে। ১৯৭৪ সালে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন উপলক্ষে ‘জশনে জুলুস’ বের করার নির্দেশ দেন আনজুমান কর্তৃপক্ষকে। সে বছর প্রথম জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী বের হয় তৎকালীন আনজুমান নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে। চট্টলবাসী অবাক বিস্ময়ে এ বর্ণাঢ্য মিছিল প্রত্যক্ষ করেন। শরিয়তসম্মতভাবে সুশৃংখল এ জুলুছ দেখে বাতিলপন্থিরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে অপপ্রচার শুরু করলো। কিছু সুন্নীগোষ্ঠীও বিরুদ্ধাচরণ শুরু করলো। জমানার মোজাদ্দেদ এর মুখ নিঃসৃত বাণী ও কর্মকাণ্ড দ্বীন ইসলাম শরিয়ত তরিকতকে অধিকতর সংহত করে মূল থেকে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে সঠিক পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে কিছু নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করেন। সফলতা শত ভাগ। বর্তমানে বিশ লক্ষাধিক নবী-ওলী প্রেমিকদের জশনে জুলুছ যেমন মানুষকে আল্লাহর-রসূলের দিকে আকৃষ্ট করে, তেমনি বাতিলপন্থিদের মনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর উত্তরোত্তর ব্যাপকতা ও শ্রীবৃদ্ধি যুগশেষ্ঠ সংস্কারকের অমূল্যবাণী শাশ্বত রূপ পরিগ্রহ করেছে আজ। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে হতে হুজুর তৈয়্যব শাহ্ ও ১৯৮৭ খ্রি. হতে সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের এ জুলুছের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ইউনিয়ন ওয়ার্ড প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনজুমান ট্রাস্টের প্রত্যক্ষ মদদে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের সহযোগিতায় এ জুলুছ ব্যাপকভাবে পালিত হয়ে আসছে।
হুজুর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে আনজুমান ট্রাস্টকে নির্দেশ দিলেন শরিয়ত, তরিক্বত, নবী ওলী প্রেমিকদের তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মুখপত্র হিসেবে একটি পত্রিকা বের করা সময়ের দাবী এবং এটা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। বাতিল তথা নবী ওলীর দুশমনদের মোকাবেলা করতে শুধু ওয়াজ-নসিহত যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ক্ষুরধার লেখনী, অবিলম্বে একটি মাসিক পত্রিকা বের করো। হুজুরের কথামতো ‘তরজুমান-এ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ নামক একটি মাসিক পত্রিকার যাত্রা আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। হুজুর কেবলা এর নামকরণ ও উদ্বোধন করেন। অনেক ঝড় ঝাপটা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মাসিক তরজুমান বিগত ৪৫ বছর ধরে বাতিলের মুখোশ উন্মোচন করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদাভিত্তিক লেখা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উত্তরোত্তর সার্কুলেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হুজুর কেবলা বলেছেন, ‘ইয়ে তরজুমান বাতিল কেলিয়ে মউত হ্যায়।’ আজ এর যথার্থতা সকলেই হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন। কিয়ামত তক ইয়ে তরজুমান রেহেগা।
ফজরের নামাজান্তে হুজুর কেবলার দরসে কুরআন যারা শুনেছেন তারা কোনদিন ভুলতে পারবেন না। শান-এ নুযুলসহ আয়াতে করীমার অর্থ ও ব্যাখ্যা শুনে আলেম-ওলামাগণ তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে যেতেন।
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে আরেকটি সংগঠনের সৃষ্টি করলেন তিনি। গাউসে পাকের ঈমানী ফৌজ হয়ে শরিয়ত তরিক্বতের প্রসারে গ্রামেগঞ্জে, পাড়া মহল্লায় সুন্নী জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন করার নির্দেশ দিলেন, নাম রাখলেন ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’। লক্ষ লক্ষ পীর ভাই-বোন সুন্নী জনতা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন গাউসিয়া কমিটির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীন মাযহাব মিল্লাতের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’ আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার একমাত্র একক অঙ্গ- সংগঠন। আনজুমান ট্রাস্ট’র নির্দেশমতো পরিচালিত এ সংগঠনের একটি শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। মাদরাসা, খানকাহ্, মসজিদ শুধু প্রতিষ্ঠা করলেই হবে না, সাথে সাথে এগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন রয়েছে। ‘দ্বীনকো বাচাও, ইসলামকো বাঁচাও, সাচ্চা আলেম তৈয়্যার করো’, হুজুর কেবলার এ অমীয় বাণী বাস্তবে রূপদান করতে হলে শিক্ষক ও লেখক যেমন দরকার, তেমনি ওয়াজ-মাহফিল, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে সঠিক ও যুগোপযোগী বক্তব্য (শরিয়তভিত্তিক) প্রদানের মাধ্যমে সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ততোধিক প্রয়োজন।
আর্ত মানবতার সেবায় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ দেশ-বিদেশে এক অত্যুজ্জ্বল ও অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা ও মর্মন্তুদ পরিস্থিতিতে পিতা- মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন যখন কেউ কারো রইলো না তখন গাউসিয়া কমটির ভাইয়েরা মৃত্যু ঝুঁকিকে উপক্ষো করে কাফন-দাফন হতে সবপ্রকার সেবা শশ্রুসা প্রদান করে ধর্ম-বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষ সকল মানুষের সাহায্যে এগিয়ে গেছেন। আর্ত মানবতার সেবায় মহানব্রত নিয়ে আউলাদে রাসূল এর সংগঠন প্রিয় নবী রাহমাতুল্লিল আলামিনের প্রদর্শিত নীতি-আদর্শকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়াই হল গাউসিয়া কমিটির মূল লক্ষ্য। অতীত বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও গাউসিয়া কমিটির উদ্যোগ ও মানবসেবা কার্যক্রম দৃশ্যমান থাকবে। ইনশা-আল্লাহ্।
হুজুর রাজধানী ঢাকার মুহাম্মদপুরে ১৯৬৮ সালে কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাদ্রাসাও মসলকে আ’লা হযরত এর নীতি-আদর্শ ধারণ করে পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশব্যাপী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রচার-প্রসারকে তরান্বিত করার উদ্দেশ্যে আরো অনেক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁরই নির্দেশে শতাধিক মাদ্রাসা, মসজিদ, খানকাহ্ আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে।
‘তরজুমান’ প্রকাশ করা, জশনে জুলুশ’র প্রবর্তন সর্বশেষ গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এর বাস্তবতা ও গ্রহণযোগ্যতা আজ বিশ্যব্যাপী সমাদৃত। তাঁর এসব অপূর্ব সৃষ্টি দেশে-বিদেশে নবী-ওলী প্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ ও ঈমানী-রূহানী কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বোত্তম মহৌষধ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।
হুজুর কেবলার ২৯তম ওফাত দিবসে বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচি ও সালানা ওরস মুবারক আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফয়ুজাত হাসিল করতে পারি আল্লাহ জাল্লাশানহুর নিকট এ আমাদের ফরিয়াদ। আল্লাহ্ জাল্লাশানুহু হুজুর ক্বেবলার দরজা বুলন্দ করুন। আমিন। আমরা যেন হুজুরের নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালিত করে রেজামন্দি হাসিল করতে পারি- এ হোক আমাদের শপথ।
লেখক: প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী- আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম