ত্বরীক্বত

0

ত্বরীক্বত
ত্বরীক্বতের গুরুত্ব
طريقت (ত্বরিক্বত) শব্দটি طرق (ত্বুরুক) থেকে গৃহীত। এর আধিভানিক অর্থ পথ, রাস্তা, নির্দেশনা। আর পারিভাষিক অর্থ- পথ চলার নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান, আইন-কানূন, নিয়মাবলী, পদ্ধতি-প্রণালী, নির্দেশনা, নির্দেশিকা, দিশা-দিশারী প্রভৃতি। ইলমে মা’রিফাতপন্থীদের একটি পরিভাষা তরীক্বত। মা’রিফতের পরিভাষায় চারটি মূলনীতি সহকারে খোদাপ্রাপ্তির সাধনা করতে হয়। যথা-

১. শরীয়ত, ২. তরীক্বত, ৩. হাক্বীক্বত ও ৪. মা’রিফাত। খোলাফা-ই রাশেদীনের পরবর্তী যুগে সূফীবাদের বিস্তার ঘটলে আউলিয়া-ই কেরাম ও সূফীসাধকগণের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার প্রসারে বিভিন্ন তরীক্বার উদ্ভব ঘটে। হানাফী, শাফে‘ঈ, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবগুলো যেমনি ইলমে শরীয়তকে পরিপূর্ণতা দান করেছে, তরীক্বতগুলোও তেমনি ইলমে মা’রিফাতকে পূর্ণাঙ্গতা দান করেছে।

ক্বোরআন মজীদে ত্বরীক্বতের নির্দেশনা
আল্লাহর নির্দেশিত, প্রিয়নবীর প্রদর্শিত এবং সাহাবা-ই কেরামের অনুসৃত বিধিমালার যথার্থ অনুসরণের নাম তরীক্বত। যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা ক্বোরআন, সুন্নাহর আলোকে সৎপথের নির্দেশ দিয়ে মুক্তিকামী মানুষের পরিত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে পৌঁছার যে নিয়ম-পদ্ধতি ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সেটাই তরীক্বত বা তরীক্বাহ্।

তরীক্বতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তরীক্বত অবলম্বণের অপরিহার্যতা প্রমাণে ক্বোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাই মূলভিত্তি। নি¤েœ এ প্রসঙ্গে কয়েকটি ক্বোরআনিক দলীল পেশ করা হলোঃ
তরীক্বতের মূলনীতি প্রসঙ্গে সূরা ফাতিহায় এরশাদ হয়েছে,
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْم ـ صِرَاطَ الَّذِىْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
তরজমা: (হে আল্লাহ!) আমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করো, তাদেরই পথে, যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ করেছো।

উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর বা বিশদ বর্ণনায় নি¤েœাক্ত আয়াতে চার শ্রেণীর নি’মাত প্রাপ্ত বান্দাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার শিক্ষা দিয়েছেন।

এরশাদ হয়েছে,
وَمَن يُّطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ
عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ
তরজমা: যারা আল্লাহ্ রসূলের আনুগত্য করে তারা ওইসব লোকের সাথে থাকবে, যাদের উপর আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ সত্যনিষ্ঠগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ।

আল্লাহর মনোনীত বুযুর্গনে দ্বীন সালেহীন পুণ্যাত্মাবান্দাদের অনুসরণের কথা ক্বোরআনুল করীমের বহু স্থানে নির্দেশ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ﴿١١٩﴾
তরজমা: হে মু’মিনগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গ অবলম্বন করো।

আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জীবনাদর্শ বিশ্বমানবজাতির জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে এ শ্রেণীর প্রিয় বান্দাদের পদাঙ্ক অনুসরণের কথা পবিত্র ক্বোরআনে বহু স্থানে বিঘোষিত হয়েছে।

এরশাদ হয়েছে-
وَاتَّبِغْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ
তরজমা: যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু’ করেছে, তার পথকে অনুসরণ করো।

উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে,
اَلْوَصُوْلُ لاَ يَحْصِلُ اِلاَّ بِالْوَسِيْلَةِ وَهِىَ عُلَمَآءُ الْحَقِيْقَةِ وَمَشَائِخُ الطَّرِيْقَةِ
অর্থাৎ ওসীলা ব্যতীত আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়না। ওসীলা হচ্ছেন হক্কানী ওলামা-ই কেরাম ও ত্বরীক্বতপন্থী মাশায়েখ বা কামিল পীর মুর্শিদগণ। সত্যিকার তরীক্বতপন্থী দ্বীনের অনুসারী মুত্তাক্বী পরহেযগার বান্দারা হচ্ছেন হিদায়তপ্রাপ্ত। তরীক্বতের আদর্শ শিক্ষাচ্যুত বান্দা গোমরাহ্ বা পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত।

আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন,
مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدُ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِىًّا مُّرْشِدًا
তরজমা: আল্লাহ্ পাক যাকে হিদায়ত করেন, সে হিদায়ত পায় এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন ওলী (কামিল), মুর্শিদ পাবেনা।
ঈমান আক্বীদার হিফাযতের জন্য সকল মুজতাহিদ ইমাম কামিল পীর মুর্শিদের পদাঙ্ক অনুসরণকে অপরিহার্য মনে করেছেন। হুযূর গাউসুল আ’যম শায়খ আবদুল ক্বাদির জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রণীত ‘সিররুল আসরার’ কিতাবে উল্লেখ করেন,
وَلِذَالِكَ طَلَبُ اَهْلِ التَّلْقِيْنِ لِحَيَاةِ الْقُلُوْبِ فَرْضٌ
অর্থাৎ অন্তরাত্মাকে যিন্দা করার জন্য আহলে তালক্বীন তথা কামিল মুর্শিদের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যক।

ইমামুল আইম্মাহ্, কাশফুল গুম্মাহ্ হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম-ই আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন,
لَوْلاَ ثِنْتَانِ لَهَلَكَ نُعْمَانُ
অর্থাৎ আমি (আবূ হানীফা) যদি আমার পীর-মুর্শিদ ইমাম জা’ফর সাদেক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর নিকট বায়আত গ্রহণপূর্বক তাঁর সান্নিধ্যে দু’বছর না থাকতাম, তবে আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম।

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গায্যালী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণীত ‘কীমিয়া-ই সা‘আদাত’ গ্রন্থে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণীত ‘মাকতূবাত শরীফ’-এ সৈয়্যদুল আউলিয়া হযরত ইমাম আহমদ কবীর রেফা‘ঈ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণীত ‘আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ’ গ্রন্থে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণিত ‘নাক্বাউস সুলাক্বাহ্ ফী আহকামিল বায়‘আত ওয়াল খিলাফাহ’ (১৩১৯হি.) গ্রন্থে ইলমে তাসাওফ অর্জন তথা পীর-মুর্শিদের বায়‘আত গ্রহণ করাকে অপরিহার্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত সুফী সাধক আল্লামা জালালুদ্দিন রুমী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ও তাঁর পীর মুর্শিদ হযরত শামসুদ্দীন তাবরীযির ঘটনা প্রণিধানযোগ্য। মাওলানা রুমী বলেন,
مولانا هرگزنشد مولائےروم ـ تاغلام شمس تبريزي نشد
অর্থাৎ আমি মাওলানা রুম মাওলানা রুমী হতে পারতাম না, যদি না আমার পীর শামসে তাবরীযের গোলামী করতাম।

এ কারণে যতবড় জ্ঞানী হোক না কেন, শর‘ঈ জ্ঞানের পাশাপাশি তরীক্বত তথা তাসাওফের জ্ঞান না থাকলে গোমরাহ্ তথা পথভ্রষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

হযরত ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রনীত ‘মু‘আত্তা’য় এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন,
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ وَمَنْ تَصَوَّفَ
وَلَمْ يَتَفَقَّهُ فَقَدْ تَزَنْدَقَ وَمَنْ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَقَدْ تَحَقَّقَ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বহ তথা শর‘ঈ জ্ঞান অর্জন করলো এবং ইলমে তাসাওফ তথা তরীক্বতের জ্ঞান অর্জন করলো না, সে ফাসিক্ব হলো, যে ব্যক্তি ইলমে তাসাওফ অর্জন করল অথচ ইলমে ফিক্বহ অর্জন করলো না সে যিন্দীক্ব হলো। আর যে ব্যক্তি উভয় প্রকার ইল্ম অর্জন করল, সে প্রকৃত সত্যের সন্ধান লাভ করলো।

প্রসিদ্ধ তরীক্বাসমূহ
বিশ্বব্যাপী ইসলামী আদর্শ শিক্ষা ও নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধনে বিভিন্ন তরীক্বার ভূমিকা ও অবদান অপরিসীম। ইসলামী গবেষকদের পরিবেশিত তথ্য অনুসারে এ পর্যন্ত বিশ্বে ৩১৩ টি তরীক্বার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তন্মধ্যে ১১০টি তরীক্বা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্বীনী আখলাক্ব সৃষ্টি ও আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। উপমহাদেশে ১০/১২টি তরীক্বা বিস্তার লাভ করেছে। এর মধ্যে ৪টি তরীক্বা প্রধান। যথা- ক্বাদেরীয়া, চিশতীয়া, নক্বশবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়াহ্। অন্যান্য তরীক্বাগুলোকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ চারটি তরীক্বার শাখা-প্রশাখা বা সমন্বয় বলা হয়। এ চারটি তরীক্বা ৪০০ হিজরীর শেষে এবং ৫০০ হিজরীর প্রারম্ভে মুসলিম বিশ্বের নানাস্থানে বিশেষত পাক-ভারত উপমহাদেশে, মুসলমানদের রুহানী জগতে যে ইনকিলাব তথা বিপ্লব সাধন করেছে, তা ইতিহাসের এক স্বর্ণালী অধ্যায়। এ প্রসিদ্ধ চার তরীক্বার মধ্যে ক্বাদেরীয়াহ্ তরীক্বাহ্ হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন তরীক্বাহ্। হযরত শায়খ সৈয়্যদ আবদুল ক্বাদির জীলানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ তরীক্বার প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসারে এ তরীক্বাহ্“সিলসিলা-এ আলীয়া ক্বাদেরীয়া’ নামে বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তিনি ৪৭০ মতান্তরে ৪৭১ হিজরীর ১লা রমযান (২৯ শা’বান দিবাগত রাত) মোতাবেক ১০৭৮ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহর শতসহ¯্র ওলীর স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যভূমি জীলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বুযুর্গ পিতার নাম সাইয়্যেদ আবূ সালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত। মাতার নাম হযরত সাইয়্যেদাহ্ ফাতেমা বিনতে সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ্ সাওমা‘ঈ যাহেদ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিম আজমাঈন। ইসলামের এ মহান সাধক ওলীকুল স¤্রাট হযরত আবদুল ক্বাদির জীলানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ৫৬১ হিজরি সনে ১১ রবিউস্ সানী সোমবার ৯১ বছর বয়সে পুণ্যভূমি বাগদাদে ইন্তিক্বাল করেন।

চিশতিয়া তরীক্বা
হযরত খাজা মু‘ঈনুদ্দিন চিশতী আজমিরী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি হলেন চিশতিয়া তরীক্বার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৫৩৭ হিজরী মোতাবেক ১১৪২ খ্রিস্টাব্দে সীস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পাক-ভারতে আসেন। ৬৩৩ হিজরি মোতাবেক ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে আজমীরে ইন্তেকাল করেন। চিশতিয়া তরীক্বাহ্ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, চীন আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় দেশে বিস্তার লাভ করে এবং নানা শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে বিশ্বে বহু দেশে প্রচলিত আছে।

খাজা-এ খাজেগান আতা-এ রসূল হযরত খাজা গরীব-নাওয়ায মঈন উদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি চৌহান বংশীয় রাজা পৃথ্বিরাজের সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ভারতবর্ষে কলেমার আওয়াজ বুলন্দ করেন। মূলতঃ হযরত গরীব নাওয়াযের বরকতময় হাতেই ভারতে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কালক্রমে গরীব-নাওয়াযের ভাবাদর্শে উজ্জীবিত সৈনিকদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ উপমহাদেশে ইসলামের বিজয়-নিশান উড্ডীন হয়েছে। সুলতান ইলতুৎমিশের যুগে বিখ্যাত সূফী সাধক খাজা ক্বুত্বুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, সুলতান আলা উদ্দীনের যুগে হযরত খাজা নিযাম উদ্দীন আউলিয়া রাহমাতুল্লাহি, তা‘আলা আলায়হি ফিরোজ শাহ্ তুঘলক্বের শাসনামলে হযরত নাসীর উদ্দিন মাহমূদ চেরাগ দেহলভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি স¤্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে বিশ্ববিখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক হযরত মোজাদ্দিদ আলফেসানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, স¤্রাট আওরঙ্গ যেবের যুগে বিশ্ববিখ্যাত আলিমে দ্বীন মোল্লা জীবন রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রমুখ জাতির ক্রান্তিকালে ইসলামী তাহযীব-তমুদ্দুন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার কাজে যে কোরবানী বা ত্যাগের নযীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

