আ’লা হযরতের দৃষ্টিতেঃ শরিয়তের আলিমরা তরিক্বতের প্রতিবন্ধক নয়; বরং সহায়ক- মাওলানা মুহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন আনোয়ারী

0

আ’লা হযরতের দৃষ্টিতেঃ
শরিয়তের আলিমরা তরিক্বতের প্রতিবন্ধক নয়; বরং সহায়ক
মাওলানা মুহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন আনোয়ারী

আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি বে-হদ দরূদ ও সালামের নজরানা পেশ করছি। বর্তমান বিপর্যস্ত মুসলিম বিশ্বের নাজুক পরিস্থিতিতে শরিয়ত ও তরিকতের মধ্যে বিভাজন রচনা না করে উভয়ের সমন্বয়ে ইসলামের যে পূর্ণতা তা বুঝানোর জন্য ‘ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির সঠিক সুন্দর মতামত পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরলাম।

এ প্রসঙ্গে যায়েদ নামক এক ব্যক্তি আ’লা হযরতকে বললেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস (অর্থাৎ আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিশ) এর মধ্যে (ওলামা) শব্দের শরিয়ত ও তরিকত উভয় প্রকার জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যিনি শরিয়ত ও তরিকত উভয় প্রকার জ্ঞানের অধিকারী তিনিই নবীগণের প্রকৃত উত্তরাধিকারী।

অপরদিকে আমর নামক এ ব্যক্তিও আ’লা হযরতের দরবারে আরজ করলো, কতিপয় ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব ও কিছু হালাল-হারামের নাম শরিয়ত। যেমন- ওজু, নামাজ ইত্যদি। আর আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছার নাম তরিকত। এতে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের হাকীকত প্রকাশিত হয় এবং এটি কুলবিহীন অতল সমুদ্র। অথচ শরিয়ত হলো তরিকতের সমুদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানিতুল্য। নবীগণের উত্তরাধিকারের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছা। এটিই রিসালত ও নুবূয়তের একমাত্র চাহিদা এবং এ উদ্দেশ্যেই তাঁরা প্রেরিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কি?

আ’লা হযরত বলেন, যায়েদ ও আমরের তর্ক থেকে বর্তমানে মোটামুটিভাবে ৪টি দলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
১. একদল শুধু শরিয়তে বিশ্বাসী (ভ্রান্ত মদবাদ)
২. একদল শুধু তরিকতের বিশ্বাসী (ভ্রান্ত মতবাদ)
৩. একদল শরিয়তকে হালকাভাবে গ্রহণ করে তরিকতকে প্রাধান্য দেয়। (ভ্রান্ত মতবাদ)
৪. সত্যদল হলো- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, যারা শরীয়ত ও তরিকতের সমন্বয়ে ইসলাম ধর্মের পূর্ণতায় বিশ্বাসী।

যাই হোক, ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত উভয়ের তর্কে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন যে, যায়েদের কথা সত্য এবং শুদ্ধ আর আমরের কথা ভুল ও অশুদ্ধ। আ’লা হযরত এ ব্যাপারে কয়েকটি ধারায় বুঝাচ্ছেন-
১. আমরের উক্তি- শরিয়ত ফরজ, ওয়াজিব ও হালাল-হারামের বিধানের নাম। এ বক্তব্য অন্ধত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে শারীরিক, আত্মিক, কলবী এবং যাবতীয় ঐশ্বরিক জ্ঞান ও সীমাহীন খোদা পরিচিতির নাম শরিয়ত। আর এটির প্রত্যেক ফোঁটাকে তরিকত ও মা’রেফত বলে। তাই সকল অলি-আল্লাহর অকাট্য ইজমা মতে-হাকীকতকে পবিত্র শরিয়তের উপর পেশ করা ফরজ। যদি উক্ত হাকীকত শরীয়ত মোতাবেক হয়, তখন তা হক বলে সাব্যস্ত ও গ্রহণযোগ্য হবে। নতুবা তা অসত্য হিসেবে অগ্রাহ্য হবে। অতএব, কেবল শরিয়তই মূলকার্য। শরিয়তের উপরই এসব কিছু নির্ভরশীল। এবং শরিয়তই সর্বক্ষেত্রে মাপকাঠি এবং কষ্টিপাথর। শরিয়ত ‘রাস্তা’কে বলে আর শরিয়তে মুহাম্মাদী ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শুধু কিছু শারীরিক করণীয় বিধানের সাথে তা খাস নয়, বরং শরিয়তে মুহাম্মদীই একমাত্র রাস্তা; প্রত্যেক নামাজ এবং প্রত্যেক রাকাতেই ঐ রাস্তায় পরিচালিত করার এবং এর উপর স্থির ও অটল থাকার মুনাজাত করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব। যেমন- আল্লাহ্ সূরা ফাতেহার মধ্যে সে মুনাজাত শিখিয়ে দিয়েছেন এভাবে অর্থাৎ আমাদেরকে প্রিয় নবীজি’র রাস্তায় পরিচালিত করুন, তাঁর শরিয়তের উপর আমাদেরকে অটল রাখুন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইমাম আবুল আলীয়া রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও ইমাম হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি প্রমুখ ‘সিরাতে মুস্তাকীম’ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন- হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দুই সাহাবী হযরত আবু বকর সিদ্দিক ও হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার কথা বুঝানো হয়েছে।
কুরআন পাকের অন্যত্রে ইরশাদ হয়েছে-
অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আমার রবকে সরল পথেই পাওয়া সম্ভব।
পবিত্র কুরআনে আরো এরশাদ হয়েছে-
অর্থাৎ হে হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন যে, এটা (শরিয়তই) আমার সরল সহজ রাস্তা। সুতরাং এর অনুসরণ কর এবং এ রাস্তা ভিন্ন অন্য রাস্তাগুলোর পেছনে যেওনা। কেননা ওই সকল রাস্তা তোমাদেরকে সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
কুরআনের এ আয়াতসমূহ উল্লেখ করে আ’লা হযরত স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, শরিয়তই একমাত্র ঐ রাস্তা, যা দ্বারা আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছা যায়। এটি ব্যতীত অন্য রাস্তায় চললে সঠিক রাস্তা থেকে দূরে সরে যাবে।
২. ‘আমর’ এর দ্বিতীয় উক্তি- তরিকত হল আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছার নাম। এর উত্তরে আ’লা হযরত বললেন- এটি পাগলামী আর মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা ন্যূনতম শিক্ষিত ব্যক্তিও জানেন যে, তরীক, তরিকা ও তরিকত কেবল পথ বা রাস্তাকে বলে। তা পৌঁছার অর্থে ব্যবহৃত হয় না। সুতরাং তরিকত নিঃসন্দেহে পথ বা রাস্তাকে বলে। এখন তরিকত যদি শরিয়ত থেকে আলাদা হয়, তাহলে কুরআনের হুকুম অনুযায়ী সে ব্যক্তি খোদা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না; বরং শয়তান পর্যন্ত পৌঁছবে। জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছবে না বরং জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছবে। কেননা শরিয়ত বাদ দিয়ে যাবতীয় পথ/রাস্তা বাতিল বলে কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা। বাস্তবেও সাব্যস্ত হলো যে, তরিকত শরিয়তের নামান্তর এবং তা (তরিকত) শরিয়তের একটি উজ্জ্বল অংশ বিশেষ। বুঝা গেলো যে, শরিয়ত থেকে তরিকত বিচ্ছিন্ন হওয়া অসম্ভব ও অশোভনীয়। যে ব্যক্তি তরিকতকে শরিয়ত থেকে আলাদা মনে করে, সে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তা বাদ দিয়ে ইবলিসের রাস্তাকেই গ্রহণ করেছে। কিন্তু তরিকত কখনও ইবলিসের রাস্তা হতে পারে না। নিঃসন্দেহে এটিও আল্লাহর রাস্তা এবং নিঃসন্দেহে তা পবিত্র শরীয়তের উজ্জ্বল অংশ বিশেষ।
৩. আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি আরো বলেন- তরিকতের জ্ঞানে যা কিছু উদ্ঘাটিত হয়, তা শরিয়তের উপর আমল করারই ফলমাত্র। কেননা শরিয়তের অনুসরণ ছাড়া গোপনীয় তথ্য উদ্ঘাটন তো পাদ্রী, যোগী এবং সন্যাসীদের দ্বারাও হয়ে থাকে। কিন্তু শরীয়তবিহীন কাশ্ফ সাধন উক্ত সাধকদেরকে জাহান্নাম ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তির দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং বুঝা গেল তরিকতকে শরীয়তের ভিতর দিয়েই বুঝতে হবে।
৪. আমরের আরেকটি উক্তি-এ শরিয়ত হলো তরিকতের সমুদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানির তুল্য’- আ’লা হযরত এর জবাবে বলেছেন, ‘‘একজন বদ্ধ পাগলই এ কথাই বলতে পারে। কারণ, এ রকম পাগল আসলেই যে সমুদ্রের কথা বলছে সম্ভবত সে সমুদ্রই দেখেনি। সে পাগলকে আমি (ইমাম আ’লা হযরত) পরিস্কার করে জানিয়ে দিচ্ছি যে, মূলত শরিয়তই হলো সমুদ্র আর তরিকত হলো তা থেকে নির্গত একটি শাখা। শরিয়ত এমন এক প্রস্রবন স্থল, যার থেকে নির্গত তরিকত নামীয় সমুদ্র সর্বাবস্থায় প্রস্রবন স্থল, যার থেকে নির্গত তরিকত নামীয় সমুদ্র সর্বাবস্থায় শরিয়তের প্রতি মুখাপেক্ষী। মনে করুন শরিয়ত নামের মহান সমুদ্রের শাখা তরিকতের পানি দ্বারা আপনি যত ব্যবহার করুন সেচ কাজ করুন ইত্যাদি। অধিকন্তু শরিয়ত থেকে তরিকতের শাখাটি সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সাথে সাথে তরিকতের পন্থায় আসা পানি আপনি আর ব্যবহার করতে পারবেন না। চিরতরে সেই তরিকত নামীয় সমুদ্র ধবংসই হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় শরিয়ত থেকে তরিকত বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাথে সাথে সেই তরিকত-সমুদ্র আগুনের সমুদ্রে হয়ে বিভীষিকা অগ্নি শিখায় রূপ নেবে। যে অগ্নি শিখা হতে বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। সেই অগ্নি শিখা যদি বাহ্যিকভাবে দৃষ্টিগোচর হতো, তাহলে সে সম্পর্ক ছিন্নকারী জ্বলে পুড়ে কালো মৃত্তিকায় পরিণত হওয়ার পর বাকীরা এই ভেবে বেঁচে যেতো যে, তার এই খারাপ পরিণতি দেখে শরিয়ত অস্বীকারকারীরা উপদেশ গ্রহণ করতো। কিন্তু ব্যাপার এমন নয় বরং উক্ত শরিয়ত থেকে আলাদাকৃত তরিকত মানে-
অর্থাৎ আল্লাহর জ্বলন্ত অগ্নি যা ওই সকল লোকের অন্তরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নাস্তানাবুদ করে দেবে। তবে শরিয়ত থেকে বিছিন্ন ব্যক্তির অন্তর ভিতর থেকেই জ্বলে গেছে। আর ঈমান কালো মৃত্তিকার আকার ধারণ করেছে। বাহ্যিকভাবে তা পানি আকারে সমুদ্র মনে হয়, কিন্তু বাতেনীভাবে ওটি অগ্নিকুণ্ড। আ’লা হযরত আফসোস করে বলেন- হায়! হায়! শরিয়ত ও তরিকতের মাঝে সৃষ্ট পর্দা (বিভাজনকারী) লক্ষ লক্ষ মানুষকে এভাবে ধবংস করে দিয়েছে। শরিয়ত ও তরিকতকে বিভাজনকারীর উদাহরণ কুরআনের এ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
অর্থাৎ-পাশাপাশি প্রবহমান দুই সমুদ্রের একটির পানি খুব মিষ্টি, আর অপরটির পানি খুব লোনা। সেই লোনা বা লবণাক্ত সমুদ্র হলো বাতিল তরিকত (শরিয়ত বিহীন তরিকত) ও অভিশপ্ত শয়তানের ধোঁকামাত্র। তাই প্রকৃত আলিমগণের কিছুতেই শরীয়তবিরোধী তরিকতে বিশ্বাসী হওয়া ঠিক নয়। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে চিরদিন লিপ্ত থাকবে। ফলে এদের গোনাহের বোঝা এ জাতীয় আলেমদেরকেই বহন করতে হবে। আল্লাহ্ আমাদেরকে হেফাজত করুক।
অতএব, মিষ্ট পানিযুক্ত সমুদ্র তথা শরিয়ত থেকে নির্গত তরিকতের সমুদ্র থেকে উপকার গ্রহণকারীর সর্ব অবস্থায়ই তরিকতের প্রত্যেক নব তরঙ্গের উপর তার রং ও সৌরভকে মূল প্রস্রবন স্থলের তথা শরীয়তের রং মজা ও সৌরভের সাথে মিলিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সজাগ হয়ে তাকাতে হবে ওই তরঙ্গ উক্ত প্রস্রবণ স্থল শরিয়ত থেকে বের হয়ে এসছে, না কি শয়তানের দুর্গন্ধজনিত প্রস্রাবের প্ররোচনা দিচ্ছে। আফসোসের বিষয় যে, এ পবিত্র বরকতময় প্রস্রবন স্থল তথা শরিয়তের পূর্ণ পবিত্রতার স্বাদ ও মজা তাড়াতাড়ি তার জিহ্বা থেকে পড়ে যায় এ কারণে যে, সে ব্যক্তি শরিয়ত থেকে বিছিন্ন হয়ে গেছে। আর গোলাপজলও প্রস্রাবের মধ্যে ব্যবধান করতে অক্ষম থেকে যায় এবং সে ইবলিশের দুর্গন্ধজনিত লবণাক্ত প্রস্রাব (বাতিল তরিকা) পান করে ধারণা করে যে, তরিকতের সমুদ্র থেকে সুগন্ধযুক্ত সুন্দর মিঠা পানি পান করছে। শরিয়ত উল্লিখিত আলোচনা তথা প্রস্রবন স্থল ও সমুদ্রের দৃষ্টান্তেরও অনেক ঊর্ধ্বে জেনে রাখা উচিত, পবিত্র শরিয়ত আল্লাহর নুরের ফানুস। ধর্মীয় আলেমদের মধ্যে তা ব্যতীত আর কোন আলো নেই। তবে, সে আলো বর্ধিত করা ও প্রাচুর্য চাওয়ার নামই হচ্ছে তরিকত। যা দ্বারা বান্দাহর মাঝে বস্তুর হাকিকত উদঘাটিত হয়ে আল্লাহর নূরের প্রকাশ ঘটে। এটি জ্ঞানের (˜žŸ) পর্যায়ে ‘মা’রিফাত’ আর তাহকীকের পর্যায়ে হাকীকত নামে প্রকাশ। অতএব বাস্তবিক এই শরিয়তই তার বিভিন্ন স্তরের মহিমায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। সার সংক্ষেপ কথা হলো- শরিয়তই প্রকৃত আলো। তরিকত, হাকিকত ও মা’রিফাত হলো শরিয়তের আলোক-সজ্জার ও সৌন্দর্য্যরে সমুজ্জ্বল শাখা।
মুসলমানদের জন্য প্রতিটি নিঃশ্বাস ও মুহূর্তই শরিয়তের অনুকূল হতে হবে। অন্যথায় জীবনের সবকিছুই বৃথা যাবে। তাইতো নবী করীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
অর্থাৎ-ফিকহে (শরিয়ত) ব্যতীত ইবাদতকারী ওই গাধার ন্যায়, যে চাক্কি টানে।
অপর হাদীসে মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন-
অর্থাৎ- দু’জন লোক আমার পিট ভেঙ্গে দিয়েছে- একজন মুর্খ ইবাদতকারী, অপরজন প্রকাশ্য কবীরাহ্ গুনাহকারী আলিম।
শরিয়তের জ্ঞান (ইলম) বিহীন সুফী-সাধক নামধারীদেরকে শয়তান আঙ্গুল দিয়ে নাচায়। মুখে লাগাম নাকে রশি লাগিয়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই নিয়ে যায়। যেমন কোরআনে বর্নিত হয়েছে-
অর্থাৎ-এ রূপ শয়তানদের চরদের ধারণা যে, তারা ভাল কাজ করছে, বাস্তবিকপক্ষে এরূপ ধারনা অবাস্তব।
ইমাম তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন-
অর্থাৎ-হাজারো আবেদের চেয়ে একজন ফকীহ্ (শরিয়তের জ্ঞানের অধিকারী) শয়তানের উপর চরম শক্তিশালী। শরিয়ত বাদ দিয়ে তরিকতের প্রাধান্য দেওয়া আলিমদের ও অনুসারীদের জানা উচিত- আল্লাহ্ তা‘আলা নবীগণ আলাইহিমুস্ সালামকে নবুয়ত ও বেলায়ত উভয় পদমর্যাদার অধিকারী করেছেন। তাদের নবুয়তের জ্ঞান (ইলম) কেই শরিয়ত বলে, যার প্রতি তাঁরা মানুষকে হেদায়তের দাওয়াত দেন। আর বেলায়তের জ্ঞান (ইলম) কে তরিকত বলে বুঝতে হবে- নবীদেরকে আল্লাহ্ যেমন নবুওয়ত ও বেলায়ত একসাথে দিয়েছেন। দুইটা দুই জিনিস নয়। তেমনি উম্মতে মুহাম্মদীর শরিয়ত ও তরিকত ও এক অভিন্ন। এ দু’ জ্ঞানের সমন্বয় যে সকল আলেমের রয়েছে তারাই নবীদের আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী।
ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন-
অর্থাৎ-আল্লাহপাক কখনও কোন জাহেলকে ওলী হিসেবে গ্রহণ করেন নি; বরং আল্লাহ্ যাঁকেই ওলী বানাবার ইচ্ছা করেন, তাকে বেলায়তের (তরিকতের) জ্ঞানদানের পূর্বেই শরিয়তের জ্ঞান দান করেন। এরপর ওলি করেন।
মোদ্দাকথা- শরিয়ত ও তরিকত কখনো দু’ রাস্তা নয় বরং এক রাস্তা। আল্লাহ্ তরিকতপন্থী সকল আলিম ও অনুসারীদের এ মাসয়ালা বুঝে জান্নাতের সঠিক পথে পরিচালিত করুক। আমিন।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •