? মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন: মিলাদ মাহফিলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানে কিয়াম করা শরিয়তসম্মত কিনা? আমাদের এলাকার এক ওহাবী মৌলভী একে না জায়েজ ও শরিয়ত বহির্ভূত কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ ব্যাপারে শরীয়তের ফয়সালা জানিয়ে খুশী করবেন।
্উত্তর: মিলাদ মাহফিলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানার্থে কিয়াম করা অর্থাৎ দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা মুস্তাহাব এবং কিয়ামকারী এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক সওয়াব মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে। কিয়ামকে নাজায়েয বলা নবীবিদ্বেষীর পরিচয় এবং মুসলিম সমাজকে ভাল কাজ থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা। আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ্ আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ‘‘ইকামাতুল কিয়ামাহ্ আলা তা-ইনিল কিয়াম’’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট ফকিহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা ওসমান ইবনে হামাম দিমতী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর লিখিত কিতাব রিসালায়ে ইসবাতে কিয়াম এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন-
القیام عند ذکر ولادۃ سید المرسلین صلّٰی اللہ علیہ وسلم امر لاشک فی استحبابہ واستحابہ وندبہ یحصل لفاعلہ من الثواب الاوفر والخیر الاکبر لانہ تعظیم النبی صلی اللہ علیہ وسلم
অর্থাৎ মিলাদ শরীফ পাঠকালে বা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদত মুবারকের বর্ণনাকালে হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে কেয়াম করা মুস্তাহাব, মুস্তাহসান এবং উত্তম যার কর্তা অনেক সওয়াব ও মহান মর্যাদার অধিকারী হয়, কেননা কেয়াম করা মানে নবীজিকে সম্মান করা।
দেওবন্দী, ওহাবী, তবলীগিদের নির্ভরশীল ব্যক্তি মাওলানা রফী উদ্দীন ‘‘তারিখে হেরেমাইন’’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
قد استحسن القیام عند ذکر ولادتہ الشر یفۃ ذوروایۃ ودرایۃ فطوبٰی لمن کان تعظیمہ غایۃ مرامہٖ
অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদ বা বিলাদত শরীফ বর্ণনার মুহূর্তে কিয়াম করা ঐ সমস্ত আলেম মুস্তাহাছান বা উত্তম আমল বলেছেন যারা হলেন যুগের মুহাদ্দিস ও ফকিহ্। অতএব শুভ সংবাদ ও আনন্দের ব্যাপার হল ঐসব ব্যক্তির জন্য যার মুখ্য উদ্দেশ্য হল নবীজীকে সম্মান করা।
ওহাবী দেওবন্দী মৌলভীদের শ্রদ্ধেয় পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি স্বীয় কিতাব ফায়সালাহ্ এ হাপত মাসাআলায় উল্লেখ করেছেন
میں خود قیام کرتاہو ں اور قیام میں لذت پاتاہوں
অর্থাৎ মিলাদ পাঠের সময় আমি নিজে দাঁড়িয়ে কিয়াম করি এবং কিয়ামকালে আমি তৃপ্তি পায়।
আল্লামা মুহাম্মদ সালেহ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির বরাতে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন –
امۃ النبی صلی اللہ علیہ وسلم من العرب والمصر والشام والروم والاندلس وجیمع بلاد الاسلام مجتمع ومتفق علی استجابہ واستحسانہ
অর্থাৎ আরব, মিসর, সিরিয়া, রোম, আন্দালুস ও সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে নবীজির সমস্ত উম্মত ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে মিলাদ শরীফ পাঠে কিয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহসান। খাতেমুল মুহাদ্দেসীন হযরত সৈয়দ আহমদ দাহলাম মক্কী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি স্বীয় কিতাব ‘‘আদ্্দুররাস্ সানিয়্যাহ্ ফির রদ্দে আলাল ওয়াহাবিয়্যার’’ মধ্যে উল্লেখ করেছেন-
من تعطیمہ الفرح بلیلۃ ولادتہ وقراۃ المولد والقیام عند ذکر ولادتہ واطعام الطعام
অর্থাৎ নবীজির শুভাগমন ও মিলাদ রজনীতে খুশী উদ্যাপন করা, মিলাদ শরীফ পাঠ করা, বেলাদত শরীফের বর্ণনার মুহূর্তে কিয়াম করা তথা দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা এবং মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত জনতাকে খাবার পরিবেশন করা নবীজির প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরও তাজিমের অন্তর্ভুক্ত। তারপরেও মিলাদ শরীফ ও কিয়ামের মত একটি বরকতমণ্ডিত নেক আমলকে নাজায়েজ ও শরিয়ত বহির্ভূত কাজ বলা প্রকৃত মুসলমানদের পক্ষে শোভা পায় না। মুনাফেক যার অন্তরে প্রিয় নবীর প্রতি হিংসার আগুন জ্বলছে তার পক্ষে সম্ভব হতে পারে।
[ইকামাতুল কিয়ামাহ্, কৃত. ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা (রহ.), ফয়সালায়ে হাপ্ত মাসআলা কৃত. হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী (রহ) ও আমার রচিত বাগে খলিল ১ম খণ্ড ইত্যাদি]