চিশতিয়া তরীক্বার অনুসারীদের মতে, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র শিক্ষা ও আদর্শ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাধ্যমে হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু লাভ করেন। এ তা’লীম রূহানীভাবে হযরত খাজা ওসমান হারওয়ানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি পর্যন্ত চলে আসে। খাজা মুঈন উদ্দীন চিশতী গরীব নাওয়ায তাঁর খলীফা হিসেবে এ তরীক্বার নিয়ম-পদ্ধতি সুবিন্যস্তরূপে বিধিবদ্ধ ও সুনিয়ন্ত্রিত করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর খলীফাগণও তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে অসাধারণ অবদান রাখেন।

নক্বশবন্দিয়া তরীক্বা
নক্বশবন্দিয়া তরীক্বার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হযরত শায়খ খাজা বাহাউদ্দিন ইবনে মাহমূদ বোখারী। তিনি ৭১৮ হিজরী সনে মধ্য এশিয়ার বোখারায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়সেই তিনি সূফীত্বের দীক্ষা লাভ করেন। জনশ্রুতি আছে যে, তিনি যখন কামালিয়াতের উচ্চ মার্গে অবস্থান করেন, তখন তিনি যেদিকে থাকাতেন সেদিকেই শুধু ‘আল্লাহ্’ নামের চিত্ররূপ দেখতে পেতেন। অথবা তিনি যেদিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন, সেদিকেই ‘আল্লাহ’ নামের নক্বশা অঙ্কিত হয়ে যেত। সে কারণেই তিনি ইতিহাসে ‘বাহাউদ্দিন নক্বশবন্দ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি ৭৯১ হিজরিতে ইন্তেক্বাল করেন। এ তরীক্বার গুরুত্বপূর্ণ তা’লীম হলো, ছয় লতীফার উপর সাধনা করা ও প্রতিক্রিয়া ঘটানো। লত্বীফাগুলো হলো, ক্বলব, রুহ, নাফ্স, সির, খফী ও আখফা।

এ তরীক্বার অনুসারীগণ মনে করেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমীরুল মু’মিনীন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে যে গুপ্ত ইল্ম দান করেছিলেন, তা এ তরীক্বার শায়খগণের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে বিদ্যমান রয়েছে।

নক্বশবন্দিয়া তরীক্বার অনুসারী ও সূফীগণ ইসলামী শরীয়তের নির্দেশনাবলীর প্রতি একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও মনযোগ সহকারে অধিকতর মনোনিবেশ করে থাকেন। তরীক্বতের বিভিন্ন ওযীফা, মোরাক্বাবা ও যিকরের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও আত্মার উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট থাকেন। খাজা বাহাউদ্দিন নক্বশন্দ এ তরীক্বার তা’লীমকে সুসংবদ্ধ, সুবিন্যস্ত ও সুনিয়ন্ত্রিত করেন। এ তরীক্বার শীষ্যরা ‘আল্লাহ’ নামের বরকতময় ইসমটির নক্বশা বা চিত্র হৃদয়ে ধারণ করেন বলেই এ তরীক্বার নাম নক্বশবন্দীয়া তরীক্বা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।

মুজাদ্দেদিয়া তরীক্বা
হযরত মুজাদ্দেদ আলফেসানী ওরফে হযরত শায়খ আহমদ ফারুক্বী সেরহিন্দি রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি মুজাদ্দেদীয়া তরীক্বার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৯৭১ হিজরীতে ভারতবর্ষের সেরহিন্দ নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় মহাদেশে যখন খোদাদ্রোহী, নবীদ্রোহী, তাগুতি ও কুফরিশক্তির প্রভাবে সর্বত্র কুফর শির্ক, বিদ্‘আত, অত্যাচার, অবিচার, যুল্ম, নির্যাতন, শোষণ-নিপীড়ন, কুসংস্কার, ইসলামবিরোধী শরীয়তবিরোধী নানাধরনের কর্মকান্ড সর্বত্র ছেয়ে গিয়েছিল, ইসলামের এমনি এক ক্রান্তিকালে গণমানুষকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এবং সর্বত্র ইসলামের সুমহান আদর্শ ও সুশিক্ষার বাণী পৌঁছিয়ে দেয়ার প্রয়াসে তাঁর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। ইসলামে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। তাঁর বেলায়ত ও মাকালাতের খোদাপ্রদত্ত শক্তির প্রভাবে, সর্বপ্রকার কুফর শির্ক ও বিদ্‘আতের বিরুদ্ধে প্রাণপণ সংগ্রাম করে ইসলামের নিস্কলুষ ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

স¤্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তথাকথিত ‘দ্বীন-ই ইলাহী’র মূলমন্ত্র ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আকবর খলীফাতুল্লাহ্’ ইসলামের বিরুদ্ধে এক সুগভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা দেয়। এর কালো মেঘে যখন ভারতবর্ষ আচ্ছাদিত হচ্ছিল, তখনই ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী তখন পূর্ণ বেলায়তী শক্তি দিয়ে আকবরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, ইসলামের নামে বিকৃতি ও ষড়যন্ত্রের সকল বিষদাঁত ভেঙ্গে দেন। ইসলামের মূলমন্ত্র কলেমার সুমহান বাণী ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্’র দাবী ও আবেদন শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্বকে পূর্ণমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত করেন। এ ছাড়াও তিনি উলঙ্গপনা, বেহায়াপনা, নাচ-গান ইত্যাদি কুসংস্কারপূর্ণ অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধেও কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যান। ইসলামের আধ্যাত্মিক জেহাদের এই কঠিন সংগ্রামে তিনি সকল প্রকার বাতিল শক্তিকে পরাভূত করেন। ইসলামী ঝান্ডাকে সমুন্নত করেন। ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ তরীক্বার শায়খগণ আজও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মানবজাতির চরিত্র গঠনে ও আত্মার সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

ভারতীয় উপমহাদেশে ক্বাদেরিয়া তরীক্বার প্রচার-প্রসার
বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার-প্রসারে ক্বাদেরিয়া তরীক্বার সূফীসাধক ও মাশা-ইখের ভূমিকা ও অবদান অগ্রগণ্য। বিশেষতঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ক্বাদেরীয়া তরীক্বার শায়খগণের অক্লান্ত সাধনার বদৌলতে ইসলামের যে সম্প্রসারণ ও বিস্তার ঘটেছে, তা ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়। ঐতিহাসিকদের পরিবেশিত তথ্যমতে, প্রখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত আবদুল করীম ইবনে ইব্রাহীম আলজীলী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ক্বাদেরীয়া তরীক্বার প্রসার ঘটে। ১৩৮৮ খৃস্টাব্দে তিনি ভারত উপমহাদেশে আগমন করেন। উল্লেখ্য যে, এ সময়েরও অনেক পূর্বে বাবা আদম শহীদ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ১১৪২ খৃস্টাব্দে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ১২ জনের আরবীয় বণিক কাফেলাসহ জাহাজযোগে চট্টগ্রাম আগমন করেন। তিনি বাংলাদেশের মহাস্থানগড়ে ক্বাদেরীয়া তরীক্বার প্রচার-প্রসার কল্পে খানক্বাহ্ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা বল্লাল সেনের সাথে তাঁর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে বাবা আদম বিক্রমপুরে শাহাদত বরণ করেন। একইভাবে গাউসুল আ’যম জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর রূহানী নির্দেশক্রমে এ দেশে তিনি ইসলাম প্রচারে অসাধারণ অবদান রেখেছেন, তিনিও ক্বাদেরীয়া তরীক্বার অন্যতম মহান শায়খ। হযরত শাহ্ মাখদূম রোপোশ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রাজশাহীর বৃহত্তম অঞ্চলে ১১৮৪ খৃস্টাব্দে ইসলাম প্রচার করেন। ৬১৫ হিজরীর ২ রজব তিনি বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন।

হুযূর গাউসে পাকের ২৭ পুত্রের একজন হলেন হযরত আযাল্লাহ শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। হযরত আযাল্লাহ্ শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির ২য় পুত্র হলেন হযরত শাহ্ মাখদূম রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। এ হিসেবে তিনি ওলীকুল স¤্রাট গাউসুল আযম দস্তগীরের প্রিয়তম পৌত্র তথা নাতি। এ ছাড়া হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রচিত তাফসীরে নইমীর সূরা আন‘আম-এর তাফসীরের এক পর্যায়ে ভারতবর্ষে ক্বাদেরিয়া তরীক্বার প্রচারক হিসেবে হযরত সৈয়্যদ কবির উদ্দিন দুল্হা দরিয়ায়ী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির নাম উল্লেখ করেন। তিনি আনুমানিক ১০৬১ হিজরি মোতাবেক ১৬৬৭ খৃস্টাব্দের দিকে পাঞ্জাবের গুজরাটে ইন্তেকাল করেন।

এক বর্ণনা মতে হযরত শাহ্ ক্বাসিম রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এতদঞ্চলে সর্বপ্রথম ক্বাদেরীয়া তরীক্বার প্রচারক ছিলেন। তিনি ছিলেন গাউসে বাগদাদের বংশধর। বাংলার মা’লার বা মালোরা নামক স্থানে তিনি ইন্তেক্বাল করেন। হযরত সৈয়্যদ আবদুর রায্যাক্ব রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ছিলেন তার প্রধান খলীফা। ক্বাদেরিয়া ত্বরীক্বার প্রচারে এ মহামনীষীর নামও উল্লেখযোগ্য।

এভাবে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য সূফী সাধক মাশা-ইখের অক্লান্ত ত্যাগ ও ক্বোরবানীর বদৌলতে সিলসিলাহর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ক্বাদেরিয়া তরীক্বা এতদঞ্চলে সর্বত্র দ্রুত প্রচার প্রসার ও বিস্তার লাভ করে।

এ তরীক্বার প্রচার-প্রসারে আরো যাঁদের নাম কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণীয়, তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন- খাজায়ে খাজেগান খলীফায়ে শাহে জীলান গাউসে যমান ক্বুত্বুবে দাওরান, গুপ্ত রহস্যাবলীর অন্তর্দ্রষ্টা, মা’আরিফে লাদুন্নিয়ার প্র¯্রবণ হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ১২৬২ হিজরী মোতাবেক ১৮৪৩ খৃস্টাব্দে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের এবোটাবাদ জেলার হরিপুরের চৌহর শরীফে প্রখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত খাজা ফক্বীর মুহাম্মদ খিদ্বরী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি পবিত্র ঔরশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরই প্রধান খলীফা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ৩৯তম বংশধর হযরত হাফেজ ক্বারী মাওলানা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ছিলেন ক্বাদেরিয়া তরীক্বার একজন সফল প্রচারক। তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রচেষ্টায় ভারত, পাকিস্তান, বার্মা (মায়ানমার)সহ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মাদরাসা, মক্তব, মসজিদ ও খানক্বাহ্ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশের এবোটাবাদ, শেতালু শরীফ সিরিকোট গ্রামের সৈয়্যদাবাদ শরীফের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে হযরত সৈয়্যদখানী যামান শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির সাহেবজাদা হযরত সৈয়্যদ সদর শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র ঔরশে ১২৭১/৭২ হিজরি মোতাবেক ১৮৫২ সালে ক্বত্ববুল আউলিয়া হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি জন্ম গ্রহণ করেন। তারই ঔরশে ১৩৩৬ হিজরী, মোতাবিক ১৯১৬ সনে জন্মগ্রহণ করেন মাতৃগর্ভের ওলী গাউসে যমান আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি।

তিনি ছিলেন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চল্লিশতম অধঃস্তন পুরুষ এবং আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির সাহেবযাদা। ১৯৯৩’র ৭ জুন ১৫ যিলহজ্ব ১৪১৩ হিজরী সোমবার সকাল ৯টায় এ মহান আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ ইন্তেকাল করেন।

১৯৭৭ সালে হুযূর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁর দুই সাহেবযাদা মাখদূমে মিল্লাত রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মু.যি.আ.) ও রওনক্বে আহলে সুন্নাত রাহবরে মিল্লাত সাহেবযাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মু.যি.আ.)কে সিলসিলায়ে আলিয়া ক্বাদেরিয়ার খিলাফত প্রদান করেন।

এ দু’ মহান দিক্পাল বর্তমানে কাদেরিয়া তরীক্বার প্রচার-প্রসার, শরীয়ত-তরীক্বত, মাযহাব-মিল্লাত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতাদর্শ বিস্তারে বিশ্বব্যাপী বহুমুখী খিদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে আউলিয়া কেরাম, সূফী সাধক, ওলামা-মাশায়েখ, হক্কানী, রব্বানী, আলেম-ওলামা ও মাশায়েখ-ই ‘ইযামের বিরামহীন প্রচেষ্টা ও সাধনার বদৌলতে নানা বাধা বিপত্তি প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতা এবং প্রতিপক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁদের ব্যবহারিক জীবনের আদর্শ, অনুপম শিক্ষা, চরিত্রমাধুর্য দিয়ে কলুষিত মানবাত্মাকে হিদায়তের পথে, কল্যাণের পথে, সত্যের পথে, মুক্তির পথে আহ্বান করে যাচ্ছেন। অসংখ্য দিশেহারা বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট মুক্তিকামী মানুষ আজ আউলিয়া-ই কেরাম ও মাশায়েখ-ই এযামের সান্নিধ্যে সিরাতুল মুস্তাক্বীম তথা ইসলামের সঠিক আক্বিদা-বিশ্বাস ও আমল-আখলাক্বের ভিত্তিতে নিজেদের জীবনকে পুণ্যময় ও আলোকিত করার সুযোগ লাভ করে ধন্য হচ্ছেন। মূলতঃ এঁদের কর্মময় জীবন আমাদের মুক্তির পাথেয়। তাঁদের জীবনাদর্শ অনুসরণ আমাদের উভয় জগতের নাজাতের ওসীলা।
আল্লাহ্ পাক তাঁদের পথে চলার তাওফীক্ব দান করুন। আ-মী-ন।

টিকা:
. ফক্বীর আবদুর রশীদ, সূফীতত্ব, ই.ফা.বা. পৃ. ২২১
. আল ক্বোরআন, ১: ৫
. আল ক্বোরআন, ৪:৬৯
. আল ক্বোরআন, ৯:১১৯
. আল ক্বোরআন, ৩১:১৫
. মাওলানা রুমী, মসনবী শরীফ, আল্লামা জালাল উদ্দীন রুমী, নাম- মুহাম্মদ, উপাধি- জালালুদ্দিন, তাঁর পিতার নামও ছিল মুহাম্মদ, উপাধি- বাহাউদ্দিন। খোরাসানের অন্তর্গত বলখ নগরীতে ৬০৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
. মোল্লা আলী ক্বারী মিরক্বাতুল মাফাতীহ্: ১ম খন্ড, পৃ. ২৫৬
. আল্লামা ইবনে কাসীর, আল বিদায়াহ ওয়ান্ নিহায়াহ, দ্বাদশ খন্ড: পৃ. ১৪৯
. সূফী জীবন দর্শন, পৃ. ৫৬
. ড. আবদুল করিম, বাংলাদেশ সূফী সম্প্রদায় ও তাঁদের আধ্যাত্মিক সাধনা, সূফীবাদ ও আমাদের সমাজ, ঢাকা। আগষ্ট ১৯৬৯, পৃ. ৪০
. তাযকিরা, ১৯৯৩ (উর্দু), পেশোয়ার, পাকিস্তান। পৃ.৬
. উধরষু কযধনধৎরহ, ঢ়ধশরংঃধহ, ১৯৯৩, চ.২
. মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভী, সুন্নীয়তের পঞ্চরতœ, রেযা ইসলামিক একাডেমি, সন. ১৯৯৮, পৃ. ২৩৫

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •